রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র আট দিন আগে গিয়েছিলেন বালির নিহত তৃণমূল নেতা তপন দত্তের বাড়িতে। তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরে তপনবাবুর স্ত্রী প্রতিমা দত্ত আজ, শনিবার যাচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেসের অফিসে। স্বামী-হত্যার সুবিচার এবং পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে প্রদেশ নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানাবেন তিনি।
স্বামী-হত্যার তদন্তে গড়িমসি নিয়ে প্রতিমাদেবী আঙুল তুলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। শুক্রবার বালির পশ্চিম শান্তিনগরের বাড়িতে বসে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী চান না, তাঁর দেড় বছরের সংসারে কোনও কালি লাগুক। তাই এই খুনে দলের এক নেতা জড়িত জেনেও তাঁকে আড়াল করছেন। সেই কারণেই সিআইডি প্রকৃত তদন্ত করছে না।” প্রতিমাদেবী তাই সিবিআই তদন্ত চান।
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিমাদেবীর তোপের প্রসঙ্গে তৃণমূলের হাওড়া জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “তপনবাবুর ভাই খুন হওয়ার পরে তাঁরও প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। সিপিএমের আমলে তপনবাবুর নিরাপত্তা চেয়ে সংসদে সরব হয়েছিলেন মমতা। এখন ওঁর বিরুদ্ধে এ-সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
প্রতিমাদেবীর অভিযোগ, জয়পুর বিল এলাকায় জলা ভরাটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য তপনবাবুকে নির্দেশ দেন অরূপবাবুই। কিন্তু পরে দেখা যায়, ওই জলায় যে-সংস্থা প্রকল্প গড়ছে, অরূপবাবু তাদের আইনজীবীর কাজ করছেন। এই নিয়ে তপনবাবুর সঙ্গে অরূপবাবুর বাদানুবাদ হয়। অরূপবাবু অবশ্য বলেন, “আমার আইনজীবী হওয়ার সঙ্গে খুনের কী সম্পর্ক, বুঝতে পারছি না। তপনকে জলাভূমি নিয়ে কোনও আন্দোলন করতে বলিনি। বরং ওঁর নিরাপত্তার বিষয়ে জেলা পুলিশকে বারবার জানিয়েছি। খুনের সিআইডি তদন্তের ব্যবস্থা করেছি।” তাঁর দাবি, সিপিএম এবং কিছু স্বার্থান্বেষী লোক প্রতিমাদেবীকে দিয়ে এ-সব করাচ্ছে।
শুধু জলা-কাণ্ডের জেরে তপনবাবু খুন হয়েছেন, মনে করেন না প্রতিমাদেবীও। তাঁর অভিযোগ, “এটা একটা কারণ হতে পারে। মূল বিষয়, দলের অনৈতিক কাজ এবং তাতে কিছু নেতার মদতের প্রতিবাদ করছিলেন উনি। ফলে দলের একাংশের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন। তাই খুন হতে হল।” প্রতিমাদেবী জানান, সব জানিয়ে তপনবাবু তিন বছর ধরে মমতাকে চিঠি ও ই-মেল করেছিলেন। মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও চিঠি লিখতেন। ২০১১-র ৬ মে তপনবাবু খুন হন। তার আগের রাতেও তিনি ই-মেলে মমতাকে দু’পাতার চিঠি লেখেন বলেন প্রতিমাদেবী জানান। নিহত নেতার স্ত্রী বলেন, “দলীয় নেত্রী সাড়া দেননি। যে-দিন তিনি মমতাকে ই-মেল করেন, তার পরের দিনই খুন হন।” এ-সব জানাতেই প্রতিমাদেবী আজ কংগ্রেস দফতরে যাচ্ছেন। প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “তপনবাবুর স্ত্রী শনিবার আমাদের অফিসে আসতে চেয়ে যোগাযোগ করেছিলেন।” |