রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে শুক্রবার দলীয় সভায় ভিড়ের বহর দেখে চমকিত হলেন বিজেপি নেতৃত্ব। আর ভিড় চমকিত হল সভামঞ্চে শিলাদিত্য চৌধুরীকে দেখে। যে শিলাদিত্য বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান মার্কণ্ডেয় কাটজু যাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ, বেকার সমস্যা এবং রাজ্য সরকারের ‘সার্বিক ব্যর্থতা’র প্রতিবাদে বিজেপি-র এ দিনের সভায় মুখ্য বক্তা হিসাবে থাকার কথা ছিল লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজের। কিন্তু তিনি আসেননি। বিজেপি নেতৃত্ব জানান, লোকসভার অধিবেশনে ব্যস্ত থাকায় সুষমা আসতে পারেননি। সে জন্য ‘ক্ষমা চেয়ে’ চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠি সভায় পড়ে দেওয়া হয়।
তবে এ দিন সুষমার অনুপস্থিতির ‘আফশোস’ বিজেপি নেতৃত্ব ভুলেছেন কর্মী-সমর্থকদের বহুল উপস্থিতি দেখে। এ দিনের ভিড় তাঁদের প্রত্যাশা ছাপিয়ে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই সভায় পাঁচ হাজার লোক হয়েছিল। তবে দলের রাজ্য সভাপতি রাহুলবাবুর দাবি, “লক্ষাধিক লোক হয়েছিল।” এ দিনের ভিড়ে উজ্জীবিত হয়ে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সভা করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এ রাজ্যের সংগঠনের পর্যবেক্ষক তথা সাংসদ চন্দন মিত্র বলেন, “এই সমাবেশ অভূতপূর্ব। এ ভাবে এগোলে পরের বার ব্রিগেডে দেখা হবে।” ভিড় দেখে উৎসাহিত বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায় আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, “বিজেপি এক দিন এ রাজ্য শাসন করবে। সরকারে এলে আমাদের মূল লক্ষ্য হবে বেকারদের কর্মসংস্থান।” রাজ্যে সরকার গড়ার আশায় নিজেদের জমি-নীতি, শিল্প-নীতি, শ্রম-নীতিও ব্যাখ্যা করেন তথাগতবাবু। |
ওই সভায় বর্ধমান, হুগলি এবং মুর্শিদাবাদ থেকে অন্য বারের তুলনায় বেশি মানুষ আসবেন বলে বিজেপি আশাবাদী ছিল। রাহুলবাবু জানান, সেই আশা পূরণ হয়েছে। পুরুলিয়া এবং দুই মেদিনীপুর থেকেও প্রচুর মানুষ এসেছেন। শুধু দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি থেকে কর্মীদের আসতে বলা হয়েছিল। তাতেই বিপুল ভিড় হওয়ায় উচ্ছ্বসিত বিজেপি নেতৃত্ব। উত্তরবঙ্গ থেকে কি কেউ আসেননি? রাহুলবাবুর জবাব, “৭০০-৮০০ লোক এসেছেন নিজেদের তাগিদে।” রাজ্য রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিজেপি-র ভোটের হার এবং সদস্য বেড়েছে। জঙ্গিপুরের উপনির্বাচনে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার হয়েছে ১০.১%। এরই ধারাবাহিকতায় এ দিনের সভায় এত ভিড় হয়েছে বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব। বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তপন সিকদারের মতে, “সিপিএম এবং তৃণমূলকে দেখে মানুষ হতাশ। একমাত্র বিজেপি-ই অপরীক্ষিত। ফলে এ বার এই দলেই ভরসা করছেন মানুষ।”
শিলাদিত্য এ দিন বিজেপি-র সভায় এলেও কথা বলেননি। প্রতিবাদী সভায় প্রতিবাদের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছেন মাত্র। রাহুলবাবু বলেন, “শিলাদিত্য আমাদের দলের প্রতি আকৃষ্ট। তবে এখনও সদস্য হননি।” শিলাদিত্য ছাড়াও আর একটি চমক ছিল বিজেপি-র ওই সভায়। শ্রোতাদের মধ্যে বসেছিলেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়ের স্বামী মৃগাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তিনিও মুখ খোলেননি। রাহুলবাবু বলেন, “উনিও আমাদের সদস্য নন। তবে বিজেপি-র প্রতি আকৃষ্ট।”
কিন্তু বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক শমীক ভট্টাচার্য জানান, মৃগাঙ্কবাবু তাঁর বন্ধু। তাঁর আমন্ত্রণেই মৃগাঙ্কবাবু ওই সভায় এসেছিলেন। |