তাঁকে নিয়ে মেঘ কেটে গিয়েছিল। বোর্ডের পিচ কমিটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিনিধি আশিস ভৌমিক নন, ইডেনের পিচ নিয়ে মহাবিতর্কের পরেও তিনিই শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সেই বাইশ গজের সর্বেসর্বা।
কিন্তু তিনিপ্রবীর মুখোপাধ্যায় তবু সরে দাঁড়ালেন ইডেন পিচের দায়িত্ব থেকে। সরে দাঁড়ালেন, রাগে, অভিমানে। ইডেন কিউরেটরের কথা ধরলে, আজ শনিবার থেকে ইডেনে আর দেখা যাবে না তাঁকে। ধোনির ভারতের টেস্ট শুরুর চার দিন আগে মাত্র।
রাতে বন্ধ মোবাইলে যখন তাঁকে ধরার ব্যর্থ চেষ্টা চলছে, তখন বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ধরা গেল প্রবীরকে। সরে যাচ্ছেন কি না জিজ্ঞেস করাতে রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটল ফোনের ও-পারে। “আমি থাকব কেন? আমাকে যে এত অপমান করল বোর্ড থেকে, সহকারী পাঠাল, সিএবি দেখেছে আমাকে?” ফুঁসতে ফুঁসতে বলছিলেন ইডেন কিউরেটর। সঙ্গে সংযোজন, “আজ ডাক্তার এসেছিল বাড়িতে। এসে বলল, আমার ব্লাডপ্রেসার মারাত্মক বেড়ে গিয়েছে। আজ আমার স্ত্রী বেঁচে নেই। মেয়ে বেঁচে নেই। আমার কিছু হলে কে দেখবে? সিএবি দেখবে? তাই আমিও ওদের দেখব না। শনিবার থেকে আমি আর সিএবি যাচ্ছি না।” |
তা হলে আপনি পদত্যাগ করছেন? “না। পদত্যাগ নয় এটা। বলতে পারেন বিশ্রামে যাচ্ছি। এখন কিছু দিন আমি সিএবিতে যাব না। শনিবার সিএবি-তে গিয়ে আমি নিজের মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দিয়ে আসব। আর কোনও অনুরোধ-উপরোধ শুনব না,” একনাগাড়ে বলছিলেন প্রবীর। ক্ষোভের এখানেই শেষ নয়। “আপনি জানেন, পিচ তৈরির জন্য সিএবি থেকে আমি কত টাকা পাই? একটা মালি যা পায়, তার চেয়ে বেশি পাই না। প্রবীর মুখোপাধ্যায় কোনও দিন টাকার জন্য পিচ কিউরেটরের কাজ করেনি। করেছে সম্মানের জন্য। সিএবি-র উচিত ছিল এই ডামাডোলে আমার পাশে দাঁড়ানো। আমার হয়ে কথা বলা। কোথায়, সেটা তো কেউ বলল না? উল্টে বোর্ডের যাচ্ছেতাই অপমান আমাকে রোজ পোহাতে হচ্ছে। এত বছর কিউরেটরের কাজ করার পরেও আমাকে কি না, সহকারী নিয়ে কাজ করতে হবে?”
প্রবীরের কঠিনতম সিদ্ধান্তের খবর জানাজানি হওয়ার পর তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করতে শুরু করেন কিছু সিএবি কর্তা। গভীর রাতে এক উচ্চপদস্থ কর্তা বললেন, “কী যে হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না। টেস্টেরই না বারোটা বাজে।” ঠিক হয়েছে, শনিবার সিএবিতে প্রবীর এলে তাঁকে বোঝানো হবে। কিন্তু কাজ কতটা হবে সন্দেহ। প্রবীরকে জিজ্ঞেস করা হল, ইংল্যান্ড টেস্ট থেকে না হয় অব্যাহতি নিচ্ছেন। পাকিস্তান সিরিজের সময় থাকবেন? ছোট্ট উত্তর আসে, “দেখি। কিছু ঠিক করিনি এখনও।”
সাত বছর আগে এই ইডেনেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে টিমের বাইরে রেখে খেলতে নেমে প্রবল ব্যারাকিংয়ের মুখে পড়তে হয়েছিল রাহুল দ্রাবিড়ের ভারতকে। যা নিয়ে পরে মুম্বইয়ে ফিরে রাহুলকে বলতে হয়, “মনে হচ্ছে যেন ভারতে ফিরলাম।” প্রবীর-কাণ্ডের পর ইডেন থেকে নাগপুরে পৌঁছে ধোনিকেও না সে রকম কিছু বলতে হয়! |