আড়ংয়ের আবেগে ভাসল নবদ্বীপ
রু রাস্তা, বিশাল প্রতিমা আর তার সঙ্গে বিরাট জনতা। রাসের বিসর্জনের দিন আড়ং-এ প্রতিবারের মতো এ বারেও সেই জনতা আবেগে ভেসে গেল। সেখানে যেমন দেখা গেল আদিবাসী নৃত্য বা ওড়িশার সম্বলপুরের নাচ, তেমনই বহু মানুষের সেই ভিড়ে এক দিকে যেমন শব্দ গ্রাহ্যসীমা অতিক্রম করে গেল, তেমনই মদ্যপানের উপরেও আপাতদৃষ্টিতে কোনও নিয়ন্ত্রণ রইল না। অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী দিব্যেন্দু রায় বলেন, “বিসর্জনের দিন যেন ভব্যতা সভ্যতা বোধও বিসর্জন দিল এই শহরের মানুষ। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাতি ছিল যে নবদ্বীপের, তার মানুষের কাছ থেকে এই প্রত্যাশা কেউ করেন না।”
কেন্দ্রীয় রাসোৎসব কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাসের দিন ও বিসর্জনের দিন প্রকাশ্যে রাস্তায় মদ্যপান ও অশ্লীল ভঙ্গিতে নাচ যেন একটা রীতিই হয়ে গিয়েছে। এটা নবদ্বীপের রাসের পক্ষে খারাপ বিজ্ঞাপন।” দিলীপবাবু নবদ্বীপ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদকও। তাঁর কথায়, “কোনও রাস উদ্যোক্তাই চান না বা প্রশ্রয় দেন না এই সব কাজকর্মকে। তবু কিছু মানুষ তা দ্বিধাহীন ভাবে বছরের পর বছর এই সব কাণ্ড করে আসছেন। আমরা প্রশাসনকে এ বারেও রাসের আগেই বলেছিলাম, এই ভাবে মদ্যপান বন্ধ করতে উদ্যোগী হন। কিন্তু প্রশাসনের ভূমিকায় আমরা হতাশ।”
নবদ্বীপে রাসের প্রতিমা বিসর্জনের দিন সম্বলপুরের নৃত্য প্রদর্শনী।
কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক সব্যসাচী সরকারের কথায়, “অনেকদিন ধরেই এই উৎসবের কিছু প্রথা তৈরি হয়ে গিয়েছে। সচেতনতা বাড়িয়ে আস্তে আস্তে সে সব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।” তাঁর কথায়, “তবে সর্বত্রই পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। কোনও গণ্ডগোল হলেই তাঁরা হস্তক্ষেপ করছেন। যে কারণেই শহরে কোনও বড় বিপদ ঘটেনি।” কিন্তু এই রীতি তৈরি হল কী করে? বৈষ্ণবতীর্থ হলেও নবদ্বীপের সঙ্গে শাক্তচর্চার নিবিড় সম্পর্ক। সেই সূত্রেই আসে তন্ত্রের সঙ্গে নবদ্বীপের সম্পর্ক। সেখান থেকেই এই রীতির উদ্ভব। তবে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ চেয়েছিলেন শাক্ত চর্চার সঙ্গে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করতে। সেই জন্যই তিনি শক্তিপুজোর সময়ে মদ্যপান বা আনুষাঙ্গিক অনেক তন্ত্রাচার আবশ্যিক বলে গণ্য করেননি। কিন্তু তার পরে আবার তান্ত্রিকদের উত্থানের সময়ে কিন্তু সেই সব তন্ত্রাচার ফিরে আসে। নবদ্বীপের রাসের প্রাচীনতম প্রতিমাগুলি পুজো করতেন বিখ্যাত তান্ত্রিক পুরোহিতেরা। তাঁরা রীতি মেনে মদ্যপান করতেন। শুরুটা সেখানেই। তারপরে যখন পুজো বারোয়ারির হাতে চলে এল, তখনও সেই রেওয়াজ রয়ে গেল।
শান্তিপুরে আতসবাজি।
বিন্ধ্যবাসিনী রাসের উদ্যোক্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত সংস্কৃত শিক্ষক শুভেন্দুকুমার সিদ্ধান্ত বলেন, “শুধু ব্রাহ্মণেরাই নয়। প্রকাশ্যে মদ্যপানের এই রীতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কায়িক শ্রম করতেন এমন মানুষদের আমোদও। প্রতিমা নির্মাণ থেকে বিসর্জন, সবই করতেন তাঁরা। তা ছাড়া, বাবু সংস্কৃতির প্রভাবও জড়িত ছিল এই মদ্যপানের রীতির সঙ্গে।” তাঁর কথায়, “নবদ্বীপে রাসের সময় এই হুল্লোড়ের রেওয়াজ গেঁথে গিয়েছে।” কবি প্রণব চক্রবর্তীর কথায়, “আগামি প্রজন্ম চোখের সামনে এই রীতি দেখে কী শিখবে, সেটাই উদ্বেগের।” নাট্যকর্মী অজয় চক্রবর্তীর বক্তব্য, “যাঁরা এই সব কাজকর্ম করেন, তাঁরা খুবই শ্লাঘার সঙ্গেই সে কাজ করেন। নবদ্বীপের নাগরিকদের উচিত এক সঙ্গে বসে এই বিকট প্রমোদ বন্ধ করা।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.