শেষ পর্যন্ত কার্যত স্তব্ধই হয়ে গেল হাওড়ার দিকে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ।
প্রকল্প পথ কোন দিক দিয়ে যাবে, পুরনো নকশা মেনে হবে না রাজ্য সরকারের ইচ্ছা মতো বি বা দী বাগ এলাকার লালদিঘির পাশ দিয়ে যাবে— এই নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল গত মার্চ মাস থেকেই। সম্প্রতি এর সঙ্গে যোগ হয় ঠিকাদার সংস্থাগুলিকে রেলের বকেয়া টাকা না দেওয়ার ঘটনা। ঠিকাদার সংস্থাগুলির দাবি, রেল বকেয়া টাকা না দেওয়ায় গত তিন মাস ধরে হাওড়ার দিকে কাজের গতি ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলতে হয়েছিল। এখন কাজ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ নেই তাদের।
হাওড়া ময়দান থেকে কলকাতার দিকে সেন্ট্রাল স্টেশন পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের যৌথ বরাত পেয়েছিল ‘এফকনস্ ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’ ও ‘ট্রান্সটোনেলস্ট্রয় লিমিটেড’ নামে দু’টি সংস্থা। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি রুশ সংস্থা। প্রথমে হাওড়ার দিকে কাজের গতি কম থাকলেও পরে দ্রুত এগোচ্ছিল। এর মধ্যেই নকশা বদলানোর ইচ্ছে প্রকাশ করে রাজ্য সরকার। সে মতো মেট্রো-পথ কলকাতার দিকে ব্রেবোর্ন রোড থেকে পাল্টে বি বা দী বাগ এলাকার লালদিঘি দিয়ে করার কথা হয়। এতে বেঁকে বসে জাপানি লগ্নি সংস্থা ‘জাইকা’। পুজোর আগে আচমকা কলকাতা মেট্রো রেল নিগম (কেএমআরসি) টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তাই নির্মাণ কাজও ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঠিকাদার সংস্থাগুলি।
কেএমআরসি-র এক অফিসার বলেন, “রেল টাকা না দেওয়ায় আমরাও ঠিকাদার সংস্থাগুলিকে টাকা দিতে পারছি না। এ নিয়ে দিল্লিতে আগামী মঙ্গলবার বৈঠক আছে। তাতে সমস্যা মিটে যাবে বলে মনে হয়।”
শুক্রবার হাওড়া ময়দান চত্বর ও দ্বিতীয় সেতুর নীচে জগৎ ব্যানার্জি ঘাট রোডের পাশে মেট্রো রেলের ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা যায়, কোথাও কাজ হচ্ছে না। নিরাপত্তারক্ষী আর কয়েক জন কর্মী কাজ ছাড়াই বসে আছেন। তাঁরা জানালেন, ময়দান চত্বর থেকে ইতিমধ্যে সরিয়ে ফেলা হয়েছে অধিকাংশ মেশিন, গাড়ি ও ক্রেন। ওয়ার্কশপে পড়ে রয়েছে কোটি কোটি টাকার মেশিন এবং স্টিল। সেখানকার এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “মাস তিনেক আগেও এই জায়গা সর্বক্ষণ কর্মব্যস্ত থাকত। এখন অনেক কর্মীকে চাকরি থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে বেতন ও মেশিনের ভাড়া দেওয়ার খরচ হচ্ছে প্রায় ৪ কোটি টাকা করে। আরও কয়েক মাস এ ভাবে চললে আমরাও বেতন পাব কি না, সন্দেহ।”
হাওড়া ময়দানের মতো শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মেট্রো রেলের কাজ চলার জন্য স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হচ্ছিলই। বেশ কয়েকটি রাস্তা, বিশেষ করে জিটি রোড বন্ধ থাকায় যানজট ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। গত পাঁচ বছর ধরে খানাখন্দের মধ্যে দিয়ে বর্ষায় যাতায়াত করতে হয়েছে এলাকাবাসীদের। কিন্তু আচমকা মেট্রোর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা যে আরও দুর্ভোগে পড়লেন, তা বলাই বাহুল্য। |