তিন জন তিন দেশের। আর্জেন্তিনার মহানায়ক লিওনেল মেসি। পর্তুগালের সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। স্পেনের নক্ষত্র আন্দ্রে ইনিয়েস্তা। কিন্তু আদতে ফিফা-র বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার ‘ব্যালন ডি’অর’-এর চূড়ান্ত লড়াই স্প্যানিশ ঘরোয়া যুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেল। সেই বার্সা বনাম রিয়াল। বার্সেলোনার মেসি বনাম রিয়াল মাদ্রিদের রোনাল্ডো বনাম বার্সেলোনার ইনিয়েস্তা। আগামী ৭ জানুয়ারি জুরিখে ফিফার সদর দফতর থেকে এই তিনের থেকেই ২০১২-র চূড়ান্ত বিজয়ীর নাম ঘোষিত হবে। সাধে কি আর ফিফা-র মহাসচিব ভালকে বলে ফেলেছেন, “ফুটবল দুনিয়ার সেরা প্লেয়ার বাছাইয়ের লড়াইতেই পরিষ্কার, স্পেনের ফুটবল কী প্রচণ্ড শক্তিশালী!” ফিফার বর্ষসেরা কোচের চূড়ান্ত যুদ্ধও স্প্যানিশ ফুটবলের ঘরোয়া লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে বিশ্ব এবং ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন স্পেন দলের কোচ দেল বস্কি বনাম রিয়াল মাদ্রিদ কোচ হোসে মোরিনহো বনাম সদ্য প্রাক্তন বার্সেলোনা কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা।
স্পেনের ফুটবলের জয়গানের মধ্যেও অবশ্য ফিফার বর্ষসেরা হওয়ার লড়াইয়ে সবার আলাদা ভাবে নজর সেই আর্জেন্তিনীয় ফুটবল-শিল্পীর দিকেই। লিও মেসি। বার্সার নয়নের মণি এল এম টেন। ২০১১-তেই এই মহার্ঘ পুরস্কার পাওয়ার হ্যাটট্রিক করে ফেলেছেন মেসি। এ বার পরপর চতুর্থ বার বিশ্ব ফুটবলের সেরা প্লেয়ারের তকমা পাওয়ার বিরল সুযোগ তাঁর সামনে। এবং ২০১২-তে মেসি-যাদু আরও বেশি চমকপ্রদ। ক্লাব ও দেশের হয়ে এক ক্যালেন্ডার বর্ষে সর্বাধিক গোল করার বিশ্বরেকর্ড (বায়ার্ন মিউনিখ এবং জার্মানির হয়ে গার্ড মুলারের ১৯৭২-এ ৮৫ গোল) ভাঙার থেকে আর মাত্র ৩ গোল দূরে আপাতত মেসি (৮২ গোল)। |
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো
(২০১১-১২ মরসুম) |
লিওনেল মেসি (২০১১-১২ মরসুম) |
রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে: ৫৫ ম্যাচে ৬০ গোল।
পর্তুগালের জার্সি গায়ে: ৯ ম্যাচে ৭ গোল।
জিতেছেন: লা লিগা, ২০১২ ইউরোয় তৃতীয় স্থান।
সম্মান: আলফ্রেডো ডি’স্তেফানো ট্রফি। |
বার্সেলোনার জার্সি গায়ে: ৬০ ম্যাচে ৭৩ গোল।
আর্জেন্তিনার জার্সি গায়ে: ১৩ ম্যাচে ৪ গোল।
জিতেছেন: কোপা দেল রে, সুপার কাপ, ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ।
সম্মান: উয়েফার বর্ষসেরা ফুটবলার, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা, ফিফা ব্যালন ডি’অর, লা লিগার বর্ষসেরা ফুটবলার, ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ গোল্ডেন বল, আর্জেন্তিনার বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ। |
ডার্ক হর্স ইনিয়েস্তা |
কার ঝুলিতে কী |
মেসি: ৫ লা লিগা, ৩ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ১ অলিম্পিক সোনা।
রোনাল্ডো: ৩ প্রিমিয়ার লিগ, ১ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ১ লা লিগা।
ইনিয়েস্তা: ৫ লা লিগা, ৩ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ১ বিশ্বকাপ, ২ ইউরো কাপ। |
|
রোনাল্ডো দু’হাজার নয় থেকে মেসির টানা তিন বার এই পুরস্কার পাওয়ার আগে যিনি শেষ বার ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের ট্রফি পেয়েছিলেন ২০০৮-এ। এ বছর লা লিগায় মেসির বার্সার চেয়ে অনেক পয়েন্টে এগিয়ে রিয়ালের এক নম্বরে থাকার পিছনে সি আর সেভেন-এর অবদানই সবচেয়ে বেশি। রোনাল্ডোও নয়-নয় করে গত মরসুমে সব টুর্নামেন্ট মিলে ৬০ গোল করেছেন। এ মরসুমে ইতিমধ্যে ১৯ গোল করা হয়ে গেছে রোনাল্ডোর।
ইনিয়েস্তার ওই দু’জনের মতো বিশ্ব ফুটবলে দুর্ধর্ষ টিআরপি হয়তো নেই। কিন্তু নীরবে কোনও ফুটবলার যদি বার্সেলোনা এবং স্পেন টিমের সাম্প্রতিক মহাসাফল্যে সর্বোচ্চ অবদান রেখে থাকেন, তা হলে তার নাম ইনিয়েস্তা। ২০১০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ইনিয়েস্তার গোলেই স্পেনের প্রথম বার ফুটবলদুনিয়ার সেরা হওয়া। ২০১২ ইউরো কাপ ফাইনালে ইতালিকে চার গোল মেরে স্পেন চ্যাম্পিয়ন। ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট ইনিয়েস্তা। “সব মিলিয়ে বিশ্ব ফুটবলে এখন স্প্যানিশ থিম বাজছে!” এটাও বলে ফেলেছেন ফিফা মহাসচিব। |