নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
বাজি ফাটিয়ে, হই-হুল্লোড়ের সঙ্গে রাতভর বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হচ্ছিল পার্কে। পার্কের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থা কোনও অনুষ্ঠানের জন্য এ ভাবে সেটি ভাড়া দিতে পারে কি না, তা খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, চুক্তির ফাইলের খোঁজ নেই এডিডিএ-তে। ফলে, সাধারণের জন্য পার্ক বন্ধ রেখে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে ভাড়া দিয়ে ওই বেসরকারি সংস্থা বেআইনি কাজ করেছে কি না, সে নিয়েই রয়ে গিয়েছে ধোঁয়াশা। এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “খোঁজ নিচ্ছি। বেআইনি ভাবে কিছু করা হলে প্রয়োজনে সংস্থাটির অনুমোদন বাতিল করে দেওয়া হবে।”
এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় তিন দশক আগে গড়া এই পার্কটি এডিডিএ-র থেকে লিজ নিয়েছে ওই বেসরকারি সংস্থাটি। দায়িত্ব পাওয়ার পরে এই সংস্থার তরফে পার্কে দু’টি ব্যাঙ্কোয়েট হল গড়া হয়। পার্ক খোলা থাকে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য। ব্যাঙ্কোয়েট হল ভাড়া দেওয়া হয় নানা অনুষ্ঠানের জন্য। কিন্তু বৃহস্পতিবার পুরো পার্কটিই তাঁরা ভাড়া দেন একটি বিবাহবার্ষিকী অনুষ্ঠানের জন্য। গভীর রাত পর্যন্ত পার্কের মধ্যে খাওয়া-দাওয়া চলে। বাজি ফাটানো, হুল্লোড় চলতে থাকে। শুক্রবার পার্ক ভাড়া দেওয়া হয় বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য। আগামী ৭ ডিসেম্বরও আর একটি অনুষ্ঠানের জন্য পার্ক ভাড়া দেওয়ার বায়না নিয়ে রাখা হয়েছে। |
সাধারণ দর্শকদের বঞ্চিত করে পার্ক ভাড়া দেওয়া যায় কি না, সে নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক। স্থানীয় বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই পার্ক কখনও বিয়েবাড়ি বা জলসার জন্য ভাড়া দেওয়া যায় না। পার্ক কর্তৃপক্ষ ঠিক কাজ করছেন না।” এডিডিএ-র সিইও অন্তরা আচার্যও বলেন, “যত দূর জানি, সাধারণের জন্য গড়া বিনোদন পার্ক এ ভাবে ভাড়া দেওয়া যায় না। খোঁজ নিচ্ছি।” কিন্তু খোঁজ নিতে হলে প্রয়োজন পার্কের ব্যাপারে এডিডিএ-র সঙ্গে ওই সংস্থার চুক্তিপত্র। এডিডিএ সূত্রে জানা যায়, পূর্বতন বাম বোর্ডের আমলে এই চুক্তি হয়েছিল। আর সেই চুক্তির ফাইলেরই খোঁজ মিলছে না। এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “এডিডিএ-র ভিতরে একটি অসাধু চক্র কাজ করছে। ফাইল লোপাটের পিছনে বিশেষ কারও ভূমিকা আছে কি না, খতিয়ে দেখা হবে।”
এডিডিএ-র পূর্বতন বোর্ডের সদস্য তথা প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী আবার ফাইল হারানোর ব্যাপারে বর্তমান বোর্ডকেই দোষারোপ করেছেন। তাঁর দাবি, “নতুন বোর্ড ক্ষমতায় এসেছে প্রায় দেড় বছর। এত দিনেও এডিডিএ-র কী সম্পত্তি ও তার দেখভাল কী ভাবে হবে, তা বুঝে উঠতে পারল না। আগের বোর্ডের কোনও সিদ্ধান্ত বা চুক্তি তাদের পছন্দ না হতেই পারে। কিন্তু নিজেদের অকর্মণ্যতা ঢাকতে ফাইল লোপাটের দিকে নজর ফেরানোর চেষ্টা হাস্যকর।”
সংশ্লিষ্ট সংস্থার পার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিরেক্টর রাজ শেখরের দাবি, পার্ক ভাড়া নেওয়ার দু’রকম পদ্ধতি চালু আছে। কেউ শুধু সারা দিনের জন্য ভাড়া নিতে পারেন, আবার কেউ শুধু সন্ধ্যার জন্য ভাড়া নিতে পারেন। পার্কে গভীর রাত পর্যন্ত নাচ-গান, বাজি ফাটানো উচিত কি না, সে প্রশ্নে রাজ শেখরের বক্তব্য, “যাঁরা ভাড়া নেন, তাঁদের কিছু নিয়ম তো মেনে চলাই উচিত।” |