পথ দেখাচ্ছে অগ্রদ্বীপ
রাজ্য সড়ক গড়তে জমি দিয়ে নজির গ্রামবাসীর
যে রাজ্যে জমির অভাবে শিল্প থেকে উন্নয়ন সব আটকে যাচ্ছে, সেখানেই রাজ্য সড়ক গড়তে পঞ্চায়েতকে জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেন গ্রামবাসী। তা-ও বাজারদরের চেয়ে অনেক কমে। রবিবার থেকে জমির চূড়ান্ত মাপজোক শুরু হবে।
সহজে হয়নি এই সিদ্ধান্ত। বরং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে শুধু জমি অধিগ্রহণ নয়, সরাসরি জমি কেনার ক্ষেত্রে সরকারি মধ্যস্থতারও বিরোধী, বর্ধমানে তৃণমূল পরিচালিত অগ্রদ্বীপ গ্রাম পঞ্চায়েত চাষিদের বুঝিয়ে এই অসাধ্যসাধন করেছে। জমির পরিমাণ মাত্র ১০ বিঘা, মালিকের সংখ্যা মোটে ১৮। কিন্তু এক দিন টাটাদের ফিরিয়ে দিয়ে সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক চাষিরা যখন হা-হুতাশ করছেন, জমির অভাবে কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র-সহ বহু প্রকল্পের ভাগ্য অনিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার বহু রাস্তাই করা যায়নি, এই সাফল্য ছোট হলেও সামান্য নয়।
২০০৬ সালে ভাগীরথীর গ্রাসে তলিয়ে গিয়েছিল অগ্রদ্বীপ থেকে বেথুয়াডহরি যাওয়ার রাজ্য সড়কের একাংশ। ২০১০ পর্যন্ত বারবার ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে যায় তিন দিকে নদী দিয়ে ঘেরা অগ্রদ্বীপ গ্রাম। কাটোয়া ২ ব্লকের অন্তর্গত হলেও গ্রামের হাজার দশেক বাসিন্দা নানা প্রয়োজনে নদিয়ার বেথুয়াডহরি এবং দেবগ্রামের উপরেই বেশি নির্ভরশীল। ভাঙনের আগে কৃষ্ণনগর-অগ্রদ্বীপ রুটে দিনে পাঁচটি বাস চলাচল করত। এখন এলাকার বাসিন্দাদের প্রায় কিলোমিটার দুয়েক হেঁটে গিয়ে রুদ্রডাঙা মোড় থেকে বাস ধরতে হয়। সে কারণে বছর দুই আগে ভাঙনের প্রকোপ কমতেই দু’কিলোমিটার রাস্তার দাবি ওঠে।
ভাগীরথীর তীর বরাবর এখানেই তৈরি হবে অগ্রদ্বীপ থেকে
বেথুয়াডহরি যাওয়ার রাস্তা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
পূর্ত দফতরের কৃষ্ণনগর অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছরের গোড়ায় তাদের কর্মীরা অগ্রদ্বীপে রাস্তার মাপজোক করতে গেলে চাষিরা বাধা দেন। এর পরে আর বিষয়টি এগোয়নি। অথচ এলাকার মানুষ পঞ্চায়েতের কাছে বারবার রাস্তা তৈরির দাবি জানাচ্ছিলেন। পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, যে ১০ বিঘা জমি প্রয়োজন, তার মালিকদের কথা বলতে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু দু’এক জন বাদে কেউ জমি দিতে রাজি হননি। গত ৩০ এপ্রিল বৈঠকে জমিমালিকেরা আবার বলেন, পঞ্চায়েত জমি কিনলে তাঁরা যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ পাবেন না। বরং বর্ধমান বা নদিয়া জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ করতে চাইলে তাঁরা রাজি আছেন। পঞ্চায়েত তাঁদের বোঝায়, রাজ্য জমি অধিগ্রহণ না করার নীতি নিয়েছে। এর পরেও জমি আঁকড়ে বসে থাকলে তাঁরা এলাকার মানুষের তো বটেই, নিজেদেরও ক্ষতি করবেন।
শেষমেশ গত ২৭ নভেম্বর পঞ্চায়েত প্রধান নিতাই মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে ১৫ জন জমিমালিক জানিয়ে দেন, বিঘে প্রতি এক লক্ষ টাকা দরে জমি দিতে তাঁরা রাজি আছেন। অন্যত্র থাকার কারণে যে তিন জন আসতে পারেননি, তাঁরাও সম্মতি জানিয়েছেন। নিতাইবাবু বলেন, “আমরা নিজস্ব তহবিল ও রাজ্যের তৃতীয় অর্থ কমিশনের টাকায় ওই জমি কিনছি। রবিবার থেকে জমি মাপা হবে। একশো দিন কাজের প্রকল্পে রাস্তা গড়ব। তার পরে পিচরাস্তা করার জন্য রাজ্যের কাছে আবেদন জানানো হবে।” স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “এত দিনে একটা কাজের কাজ হচ্ছে।”
কাটোয়া ২ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অরবিন্দ চক্রবর্তীর মতে, “ভাগীরথীর পাড়ে ওই এলাকায় বিঘে প্রতি জমির দাম দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা তো বটেই।” তার প্রায় অর্ধেক দামে তৃণমূলের পঞ্চায়েতকে যাঁরা জমি দিচ্ছেন, তাঁদের অন্যতম অগ্রদ্বীপের প্রাক্তন সিপিএম উপপ্রধান মহাদেব ঘোষ। তাঁর কথায়, “গ্রামের স্বার্থেই চাষিরা ক্ষতি স্বীকার করেও জমি দিতে রাজি হয়েছেন।” আর এক জমিমালিক কুমার ঘোষের কথায়, “অনেকেই জমি দেবেন না বলেছিলেন। কিন্তু পঞ্চায়েত থেকে বুঝিয়ে বলল, কেন জমি দেওয়া জরুরি।” সন্ন্যাসী ঘোষের কথায়, “বৃহত্তর স্বার্থেই বিঘে প্রতি এক লক্ষ টাকায় জমি দিতে রাজি হয়েছি।” স্থানীয় সুবোধ চৌধুরী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধীরচন্দ্র বিশ্বাসের মতে, “ঠিক করে বোঝালে যে কাজ হয়, সেটাই প্রমাণ হল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.