|
|
|
|
কাটজুর ব্লগে সাধারণ মানুষের সমর্থনের ঢল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা চিঠি প্রকাশ পেতেই মন্তব্যের পাহাড় জমতে শুরু করল বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজু-র ব্লগে। যার অধিকাংশই তৃণমূল সরকার তথা মমতার সমালোচনা করে। এক সময় বাম সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার বিচারপতি কাটজু মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠানোর পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কাটজুর কথা কি আদতে নাগরিক সমাজেরই কণ্ঠস্বর? এক সময় ‘পরিবর্তনের’ হয়ে সওয়াল করা বিশিষ্ট জনেরা কার্যত সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
বাম আমলে নন্দীগ্রাম-পর্বের পর সরকারের সমালোচনায় রাস্তায় নেমেছিলেন শহরের বিশিষ্টরা। সেই মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন সাধারণ মানুষও। শুধু তাই নয়, ভোটের প্রচারে মমতাকে লক্ষ্য করে প্রাক্তন সিপিএম নেতা অনিল বসুর অশালীন মন্তব্যের পরেও একই ভাবে নিন্দার ঝড় উঠেছিল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। বাম সরকারকে হটিয়ে মমতাকে ক্ষমতায় বসানোর পিছনে নাগরিক সমাজের সেই কণ্ঠস্বরের প্রভাব ছিল অনেকটাই।
কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা পদক্ষেপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে নাগরিক সমাজ। আর সেই সমালোচনার প্রত্যুত্তর দিতে গিয়ে সরকার যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, বিচারপতি কাটজুর চিঠিতে ছত্রে ছত্রে তার উল্লেখ রয়েছে। অম্বিকেশ মহাপাত্রের গ্রেফতার থেকে শুরু করে সিএনএন-আইবিএন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে কলেজ-ছাত্রী তানিয়া ভরদ্বাজ এবং বিনপুরে শিলাদিত্য চৌধুরীকে ‘মাওবাদী’ বলে অভিহিত করার ঘটনার কথা লিখেছেন কাটজু।
বাম আমলে নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালনাকে হাড়-হিম করা ঘটনা বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। সেই প্রতিক্রিয়া শহরের বিশিষ্টদের সমালোচনা-প্রতিবাদকে নতুন দিকে নিয়ে গিয়েছিল। এ দিন বিচারপতি কাটজুর চিঠির প্রেক্ষিতে নাট্যপরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় বলছেন, “উনি আপত্তিজনক কিছু বলেননি। নাগরিক হিসেবে চিঠি লেখার অধিকার আছেই।” তিনি মনে করেন, নাগরিক সমাজের ভূমিকা সব জায়গাতেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সরকারের উচিত ওই চিঠি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা।
এক সময় ‘পরিবর্তনের’ পক্ষে জোরালো সওয়ালকারী, বর্তমানে মমতার ঘনিষ্ঠ নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষের গলাতেও একই সুর। তিনি বলছেন, “বিচারপতি কাটজুর এক্তিয়ার রয়েছে কি না, তা জানা নেই। তবে ব্যক্তি হিসেবে ভাবনা উনি প্রকাশ করতেই পারেন।” এই চিঠিতে সরকার যে ভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তার থেকে ভিন্নমত পোষণ করেন অর্পিতা। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে মত প্রকাশের অধিকার থাকাই বাঞ্ছনীয়। এটা না থাকলেই সমাজের স্বাভাবিকতা ব্যাহত হয়। অন্যদের এতে রেগে যাওয়ার কারণ নেই। ”
এ দিন বিচারপতি কাটজুর ব্লগে তাঁর চিঠি প্রকাশ হওয়ার পর সেই ঘটনাগুলিরই উল্লেখ করেছেন সাধারণ পাঠকেরাও। এক পাঠক ওই ব্লগে কাটজুর সমর্থনে ভবানীপুর কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জন ঘিরে বচসা এবং তার জেরে থানায় ভাঙচুরের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী থানায় গিয়ে ধৃত দুষ্কৃতীকে ছাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে ওই পাঠক বলেছেন, “এমনটা কোনও রাজ্যে হয় নাকি!”
কেউ কেউ আবার বিচারপতি কাটজুর মন্তব্যকে সমাজের কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি বলে মন্তব্য করেছেন। এক পাঠকের বক্তব্য, “কাটজু যা লিখেছেন, তা অনেকেই এত দিন ধরে বলে এসেছেন।” কাটজুর চিঠির ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মমতা নিজে অবশ্য এ দিন বলেছেন, ‘রাজা চলে বাজার, কুত্তা ভোকে হাজার।’ মমতার এই প্রতিক্রিয়ার কথা কাটজুকে জানানো হলে তিনি বলেন, বাজে কথার উত্তর দিতে তাঁর রুচিতে বাধে। বিচারপতি কাটজুর ব্লগে কিন্তু এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। বেশির ভাগেরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষা প্রয়োগ নিয়ে আপত্তি রয়েছে। |
|
|
|
|
|