যাবেন তেহট্টেও
লোবার ঘটনা অন্যায়, সুর বদল করলেন মমতা
মির ন্যায্য দামের দাবিতে সরকারি হস্তক্ষেপে আলোচনা শুরু না-হলে কলকাতা অবরুদ্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল লোবার কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। তার দু’দিনের মাথায় আসরে নামতে হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এবং আগে যা বলেছিলেন, তার থেকে কার্যত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন। গত ৬ নভেম্বর দুরবাজপুরের লোবা গ্রামে পুলিশি অভিযানের ঘটনা অন্যায় হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার মেনে নিলেন মমতা।
তিন সপ্তাহ আগে মহাকরণে মমতা বলেছিলেন, “দুবরাজপুরে পুলিশ গুলি চালায়নি। পুলিশ সংযত ছিল। গ্রামবাসীদেরও দোষ নেই। তবে তাঁদের প্ররোচনা দিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করানো হয়েছিল।”
২৩ দিন পরে সে প্রসঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, “ওই দিন ওই ঘটনা অন্যায় হয়েছে! আরও সহিষ্ণুতা দেখানো দরকার ছিল।” লোবা যাওয়ার আশ্বাসও শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। পাশাপাশি নদিয়ার তেহট্টে যাওয়ার ঘোষণাও করেছেন। এই দু’জায়গাতেই পুলিশের গুলি চালানো নিয়ে সম্প্রতি তোলপাড় হয়েছে রাজ্য রাজনীতি।
দু’টি জায়গাতেই তিনি নিজে গিয়ে একটি বার্তা দিতে চান বলে জানিয়েছেন। বলেছেন, তেহট্টে পুলিশের গুলিতে নিহতের পরিবারের কাছে গিয়ে তিনি নিজেই ক্ষতিপূরণের টাকা দেবেন। লোবার আহতদের চিকিৎসার জন্য টাকা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
লোবায় এমটা’র মাটি কাটার যন্ত্র উদ্ধারের জন্য পুলিশি অভিযান এবং গুলি চালানোর বিতর্কে অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূলের সরকার। তড়িঘড়ি বীরভূমের পুলিশ সুপারকে সরিয়ে মুখরক্ষা করার চেষ্টা হলেও ‘লোবা-কাঁটা’ এখনও বিঁধে রয়েছে সরকারের গলায়। তেহট্ট নিয়েও রাজ্য প্রশাসন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেই হাল ধরতে হল।
লোবার পাশাপাশি তেহট্টের ঘটনার নিন্দা করে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠনের কথা এ দিন মহাকরণে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমি কোনও প্রভাব খাটাতে চাই না। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানোর কথা বললেও তদন্তেই সব পরিষ্কার হবে। এসডিও, এসডিপিও এবং ওসিকে ছুটিতে পাঠিয়েছি।” লোবা ঘটনাটিতেও রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)-কে দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে, দু’টি ঘটনাই মহাকরণকে অন্ধকারে রেখে ঘটেছিল, এই দাবিতে এখনও অনড় মমতা। দুবরাজপুরে গুলি চালানো হয়েছে, এ কথা উচ্চারণ না-করলেও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গত ডিসেম্বরে মগরাহাটে হুকিং কাটতে গিয়ে পুলিশের গুলি চালানোর তুলনা টানেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মন্তব্য, “আমি সাধারণ ভাবে গুলি চালানো বা শক্তি প্রয়োগের বিরুদ্ধে। কিছু ব্যতিক্রম আছে। যেমন কেউ আগুন লাগাল বা দাঙ্গা বাধাল।” দুরবাজপুরের ঘটনাটির পিছনে ষড়যন্ত্রেরও ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, দুবরাজপুরে পুলিশ গেল। টিভি চ্যানেলগুলোও সঙ্গে-সঙ্গে কী ভাবে জেনে গেল, তা সন্দেহজনক। মমতার কথায়, “পুরো ঘটনা প্ল্যান্টেড!”
মমতার দাবি, “এই দু’টি ঘটনায় আমার মনে হয়েছে, যে-ই করুক যে ভাবে করুক, পরিকল্পনা করে করা হয়েছে।” বাম-জমানার দিকে ইঙ্গিত করে তাঁর বক্তব্য, “৩৪ বছর ধরে রাজ্যে একটা সরকার ছিল। তাদের নিযুক্ত লোক ছিল। সেই রাজনৈতিক ছায়া তো একটা আছেই! তাদের একটা অংশ থেকে গিয়েছে।” মমতার ইঙ্গিত, এই ‘পরিকল্পনা’র পিছনে তাঁরা থাকতে পারেন। তাঁর বক্তব্য, “কর্মীদেরও আমি দোষ দিই না। সবারই ধারণা হয়েছিল, ওই সরকার আর যাবে না। কাজেই তারা যা বলত, সেটাই জো হুজুর বলে মেনে চলা হত।”
তেহট্টে পুলিশের গুলিতে নিহত অশোক সেনের ভাই অজিতবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কী বলেছেন, জানি না। দাদার মৃত্যুতে পরিবার প্রায় ভেঙে পড়েছে। সরকার দু-লক্ষ টাকা এবং পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। উনি তেহট্টে এলে সে কথা মনে করিয়ে দেব।” আর পুলিশের গুলিতে জখম সুধাময় ঘোষের স্ত্রী রীতাদেবীর কথায়, “এখনও পর্যন্ত সাহায্য বলতে মুকুল রায়ের দেওয়া পাঁচ হাজার টাকা। স্বামী একেবারেই অক্ষম হয়ে পড়েছেন। সরকার আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে পরিবারটাকে অন্তত না খেয়ে মরতে হয় না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.