আবেগ আর কবে কাঁটাতারের কাছে মাথা নুইয়েছে!
দেশ ভাগ হলেও বাংলাদেশের মানুষ ফুটবলকে ঘিরে বারবার মিশে গিয়েছেন সীমান্তের গ্রামে। একটা সময় বিকেল হলেই ম্যাচ হত এ-পারের দলের সঙ্গে ও-পারের কোনও দলের।
ফুটবলার নয়, হাজার হাজার দর্শকও খেলা দেখতে ভিড় জমাত সীমান্তের মাঠে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে সীমান্তের চেহারা। নজরদারিও বেড়েছে। ডোমকল মহকুমার সীমান্ত এলাকায় কিছু অংশে কাঁটাতারের বেড়াও বসেছে। কিন্তু খেলোয়াড়দের আনাগোনা এখনও চলছে সীমান্তে। গোটা দল না এলেও ও-পার বা এ-পারের (ভারত-বাংলাদেশ) পরিচিত খেলোয়াড়রা সীমান্তের মাঠ দাপিয়ে খেলছেন। তবে এখন আর নিছক আবেগে নয়, রীতিমত পেশাদার তাঁরা। চোরাপথে এ-দেশে এসে ম্যাচ প্রতি কেউ ৬০০, কেউ বা আবার হাজার টাকা দর হাঁকছেন।আব্দার মেটাতে তাদের হয়ে তদ্বির করছে ‘এজেন্ট’রা। তাদের হাতেই তুলে দিতে হচ্ছে আগাম টাকা।
ডোমকলের ফুটবলে জোয়ার এসেছে বছর কয়েক আগে। গ্রামগঞ্জে শীতের মরসুমেও চলছে ফুটবল টুর্নামেন্ট। আর এই খেলাকে ঘিরে গ্রামের আবেগ আবার চরমে। হাজার হাজার টাকা চাঁদা তুলে কখনও নাইজেরিয়ান, কখনও ভিন জেলার খেলোয়াড়, কখনও বা কলকাতার খেলোয়াড়দের এনেও জিততে মরিয়া হয়ে উঠছেন গ্রামের মানুষ। অনেক ক্ষেত্রে আবেগ থেকে তৈরি হচ্ছে উত্তেজনাও। তবে এ-বছর সেই তালিকায় নতুন সংযোজন বাংলাদেশি খেলোয়াড়। |
সীমান্তের কোনও আত্মীয় বা খেলোয়াড় বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে কেউ মাসের পর মাস এ-দেশের মাঠ কাঁপিয়ে ফিরে যাচ্ছেন মোটা টাকা আয় করে। আবার কেউ সময়-সুযোগ পেলে দু-একটা ম্যাচ খেলে দর্শকদের মাতিয়ে ফিরে যাচ্ছেন স্বদেশে।
রানিনগর সীমান্তে পিন্টু মণ্ডলের বাড়িতে মাসখানেক ধরে আছেন হামিদুল ইসলাম বাবু। বাংলাদেশের রাজশাহীর বাসিন্দা বছর চব্বিশের বাবুর কথায়, “ছোট থেকে আমার নেশা বলতে পারেন খেলা। ভারতে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে একবার একটা ম্যাচ খেলেছিলাম। সেই শুরু। তার পর দেখলাম, এখানে খেলে বেশ আয়ও করা যাচ্ছে। এই মরসুমে তাই এখানেই থেকে গিয়েছি।”
কেবল বাবু নন, সীমান্তের গ্রামে এসে খেলে উপার্জন করছেন বাংলাদেশের অনেকেই। ডোমকল মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ধীমান দাস বলেন, “ডোমকলে বর্তমানে ফুটবলের আবেগ চরমে। কেবল ভিন জেলা নয়, ভিন দেশের খেলোয়াড়দের এনে জিততে মরিয়া হয়ে উঠছে গ্রামের মানুষ। আমাদের মহকুমার লাগোয়া বাংলাদেশের বেশ কিছু বড় শহর আছে। সেখানে ফুটবলের চর্চাও হয়। ফলে কম খরচে ভাল খেলোয়াড় মিলছে চোরাপথে।”
জলঙ্গি সীমান্তে প্রায়ই এসে টুর্নামেন্ট খেলছে বাংলাদেশের বুলবুল। তার কথায়, “ভারতীয় ৬০০ টাকা হলে বাংলাদেশে প্রায় ৮৫০ টাকা হয়। তা ছাড়া, খেলোয়াড় হলে কিছুটা ছাড়ও মেলে জওয়ানদের হাতে। অনেক সময় লুঙ্গি পরে এসে, এ-পারে ক্লাব থেকে বুট-প্যান্ট নিয়ে খেলে, আবারও খালিহাতে ফিরে যাওয়া যায়। আমরা চোরা কারবার না করে চোরা পথে খেলি!”
এলাকার বাসিন্দাদের খেলোয়াড় পাচার নিয়ে ক্ষোভ নেই। তাঁদের বক্তব্য, “খেলার মাঠে যদি সব ভেদাভেদ মিটে যায় তো দোষ কী!” বাস্তবিকই তাই। |