ভুয়ো কার্ডের হদিস পেতে তদন্ত কমিটি
রাই-ডুয়ার্সের চা বাগানের শ্রমিকদের নামে থাকা ভুয়ো রেশন কার্ডে বরাদ্দ চাল, আটা কোথায় যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেন খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। রাজ্যের খাদ্য কমিশনারের নেতৃত্বে ওই কমিটি তৈরি হবে। বৃহস্পতিবার খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী বলেন, “ভুয়ো কার্ডের চাল-গম কোথায় যাচ্ছে সেই ব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। পুরো কমিটি গঠন হলেই পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়ে যাবে।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ডুয়ার্সের বন্ধ চা বাগানের রেশন প্রাপকের তালিকায় প্রায় ৭০ হাজার ভুয়ো শ্রমিকদের নাম রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠায় তদন্ত শুরু হয়। তরাইয়ের চা বাগানগুলিতেও খোঁজখবর শুরু হয়েছে। তরাইয়ের ৪১ টি চা বাগানে প্রায় ১ লক্ষ ভুয়ো কার্ড রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েত তথা স্থানীয় প্রশাসনের তৈরি করে দেওয়া তরাই এবং ডুয়ার্সে চা শ্রমিকদের প্রাপক তালিকায় গত ৪-৫ বছর ধরে রেশন বরাদ্দ হচ্ছে। ওই তালিকায় ভুয়ো নাম থাকার অভিযোগ সত্যি হলে প্রশ্ন ওঠে, বরাদ্দ রেশনের চাল, গম কোথায় যাচ্ছে? খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “ভুয়ো কার্ডের হিসেবে বরাদ্দ ধরে বছরের পর বছর চাল-আটার হিসেব করলে তা পাহাড় প্রমাণ আকার নেবে। এই বরাদ্দ এত দিন কোথায় গিয়েছে এ বার খোঁজ করা হচ্ছে। কমিটি দেখবে বরাদ্দ ডিস্ট্রিবিউটার নাকি সরকারি কর্মী কার ঘরে ঢুকেছে?”
পাশাপাশি, তরাইয়ের চা বাগানগুলিতে এমআর ডিলারদের বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়াও ফের খতিয়ে দেখা হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। মন্ত্রীর সন্দেহ, যাঁরা দীর্ঘদিন অস্বচ্ছতার সুবিধে নিয়েছেন তাঁদের স্বার্থে ঘা লেগেছে। তবে দার্জিলিং জেলা খাদ্য নিয়ামক বৈদ্যনাথ সরকার এদিন বলেন, “ডিলার নিয়োগ নিয়ে যে আইনি জটিলতা ছিল তা মিটেছে। আদালতের নির্দেশেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে বিবেচনার জন্য রাজ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকেই অনুমোদন দিলে ডিলার নিয়োগ হবে।”
যদিও রাজ্য খাদ্য দফতরের সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি তরফেও আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “তরাইয়ের চা বাগানগুলিতে দ্রুত এম আর ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে চাইছে খাদ্য দফতরও। তবে সেটি স্বচ্ছতার সঙ্গেই করার চেষ্টা চলছে। আদালতে এখনও মামলা চলছে। সেই মামলার রায় হলে দফতরের পক্ষে সুবিধা হবে।”
এ দিকে, ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ার আশঙ্কায় নিয়ে তরাইয়ের চা বাগান এলাকার অনেকেই উদ্বিগ্ন। বিশেষত, যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদের হয়ে সরব হয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই। খাপরাইলের বাসিন্দা তথা বিজেপির দার্জিলিং জেলার অন্যতম সম্পাদক দিলা শৈব্যের অভিযোগ, “৪১ জন ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। বেকার ছেলেমেয়েরা ওই ডিলারশিপ পাওয়ার কথা। অথচ ডিস্ট্রিবিউটরদের একটি গোষ্ঠী সে কাজে বাধা দিতে সক্রিয় হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকী, তা নিয়ে মামলা হয়েছে।” বিজেপি নেতার দাবি, “৪১ জন ডিলার নিয়োগে অনিয়ম হয়নি। বরং স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সক্রিয় হলেও ওই মামলার রায় নতুন ডিলারদের পক্ষেই রয়েছে। তা না-মানায় উচ্চ আদালতে অবমাননার মামলা রুজু হয়েছে।”
তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে পাথরঘাটা অঞ্চল সভাপতি মনোরঞ্জন রায়ও খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রীর বক্তব্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। মনোরঞ্জনবাবু বলেন, “খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী যে তথ্য পেয়েছেন তা ঠিক নয়। এখানকার ছেলমেয়েদের মধ্যে ৪১ জন ওই ডিলারশিপ পেয়েছে স্বচ্ছভাবে। তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পুরানো ডিলারদের দিয়েই চা বাগানের রেশন সরবরাহ চালানোর চেষ্টা করছে একটি গোষ্ঠী। আমরা খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রীকে তা জানাব।”
কংগ্রেসের তরফে মাটিগাড়া ব্লক কংগ্রেসের সহ সভাপতি অতীন বর্মন জানান, তাঁরাও ওই ডিলারশিপ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি রয়েছে বলে মনে করেন না। অতীনবাবুর বক্তব্য, “ডিলার নিয়োগ বাতিলের প্রক্রিয়া বাতিলের চেষ্টা করছে একটি চক্র। তা হতে পারে না। কারণ, তাতে যাঁরা ডিলারশিপ পেয়ে দোকান, গুদাম ভাড়া নিয়েছেন তাঁরা সমস্যায় পড়বেন। আশা করব, খাদ্য সরবরাহ দফতর বিষয়টি দেখে একটি গোষ্ঠীর চক্রান্ত ব্যর্থ করে ডিলারশিপ দেওয়ার কাজ ত্বরান্বিত করবে।” মন্ত্রী জানান, তাঁর কাছে ডিলারশিপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কার কী ভূমিকা সে ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে। সব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্ত্রী জানান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.