|
|
|
|
বর্বরতা প্রতিরোধ আইন |
রাজ্যের কাছে ধর্ষিতার ক্ষতিপূরণ চাইল প্রশাসন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত এক ধর্ষিতার জন্য ‘বর্বরতা প্রতিরোধ আইনে’ রাজ্যের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।
আইনটা ১৯৮৯ সালের। গত দু’দশকে তফসিলি জাতি-উপজাতিভুক্ত লোকেদের উপরে অত্যাচার-লাঞ্ছনার ঘটনাও কম ঘটেনি। কিন্তু সচেতনতার অভাবে এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে জেলায় এই আইনে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ঘটনা এই প্রথম। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রজত সাইনি বলেন, “আইন অনুযায়ী যারা ক্ষতিপূরণ পাবেন, তাঁদের জন্য রাজ্যের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। আপাতত, এক জনের জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। অত্যাচারিতের তালিকায় থাকা অন্যদের জন্যও ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে।”
চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর খড়্গপুর শহরের মথুরাকাটি এলাকায় টিউশন থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক ছাত্রীকে ৬-৭ জন মিলে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। তদন্তে নেমে খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ ৮ জনের নাম জানতে পারে। তাদের মধ্যে ৬ জনকে গ্রেফতার করতে পারলেও দু’জন এখনও পলাতক। ওই তফসিলি ছাত্রী যাতে ক্ষতিপূরণ পায়, সে জন্য সম্প্রতি রাজ্যের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। আইন মোতাবেক ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা ওই ধর্ষিতার। মেডিক্যাল রিপোর্ট পাওয়ার পরই ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা যাবে। বাকি ৫০ শতাংশ পাওয়া যাবে আদালতে মামলা নিষ্পত্তির পরে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯টি বর্বরতার ঘটনার নথি আছে জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের কাছে। তার মধ্যে মারামারি, জমি থেকে উচ্ছেদ, গ্রামছাড়া করার হুমকি প্রভৃতি রয়েছে। কিন্তু এতদিন কোনও ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়নি। কেন? জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, এই আইনে ক্ষতিপূরণ চাইলেই স্বীকার করে নিতে হয় যে তফসিলিদের উপর নির্যাতন চলছে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে হইচই হতে পারে। এই সমালোচনা এড়াতেই আদালতের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করত প্রশাসন।
লোধা শবর কল্যাণ সমিতির জেলা সম্পাদক বলাই নায়েক বলেন, “কত মানুষ অত্যাচারের শিকার, কত জনের বাড়ি পোড়ানো হয়েছেতার ঠিক নেই। কেউই ক্ষতিপূরণ পাননি। বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও সুফল মেলেনি। আদালতে মামলা চালাতেও তো খরচ হয়। লোধারা এমনিতেই গরিব। মামলা চালাতে না পেরে মাঝপথে হাল ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাও কম ঘটেনি।” মাঝি মাডওয়া জুয়ান গাওঁতার জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রবীর মুর্মুর কথায়, “যে কোনও গ্রামে গিয়ে আমাদের মতো গরিব আদিবাসীদের জিজ্ঞাসা করুন যে আইনটা কীকেউ বলতে পারবে না। এই অবস্থা হলে ক্ষতিপূরণের দাবি-ই বা জানাবে কী করে ওরা। এখন যদি প্রশাসনের চেতনা ফেরে ভাল। আশা করব, নির্যাতিতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি এই আইন সম্বন্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচার অভিযান চালাবে প্রশাসন।”
প্রশাসন জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই এই আইনের খুঁটিনাটি নিয়ে বিভিন্ন অফিসে ব্যানার দেওয়া হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্যও পদক্ষেপ করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|