রেজিনগরের উপনির্বাচনে তাঁরাই জিতবেন বলে দাবি করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। সেই সঙ্গেই তিনি অধীর চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন, সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ফের ভোটে দাঁড়িয়ে জেতার জন্য।
মুর্শিদাবাদে কান্দির মোহনবাগান মাঠে বৃহস্পতিবার দলীয় জনসভায় মুকুলবাবু বলেন, “নৈতিকতার প্রশ্নে রেজিনগরের বিধায়ক পদ ত্যাগ করার পরে হুমায়ুন কবীর তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তারপর তিনি মন্ত্রী হয়েছেন। পিছনের দরজা দিয়ে তাঁকে দলে নিইনি। আমাদের সাংসদদের পদত্যাগ করে ফের নির্বাচনে জিতে আসার কথা বলেন অধীরবাবু দীপা দাশমুন্সীরা। আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, অধীরবাবুও পদত্যাগ করে জিতে আসুন। আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি রেজিনগরের উপ-নির্বাচনে আমরাই জিতব।” অধীরবাবুর জবাব, “২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জোট ছিল না। কংগ্রেস একা লড়ে মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি আসনই দখল করেছে। সেই রাজনৈতিক ইতিহাস না-জানা মানুষদের আবোল-তাবোল কথার কোনও জবাব হয় নাকি? উপ-নির্বাচনে মানুষ কাকে জেতাবেন, তা গত ২৩ নভেন্বর রেজিনগরের শক্তিপুরের মাটিতে দলের স্বতঃস্ফূর্ত ঐতিহাসিক জমায়েতেই স্থির হয়ে গিয়েছে।” |
কেন্দ্রের ‘জনবিরোধী নীতি’র বিরুদ্ধে তৃণমূলের এ দিনের সমাবেশ আক্ষরিক অর্থেই রেজিনগরের আসন্ন উপ-নির্বাচনী জনসভায় পরিবর্তিত হয়ে যায়। কংগ্রেসের টিকিটে জেতা রেজিনগরের হুমায়ুন কবীর গত ২০ নভেম্বর বিধায়ক পদ ত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। এ দিনের সভায় হুমায়ুন বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে রেজিনগর বিধানসভার উপ-নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অধীর চৌধুরী চিঠি দিয়েছেন। আমি ওই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম। কংগ্রেসকে তৃতীয় স্থানে ফেলে দিয়ে আমিই জিতব। কান্দির কংগ্রেস বিধায়ক অপূর্ব সরকারকে পদত্যাগ করিয়ে একই সঙ্গে তাঁকে ওই উপ নির্বাচনে লড়ার জন্য চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। তিনিও যে সেক্ষেত্রে হারবেন, তা এ দিনের বিপুল জমায়েতই প্রমাণ।” অপূর্ব সরকার অবশ্য বলেন, “পঞ্চায়েতের ভোটে জেতার যোগ্যতা নেই এমন ব্যক্তি অধীরদার বদান্যতায় বিধায়ক হওয়ার পরে মিরজাফর হয়ে গিয়েছেন। ফলে তাঁকে তো উপ-নির্বাচনে দাঁড়াতেই হবে।” তার কথায়, “কান্দির মোহনবাগান মাঠের সিকি ভাগ জায়গায় সভা করতে গোটা মুর্শিদাবাদ জেলা ছাড়াও লাগোয়া বীরভূম ও বর্ধমান জেলা থেকে গাড়িতে করে লোক নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ওই সমাবেশের কথা ওঁরা মুখে আনছেন কোন লজ্জায়!”
এ দিনের সমাবেশের ছোট থেকে বড় ও মাঝারি সব মপের বক্তাই কখনও নাম করে, কখনও নাম না করে অধীর চৌধুরিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে কসুর করেননি।
যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিদ্দিকা বেগমকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দলে থেকে বের করেছেন, হুমায়ুন কবীরের উত্থান আটকাতে তাকে সব সময় নীচে বসিয়ে রেখেছিলেন ভ্রষ্টাচারী, দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেসের এমন নেতার হাত থেকে মুর্শিদাবাদকে রক্ষা করতে হুমায়ুন কবীর তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আসন্ন উপ-নির্বাচনে তাঁকে জিতিয়ে কংগ্রেসকে একটা ধাক্কা দিন। তার পর পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই জোট বাঁধুন তৈরি হন।” অপূর্ববাবুর কথায়, “অধীরদার বদান্যতায় হুমায়ুন কবীর বিধায়ক হয়েছিলেন ও সিদ্দিকা বেগম সভাধিপতি হয়েছিলেন। তারপরও কি তাঁদের উত্থান আটকানোর অভিযোগ ধোপে টেকে?” হুমায়ুন অবশ্য বলেন, “২০০১ সালে কান্দির রাজাবাবু অতীশ সিংহকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে জেলা কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে অধীর চোধুরী সেই আসনে বসেন।” খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন মন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “স্থানীয় সাংসদের অত্যাচারে অনেক দুঃখ নিয়ে অতীশবাবুকে মরতে হয়েছে।” রেলের প্রতিমন্ত্রীর জবাব, “যুধিষ্ঠিররা এত সব সত্য কথা তখন না বলে, এতদিন পরে কেন বলছেন?”
|
নাম না করে অধীরবাবুরর উদ্দেশ্যে তৃণমূলের সর্বভারতীয় নেতা মুকুল রায়ের কটাক্ষ, “আমাকে বা আমাদের কাউকে জোড়া খুনে অভিযুক্ত হয়ে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিতে হয়নি। আমার স্ত্রীকেও জোড়া খুনে অভিযুক্ত হয়ে জামিন নিতে হয়নি।” অধীরের পাল্টা জবাব, “রাজনৈতিক বিদ্বেষের কারণে যে মিথ্যা খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছিল, আদালতের বিচারে তা থেকে আমরা বেকসুর খালাস পেয়েছি। ওই খবর যাঁরা রাখেন না, তাঁদের কথার জবাব দেওয়াটা রুচিতে বাঁধে। তা ছাড়া যখন ওই মামলা বিচারাধীন ছিল, তখন কেন তৃণমূলের এক নেতাকে নির্বাচনে জেতাতে ওঁরাই আমাকে বক্তা হিসাবে কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন?”
শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, “হঠাৎ একজন মন্ত্রী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন করা রেল প্রকল্পে নারকেল ফাটাচ্ছেন।” জনতার উদ্দেশ্য মুকুল রায় বলেন, “অধীরবাবুরা করতে পারলেন কি পারলেন না, তা নিয়ে ভাববেন না। আগামী লোকসভা ভেটের পর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন এ জেলার রেলের সব প্রকল্প রূপায়িত হবে। তার আগে রেজিনগরের ভোটে আমাদের জেতান। তার পর পঞ্চায়েত ও লোকসভার ভোটে আমাদের জেতান।” অধীর বলেন, “অর্থাৎ উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারে থাকতে হয়, সেটা তাঁরা এখন মানছেন। তা হলে তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকার থেকে সরে এলেন কেন? নিঃশর্তে তাঁরা যদি ফের কেন্দ্রকে সমর্থন করেন তবে ফাটানোর জন্য আমিই ওঁদের কচি নারকেল উপহার দেব।” |