|
|
|
|
শহরে যানজট ঠেকাতে তিন সদস্যের কমিটি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলে বাস, অটো। আর তার জেরে যানজটে নিত্য নাকাল হন শহরবাসী। মেদিনীপুরে এই সমস্যা মেটাতে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসকের দফতরে এক বৈঠক হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় জেলা পরিবহণ আধিকারিক, ডিএসপি (ট্রাফিক) এবং মেদিনীপুরের পুরপ্রধান ওই কমিটিতে থাকবেন। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে কমিটি নির্দিষ্ট প্রস্তাব দেবে। তা খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। মূলত, শহরের কোথায় কোথায় অটো স্ট্যান্ড করা যায়, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কী ভাবে যানজট সমস্যা এড়ানো যায়, তাই খতিয়ে দেখবে কমিটি।
বৈঠক শেষে মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত বলেন, “শহরের বুকে যানজট সমস্যা কী ভাবে এড়ানো যায়, সে নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ৩ সদস্যের একটি কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই কমিটি এক মাসের মধ্যে তাদের প্রস্তাব জমা দেবে। তারপর তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।” কমিটির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে আগামী ২৮ ডিসেম্বর মহকুমাশাসকের দফতরে ফের একটি বৈঠক হবে। শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থার হাল ফেরাতে আগেও বৈঠক হয়েছে। সেখানে নানা সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু সে সব কার্যকর হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হয় না বলেই অভিযোগ। |
|
মহকুমাশাসকের অফিসে বৈঠক।—নিজস্ব চিত্র। |
ফলে, দুর্ভোগে দাঁড়ি পড়ে না জেলার সদর শহরে। মেদিনীপুরে নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠছে। তৈরি হচ্ছে বহুতল। মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। রাস্তায় ছোট-বড় গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে। তা ছাড়া, নানা কাজে রোজই জেলা ও জেলার বাইরে থেকে বহু লোক এখানে আসেন। অথচ শহরে সুষ্ঠু কোনও ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। আগে প্রশাসনিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা ও বিকেল ৩ টে থেকে সন্ধে ৬টা শহরের মধ্যে লরি ঢুকতে পারবে না। কিন্তু নজরদারির ফাঁক গলে লরি ঢুকছে বলেই অভিযোগ।
শহরের ধর্মা থেকে গোলকুঁয়াচক, মোহনপুর থেকে নতুনবাজার, মহাতাবপুর, জর্জকোট রোড হয়ে কেরানিতলা, আবাস থেকে এলআইসি, এলআইসি থেকে কালেক্টরেট মোড় হয়ে কেরানিতলা, গোলকুয়াচক থেকে কলেজ মোড় হয়ে এলআইসি প্রভৃতি রাস্তাগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট রাস্তার আশপাশে স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি অফিস রয়েছে। ফলে বেলা ৯টার পর থেকেই এই সব রাস্তায় যানজট হয়। গোলকুয়াচক থেকে কর্নেলগোলা হয়ে ধর্মা পর্যন্ত রাস্তা এমনিতে সংকীর্ণ। রাস্তার ধারে হাইস্কুল রয়েছে। ধর্মা হয়ে চলে গিয়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এই রাস্তায় ভারী গাড়ি চলাচল করে। খড়গপুর বা কেশপুরের দিক থেকে যে সব গাড়ি শহরে ঢোকে, তার অধিকাংশই ধর্মা পেরিয়ে কর্নেলগোলা দিয়ে যাতায়াত করে। ফলে, সংশ্লিষ্ট এলাকা অধিকাংশ সময়ই ব্যস্ত থাকে। যানজট এড়াতে এই রাস্তা দিয়ে দিনে ভারী গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি, শহরে একাংশ অটো বেপোরোয়া ভাবে চলাচল করে। বাড়তি যাত্রী তোলে। অটোর কোনও নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডও নেই। যত্রতত্র অটো দাঁড়িয়ে যাওয়ায় নিত্য যানজট হয়। বিশেষত এলআইসি মোড়, কালেক্টরেট মোড়, কেরানিতলা প্রভৃতি এলাকায়। বিশেষ করে উৎসবের মরসুমে রাস্তা আটকে মণ্ডপ তৈরির জন্য চলাফেরা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
গত সপ্তাহে অটো-রাজের প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন শহরের রিকশা চালকেরাও। তাঁদের বক্তব্য, অটো যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। এক-একটি অটোতে ১০- ১২ জনকে তোলা হচ্ছে। মানা হচ্ছে না রুট পারমিট। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার মহকুমাশাসকের দফতরে বৈঠক হল। বৈঠকে ছিলেন জেলা পরিবহণ আধিকারিক প্রিয়াঞ্জন দাস, বিধায়ক মৃগেন মাইতি, পুরপ্রধান প্রণব বসু প্রমুখ। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অটো স্ট্যান্ডে এ বার ভাড়ার তালিকা রাখা হবে। অটোতে যাত্রাপথের নাম বড় হরফে লিখতে হবে। মেদিনীপুর স্টেশনের সামনে অটো স্ট্যান্ড করা হবে। যাতে ট্রেন যাত্রীদের স্টেশনে নেমে অটো খোঁজার জন্য সমস্যায় না পড়তে হয়। পাশাপাশি, নিয়ম ভেঙে অটো চালানো রুখতে তল্লাশি অভিযান যেমন চলছে, তেমনই চলবে। |
|
|
|
|
|