এক পাশে পাহাড়, অন্য দিকে কংসাবতীর মুকুটমণিপুর জলাধার। শাল পিয়ালের জঙ্গলের মাঝে ছোট্ট টিলা। বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত সেই টিলা ধামসা মাদলের তালে মুখরিত হয়ে থাকল।
খাতড়া থানার রূপাহিড় গ্রামের কাছে, খাতড়া-মুকুটমণিপুর রাস্তার এক পাশে বসেছিল এই আদিবাসী মেলা। সন্ধ্যা থেকে রাতভর সংস্কৃতির টানে সেখানে ঝুমুর, টুসু প্রভৃতি নাচ-গানের সঙ্গে বিকেলে মোরগ লড়াই, গোরু খোঁটা হয়। |
বুধবার পড়ন্ত বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেল, খোলা আকাশের নিচে রূপাহিড়ের টিলায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম। এক দিকে খুঁটিতে বাঁধা গরু। ধামসা মাদল বাজিয়ে, শিঙা ফুঁকে একটি গরুকে উত্যক্ত করা হচ্ছে। অন্য পাশে চলছে অনেক মোরগের লড়াই। কয়েকশো নর-নারী নাচছেন ধামসা মাদলের তালে। মেলা কমিটির সম্পাদক শ্যামাপদ হাঁসদা জানান, প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসে শতাব্দী প্রাচীন এই মেলা বসে। আশপাশের বেঁকিয়া, বাঁশনালা, রক্তজুড়িয়া, খড়িডুংরি, রূপাহিড়, ভেলাইগোড়া, তেঁতুলচিটা, ভমরপুর, ভুটকুঘুটু, শালকাঘুটু-সহ বহু গ্রামের মানুষ এই মেলার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। মেলা কমিটির অন্যতম সদস্য শৈলেন হাঁসদার দাবি, “খাতড়া, রানিবাঁধের সঙ্গে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, বোরো প্রভৃতি এলাকার বহু মানুষই এই মেলায় আসেন।” মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে মেলার পরিধিও বেড়েছে। খাতড়ার সুপুর গ্রামের বাসিন্দা, বিএড কলেজের শিক্ষক অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই মেলায় এলে অন্য অনুভূতি পাওয়া যায়। তাই প্রতিবছর আসি।” স্থানীয় তিলাবনির গোপাল মাণ্ডি-র মতে, “এখানে শুধু মনের খোরাক নয়, গেরস্থালি জিনিসও পাওয়া যায়।” অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক এবং বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ‘ভারত নির্মাণ জন তথ্য অভিযান’ মিলন মেলা শুরু হল খাতড়া স্টেডিয়ামে। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক সুশান্ত চক্রবর্তী, ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর অতিরিক্ত মহানির্দেশক শান্তনু পালোধী, খাতড়ার মহকুমাশাসক দেবপ্রিয় বিশ্বাস প্রমুখ। তিন দিনের এই মেলায় আলোচনাসভা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সঙ্গীত ও নৃত্যানুষ্ঠান এবং জাদু প্রদর্শনী থাকছে। |