পুণের খুব কাছে থেকেও দেবাশিস খোঁজ নিলেন না ওডাফাদের।
অভূতপূর্ব এবং নজিরবিহীন পরিস্থিতি করিম বেঞ্চারিফার বাগানে!
আই লিগে উঠে দাঁড়ানোর শপথ নয়। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মহারণের এক সপ্তাহ আগে মনোবল তুঙ্গে তোলার তাগিদেও নয়। ওডাফা-নবিরা আপাতত রবিবার পুণে এফসি-র বিরুদ্ধে জিততে চাইছেন ক্লাবের ‘পদত্যাগী’ প্রধান ফুটবলকর্তাকে ফেরানোর জন্য!
পনেরো কোটির দল যিনি এ মরসুমে তৈরি করেছেন সেই মোহনবাগান অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত টিমের ব্যর্থতার দায় নিয়ে প্রধান রিক্রুটারের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, এই খবর শোনামাত্র ওডাফা গতকাল রাতেই এসএমএস করেন তাঁকে, “যে খবর শুনলাম ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি সেটা যেন সত্যি না হয়। আমি তোমার কথাতেই বাগানে সই করেছি। কথা দিচ্ছি, সবাইকে নিয়ে উঠে দাঁড়াবই।”
নবি আবার আজ টিম হোটেলে দাঁড়িয়ে বললেন, “আমাদের ব্যর্থতার জন্যই দেবাশিসদাকে সরে যেতে হয়েছে। উনি আমাদের এনেছেন। আমি আর ওডাফা সবাইকে বোঝাচ্ছি, পুণে ম্যাচটা জিতে ওঁকে বলব, ফিরে আসুন।”
পুণে এফসি-র মাঠে বিকেলে অনুশীলনের পর করিম বেঞ্চারিফার আহ্বান “এই বিপর্যয়ের মুহূর্তে সব মোহনবাগানপ্রেমীর একজোট হয়ে আমাদের পিছনে দাঁড়ানো উচিত। দেবাশিস টিমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্তা। ওকেও সঙ্গে চাই।”
গঙ্গাপারের শতবর্ষের ক্লাব বহু উত্থান-পতনের সঙ্গী। ডামাডোল-ঝামেলা ঐতিহ্যের বাগানে নতুন কিছু নয়। কিন্তু এক জন কর্তাকে ফেরানোর জন্য ফুটবলারদের এ রকম তাগিদ সবুজ-মেরুনে কখনও দেখা গিয়েছে কি?
কেন এতটা আর্তি ওডাফাদের? দু’রকম কথা শোনা যাচ্ছে। এক) দীর্ঘদিন ধরে দল গঠনে প্রধান ভূমিকা থাকায় ফুটবলারদের সঙ্গে অর্থসচিবের ব্যক্তিগত স্তরে ভাল সম্পর্ক। দুই) দেবাশিসের অনুপস্থিতিতে ওডাফা-নির্মল ছেত্রী-স্ট্যানলিরা চিন্তিত তাঁদের দেনা-পাওনা নিয়ে। সব চুক্তিই অর্থসচিবের করা। পুণের টিম হোটেলের জিমে, সুইমিং পুলে, খাবার টেবিলে ফুটবলারদের মধ্যে ফিসফাস, এখন তা হলে কে চেক দেবে? সবথেকে বড় কথা, চুক্তির বাইরেও সব ক্লাবেই কর্তাদের কিছু ‘দায়বদ্ধতা’ থাকে ফুটবলারদের জন্য। সেগুলোর কী হবে তা নিয়েও চিন্তিত ফুটবলাররা।
ওডাফাদের চিন্তা বাড়িয়েছে কলকাতায় ক্লাবতাঁবুতে বসে মোহন সচিব অঞ্জন মিত্র ফুটবলারদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায়। “টাকা যখন ফুটবলাররা নিচ্ছে তখন তাদের দায়বদ্ধও থাকতে হবে। নিজেদের তাগিদেই ফিট থাকতে হবে। ফুটবলারদের জেতা-হারার উপর নির্ভর করছে আমাদের কর্তাদের ক্লাবে থাকা-না থাকা। সেটা প্লেয়ারদের মনে রাখা উচিত।” সঙ্গে সচিবের সংযোজন, ‘‘আগে ওরা দশটা ম্যাচ জিতুক, তার পর আমি দেবাশিসকে অনুরোধ করব ফেরার জন্য।” এ দিন সকালে ক্লাব তাঁবুতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট টুটু বসু আর সচিব এই কথাই বলেছেন কলকাতায় চোট পেয়ে বসে থাকা বাগান ফুটবলার খেলেম্বা সিংহ, মণীশ মৈথানিদের।
যাঁকে ঘিরে মোহনবাগানে নতুন ডামাডোল সেই অর্থসচিব দেবাশিস অবশ্য এখন মুম্বইয়ে। ব্যক্তিগত কাজে। এতটাই হতাশ তিনি যে, সামান্য দূরের শহরে থেকেও এক বারও খোঁজ নেননি টিমের। ফোন ধরেননি কোচ-ফুটবলারদের। দেবাশিস যেহেতু ফেডারেশন-বিরোধী ক্লাবের জোটের অন্যতম সংগঠক, সে জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে তাঁকে ‘পদত্যাগ’ প্রত্যাহার করতে ফোনে অনুরোধ করেছেন ইস্টবেঙ্গল সহ-সচিব শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত, পুণে এফসি-র চিরাগ তান্না, সালগাওকর সচিব রাজ গোমস-সহ আই লিগের অন্য ক্লাব কর্তারাও। দেবাশিস অবশ্য নিজের সিদ্ধান্তে এখনও অনড়। বললেন, “কেউ হারার জন্য টিম তৈরি করে না। গত পনেরো বছরে তিনটে আই লিগ, ফেড কাপ-সহ বহু ট্রফি এনেছে টিম। আমি সেই টিম তৈরির সময় মুখ্য ভূমিকায় ছিলাম। সেগুলো কেউ মনে রাখছে না। ফেসবুকে যে সব কথা লেখা হচ্ছে তা খুবই কুরুচিকর। আমার ব্যবসার কথাও টেনে আনা হচ্ছে মাঠে।”
ডামাডোলের বাগানে সবথেকে সমস্যায় সদ্য দায়িত্ব নেওয়া কোচ করিম বেঞ্চারিফা। তাঁর হাতে দল পড়ার পর দুটো ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট পেয়েছেন ওডাফারা। রিহ্যাব স্পেশ্যালিস্ট জোনাথনকে দিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত নবি-ইচে-জুয়েল-নির্মলদের সুস্থ করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ায় টোলগে ওজবে বং তাঁর ডাক্তারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন জোনাথন। করিমের নির্দেশেই।
জেমস মোগা-অভ্র মণ্ডলদের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে অবশ্য দল সাজাতে হিমশিম মরক্কান কোচ। এ দিন অনুশীলনে অবশ্য বল নিয়ে দৌড়েছেন ইচে, জুয়েল রাজা। দু’জনেরই রবিবারের দলে ফেরার সম্ভাবনা আছে। তবে নবি চেষ্টা করেও ফিট হতে ব্যর্থ। করিম ডার্বির আগে তাঁকে নামিয়ে ঝুঁকি চাইছেন না। ঘণ্টা দেড়েক টানা অনুশীলন করে ফিরে করিম বললেন, “এ রকম সেশন অন্তত আরও চারটে দরকার। যে কোনও কোচের কাছে এই অবস্থায় টিমকে টেনে তোলা খুব কঠিন। তবুও যে করেই হোক জিততে হবে।”
পুণে ম্যাচের জন্য করিম যে টিম গড়ছেন তাতে তিনটে পরিবর্তন হবে। রাকেশ মাসি, ফেনাই এবং ইচে। জেতার জন্য ৪-৪-২ ফর্মেশনেই দল নামাতে চাইছেন তিনি। ফরোয়ার্ডে ওডাফার সঙ্গী স্ট্যানলি। মাঝমাঠে ডিফেন্সিভ ব্লকার হিসেবে ফিরছেন মাসি। লেফট ব্যাকে ফেনাই। ইচে খেললে মেহরাজ রিজার্ভে চলে যাবেন। তীব্র চাপে থাকা করিম বললেন, “যা আছে তাই দিয়েই জেতার চেষ্টা করতে হবে। তা ছাড়া আর উপায়ই বা কী?”
|