মমতা চাইছেন, তাই প্রথা ভেঙে দিন বৃদ্ধি বইমেলার
লকাতা বইমেলা কি এ বার তার ‘আন্তর্জাতিক’ তকমা হারাবে? বইমেলার উদ্যোক্তা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের একটি সিদ্ধান্ত ঘিরে সেই প্রশ্নই সামনে এসেছে। কারণ, কলকাতা বইমেলার ৩৭ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম মেলার মেয়াদ চার দিন বাড়ছে। উদ্যোক্তারা জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছাতেই এই মেয়াদ বৃদ্ধি।
১৯৮২ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (আইপিএ)-এর সদস্য হয় গিল্ড। ওই বছরই কলকাতা বইমেলা আইপিএ-র ক্যালেন্ডারের সঙ্গে যুক্ত হয়। আইপিএ ক্যালেন্ডার মেনে জানুয়ারি মাসের শেষ মঙ্গলবার বইমেলার উদ্বোধন হয়, বুধবার মেলা শুরু হয়। চলে ১২ দিন। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলা যেমন অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ মঙ্গলবার উদ্বোধন হয়, চলে বুধ থেকে রবিবার পর্যন্ত। এগুলি হল আন্তর্জাতিক বইমেলার ক্যালেন্ডার।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অভিপ্রায়ে’ কলকাতা বইমেলা এ বার ১৬ দিনের। মুখ্যমন্ত্রী চান, তাই সব নিয়ম ও ঐতিহ্য ভেঙে গিল্ড বইমেলার মেয়াদ চার দিন বাড়িয়ে দিয়েছে। বইমেলা হওয়ার কথা ছিল আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মুখ্যমন্ত্রীর কথা রাখতে এ বার তা শুরু হবে ২৬ জানুয়ারি থেকে। আর এতেই উঠছে প্রশ্ন।
গিল্ডের প্রাক্তন সভাপতি দেবজ্যোতি দত্ত বলেন, “বাইরের প্রকাশকেরা আইপিএ-র ক্যালেন্ডার মেনে বইমেলায় যোগ দেন। কলকাতার বইমেলায় তাঁদের আকৃষ্ট করতে এবং মেলাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে ওই ব্যবস্থা হয়। এখন দেখছি, কোনও নিয়মই মানা হচ্ছে না।”
গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে অবশ্য বইমেলার দিন বাড়ানো নিয়ে স্পষ্ট কোনও জবাব নেই। আইপিএ ক্যালেন্ডার অমান্য করা এবং তার জন্য মেলার আন্তর্জাতিক মর্যাদা হারানোর বিষয়টাও তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন। ত্রিদিববাবু এক বার বলছেন, ‘বইমেলার দিন বাড়ল।’ আর এক বার বলছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কলকাতার বইমেলা ৩০ তারিখ থেকে ১২ দিন চালু থাকছে। তবে ২৬ তারিখে উদ্বোধনের পর থেকে বইমেলা খোলাই থাকবে। যে কেউ মেলায় আসতে পারেন।”
মুখ্যমন্ত্রী গত সপ্তাহে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানেই ঘোষণা করেন, বইমেলা শুরু হবে ২৬ জানুয়ারি। অথচ মাসখানেক আগে গিল্ড সাংবাদিক সম্মেলন করে জানায়, বইমেলার উদ্বোধন হবে ২৯ জানুয়ারি, মেলা শুরু হবে ৩০ জানুয়ারি থেকে। অথচ সেই ত্রিদিববাবুই শুক্রবার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর অভিপ্রায়কে সম্মান জানিয়ে আমরা ৩৭তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার উদ্বোধনের দিন ধার্য করেছি ২৬ জানুয়ারি বিকেল ৫টায়। মেলা চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।” তাঁর ব্যাখ্যা, মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছেন বলেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকাশকদের কথা ভেবে মেলা চার দিন বাড়িয়ে দেওয়া হল। সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্য মনে করেন, গিল্ডের এই সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। তাঁর কথায়, “কলকাতা বইমেলার আন্তর্জাতিক মর্যাদা নিয়ে আমাদের বিশেষ গর্ব রয়েছে। মেলা বাড়িয়ে ১৬ দিন করার জন্য সেই মর্যাদা ঘোচাতে হলে তা আমাদের জন্য আনন্দের হবে না।”
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ধারা মেনে বইমেলায় সরকারি আনুকূল্য ঢেলে দেওয়ার ঐতিহ্য বহাল রয়েছে। মিলনমেলার ভাড়া সিকি ভাগ নেওয়াই নয়, গত বছরের মতো এ বারও বইমেলায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর জলের পাউচ বিলোবে নিখরচায়। বইমেলা চার দিন বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিকাঠামো নির্মাণ-বাবদ গিল্ডের যে বাড়তি খরচ হবে, সেই দিকটাও সরকার বিবেচনা করবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন।
বাংলাদেশ এ বার কলকাতা বইমেলার ‘থিম কান্ট্রি’। বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনার আবিদা ইসলাম জানান, এ বার কলকাতা বইমেলা উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আনিসুজ্জামান।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.