‘বেঙ্গল-বিল্ডস’
মিলল না দিশা, মমতার কথায় হতাশ শিল্পমহল
প্রত্যাশা ছিল নগরোন্নয়ন তথা নির্মাণ শিল্পকে নতুন দিশা দেখাবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বৃহস্পতিবার ‘বেঙ্গল বিল্ডস’-এর উদ্বোধনী মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমাধানের পথ দেখানোর বদলে সরকারের আর্থিক সমস্যার কথাই তুলে ধরলেন।
লগ্নি টানতে রাজ্যকে ‘শো-কেস’ করার সরকারি উদ্যোগ ‘বেঙ্গল লিডস’-এর প্রায় ১০ মাস পরে এই ‘বেঙ্গল বিল্ডস’। নির্মাণ শিল্পকে ঘিরে এ ধরনের অনুষ্ঠান এর আগে কখনও এ রাজ্যে হয়নি। যেখানে রাজ্য সরকারই প্রধান আয়োজক। নিজেদের মঞ্চ থেকে জমি নীতি, শিল্প নীতি-সহ বিভিন্ন শিল্প সংক্রান্ত বিতর্কের উত্তর দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী, এমনটাই ভেবেছিল শিল্পমহল। যে কারণে অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে বসিয়েই নির্মাণ শিল্পমহল জানিয়ে দেয়, জমি আইনের সংস্কার ও প্রশাসনিক তৎপরতা ছাড়া সাধারণ মানুষের জন্য সুলভে বাসস্থান তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা কঠিন। অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে নির্মাণ সংস্থাদের সংগঠন ‘ক্রেডাই’-এর প্রেসিডেন্ট ললিত জৈন বলেন, “প্রশাসনিক বাধা, জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন ও করের চড়া হার সুলভে বাসস্থান তৈরি করার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
এ ধরনের অভিযোগ ক্রেডাই আগেও করেছে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী এই সব সমস্যা সমাধানের পথ বাতলাবেন, এমনই ভেবেছিলেন উদ্যোক্তারা। বিশেষত এ দিনের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তাঁর আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। কিন্তু শিল্পমহলের সামনে মুখ্যমন্ত্রী জমি বা শিল্প পরিবেশ নিয়ে সরকারের নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনার কথা জানাননি। উল্টে আর্থিক সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি শিল্পপতিদের সাহায্য করতে চাই। কিন্তু আমার হাত পা বাঁধা।” জমি নিয়ে জট কাটাতে এ দিন আরও একটি ‘টাস্ক ফোর্স’ তৈরির কথা ঘোষণা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “পরিকাঠামো সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি ছিল। এ বার টাস্ক ফোর্সও হবে। জমি পেতে অসুবিধা হলে এই কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।”
অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
জমি নিয়ে স্পষ্ট নীতির বদলে আরও একটি কমিটির ঘোষণায় হতাশ নির্মাণ শিল্প মহল। এক শিল্প কর্তার প্রশ্ন, “শিল্প নিয়ে আরও হাই প্রোফাইল কোর কমিটি রয়েছে। তাতে শিল্পের সমস্যা কতটা মিটেছে?” নীতি নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলে কোনও কমিটিরই বিশেষ কিছু করার থাকে না বলেই দাবি তাঁর।
ক্রেডাই-এর অনুষ্ঠানে জমি নিয়ে টাস্ক-ফোর্স গঠনের কথা বললেও পরে মহাকরণে কিন্তু জমি নিয়ে নিজের পুরনো অবস্থানে ফেরেন মমতা। তিনি বলেন, “জোর করে জমি নিয়ে আমি কিছু করব না। কোনও শিল্পপতি চাইলে শান্তিপূর্ণ ভাবে জমি কিনে নিন।”
তবে ক্রেডাই-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট সি শেখর রেড্ডি সাফ জানিয়ে দেন, জমি নীতির যথাযথ সংস্কার ছাড়া নির্মাণ শিল্পের পক্ষে লগ্নি টানা কঠিন। তিনি বলেন, “জমির ঊর্ধ্বসীমায় ছাড় না পেলে সুলভে আবাসন তৈরি করা যায় না। কারণ চাহিদা ও জোগানের হিসেব মেনে জমির দাম চড়া হয়ে যায়। ফলে কম দামে বাড়ি দেওয়া সম্ভব হয় না।” তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের উদাহরণ দিয়ে জানান, সেখানে এই আইন তুলে দেওয়ার পরে প্রকল্পের সংখ্যা ২০ গুণ বেড়েছে।
এ মাসের গোড়ায় ফিকির জাতীয় স্তরের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তো দূর, উপস্থিত হননি রাজ্যের কোনও মন্ত্রীই। ফিকির নৈশভোজেও যাননি শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফলে শিল্প টানতে সরকারের আগ্রহ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। নানা মহলের সমালোচনার মুখে এবং শিল্পমহলের ক্ষতে প্রলেপ দিতে মুখ্যমন্ত্রী ফিকি-কর্তাদের প্রতিশ্রুতি দেন, তাদের সাধারণ বার্ষিক সভায় যোগ দিতে পারেন তিনি। আগামী মাসে দিল্লিতে এই সভা হওয়ার কথা। রাজ্যের বাইরে শিল্পমহলের মুখোমুখি হওয়ার আগে ‘বেঙ্গল বিল্ডস’-এর মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী শিল্প নিয়ে সরকারের মত স্পষ্ট করবেন বলে ভেবেছিলেন শিল্পকর্তারা। এই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নিজের আগ্রহের কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীরই নির্দেশে নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ নিয়ে কথা বলেন ক্রেডাই কর্তাদের সঙ্গে।
নির্মাণ-শিল্প মহল সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ‘বেঙ্গল বিল্ডস’-এর অনুষ্ঠান বেশি বড় করার ভাবনা ছিল না ক্রেডাই-কর্তাদের। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর আগ্রহের কথা জানতে পেরে তাঁরা অনুষ্ঠানটিকে বড় করে আয়োজনের পরিকল্পনা করেন। এ দিন অবশ্য ক্রেডাই-এর দুই কর্তা ছাড়া জাতীয় স্তরের কোনও শিল্পপতিকে দেখা যায়নি। শাপুরজি পালোনজি ও হীরানন্দানির কর্তাদের আসার কথা থাকলেও তাঁরা আসেননি।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সিন্ডিকেট-প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “স্থানীয় মানুষ কাজ পেতে পারেন, ব্যবসাও করতে পারেন। কিন্তু সেটা কারও অধিকার হতে পারে না।” মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রশংসা করলেও আশ্বস্ত হতে পারেনি নির্মাণ সংস্থার কর্তারা। কারণ এর আগেও সতর্কবার্তা দেন মমতা। তাও ‘সিন্ডিকেট’-এর দাপট কমেনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.