কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় হাওড়ার বাগনানের বরুন্দায় একটি কাগজকলে বৃহস্পতিবার রাত থেকে উত্তেজনা ছড়ায়। মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে ওই দিন রাত থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকেরা।
পুলিশ ও কারখানা সূত্রের খবর, মৃত শ্রমিকের নাম শৈলেন্দ্র সিংহ (২৩)। তাঁর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ কাজ করার সময়ে আচমকা একটি যন্ত্রে হাত ঢুকে গেলে তিনি গুরুতর আহত হন। উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান। শুক্রবার তাঁর দেহের ময়না-তদন্ত হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। |
কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্থায় স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২০০ জন। এ ছাড়াও চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করেন প্রায় ৮০০ শ্রমিক। শৈলেন্দ্র স্থায়ী শ্রমিক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। মাস চারেক আগে কারখানায় যোগ দেন তিনি। শৈলেন্দ্রর মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রথমে স্থায়ী শ্রমিকেরা রাতের শিফটে কাজ বন্ধ করে দেন। পরে তাঁদের সঙ্গে সামিল হন অস্থায়ী শ্রমিকেরাও।
স্থায়ী শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মৃত শ্রমিকের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। শ্রমিকদের মধ্যে দেব কুমার, নবীন কুমারেরা বলেন, “ক্ষতিপূরণের দাবি না মানলে কর্মবিরতি তোলা হবে না।” শুধু তাই নয়, ওই শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানায় কোনও অ্যাম্বুল্যান্স থাকে না। অথচ এখানে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। অ্যাম্বুল্যান্স না-থাকায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত শ্রমিককে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
মৃত শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অস্থায়ী শ্রমিকেরাও। তবে কারখানাটি যে এলাকায় অবস্থিত সেই ওড়ফুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা তৃণমূল সমর্থিত কারখানার অস্থায়ী শ্রমিক সংগঠনের নেতা শ্রীকান্ত সরকার বলেন, “যিনি মারা গিয়েছেন তাঁর বয়স কম। তাঁর পরিবার অথৈ জলে পড়ল। ভবিষ্যতে পরিবারের ভরণ-পোষণে যাতে কোনও অসুবিধা না-হয় সে কথা চিন্তা করে মানবিকতার ভিত্তিতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছি আমরা। দাবি মানা না-হলে অস্থায়ী শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।” কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে শুভজিৎ দান বলেন, “ফ্যাক্টরি আইনানুযায়ী সব রকম ক্ষতিপূরণ ওই মৃত শ্রমিকের পরিবার পাবেন। শ্রমিক পরিবারটি যাতে বঞ্চিত না-হন তা সংস্থার তরফে অবশ্যই দেখা হবে।” একইসঙ্গে আহত শৈলেন্দ্রবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন শুভজিৎবাবু। তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার পরই আমাদের সংস্থার নিজস্ব গাড়িতে ওই শ্রমিককে হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু এটা দুর্ভাগ্যজনক যে ওঁকে বাঁচানো যায়নি।” |