নিশ্চুপে ‘খুন’ হচ্ছে শীতের অতিথিরা |
শীতে ‘বিদেশে’ এসে নিশ্চুপে খুন হয়ে যাচ্ছে ওরা!
আহিরণের বিলে পরিযায়ীর ঝাঁক নতুন নয়। বছর কয়েক ধরেই ফরাক্কার অদূরে ওই অনন্ত ঝিলে পিন-টিল, লেসার হুইশলিং-টিল, উড-ডাকের পাশাপাশি তিব্বত কিংবা হিমালয়ের কৈসাশ থেকে উড়ে আসা বিভিন্ন ধরনের হেরন ও স্টর্ক প্রজাতির পাখির অস্থায়ি ঠিকানা। প্রাত শীতে এসে বছরের অন্তত তিন থেকে পাঁচটা মাস তারা কাটিয়ে যায় আহিকড়ের ঝিলে। বছরভর সেই জলাশয়ের চারপাশে হুটোপুটি করে মুরহেন, ওয়াটার হেন-এর মতো কিছু চেনা মুখও।
অজস্র জলা-পাখির ভিড়ে ঠাসবুনোট এই ঝিলটিকে তাই বিশেষ সংরক্ষণের চেষ্টায় ছিল বন দফতর। তবে সে প্রয়াস মাঝ পথেই থমকে গিয়েছে। নেই প্রহরা। দেখা নেই আশপাশের গ্রামের সচেতন মানুষজনেরও। আর তাই ফাঁদ পেতে কিংবা আঠা-ঝাল ছড়িয়ে অবাধে চলছে পরিযায়ী শিকার। মোটা টাকায় তা আশপাশের গ্রামে কিংবা জাতীয় সড়ক ধরে হু হু করে ছুটে যাওয়া, মূলত ট্রাক চালকদের বিক্রিও করা হচ্ছে সেই-সব পিনটিল কিংবা নিতান্ত আটপৌরে ডাহুকের মাংস। |
বন দফতরকে বিষয়টা জানানো হলে বিস্ময় ছাড়া কিছুই মেলেনি। নদিয়া মুর্শিদাবাদ ডিভিশনের ডিএফও তৃপ্তি সাহা জানান, পাখি-শিকারের ঘটনার কথা তাঁর জানা নেই। কবে তিনি বলেন, “২০০৬ সালে ওখানে পাখিরায় গনানর প্রস্তাব দিয়েছিল কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। কিছু অনুদান দিয়েছিল। সে টাকায় কিছু কাজও করেছিল বন বিভাগ।” তারপরে? স্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি তিনি। আহিরণের ওই জলায় অন্তত ১৬ প্রজাতির পাখির ঠিকানা। তাদের সংরক্ষণের জন্য বন দফতর এখন কিছু বাবছে কিনা সে ব্যাপারেও ওই বনকর্তার কাছে কোনও আশ্বাস পাওয়া যায়নি।
জলাশয়টি পুরোটাই সরকারি খাস জমিতে অবস্থিত। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর আপাতত ভুমি রাজস্ব দফতরের এক্তিয়ারে থাকা জলাশয়টির দেখভাল করে ওই দফতরই। তবে তা যে নাম কা ওয়াস্তে তা বলা বাহুল্য। কয়েক বছর আগে ৪১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকায় সুতি-১ পঞ্চায়েত সমিতি জলাশয়টি সাফ সুতরোও করে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এই বিশাল জলাশয় থেকে স্থানীয় চাষিরা যেমন সেচের জল নেন, তেমনই বহু মৎস্যজীবীও প্রায় বিনা খাজনায় নিয়মিত মাছ ধরেন। এই উদ্যোগের অন্যতম হোতা ছিলেন সুতি-১ পঞ্চায়েত সমিতির এক কালের সভাপতি কংগ্রেসের আশিস ঘোষ। তিনি বলেন, “শীতকালে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক দেখে তৎকালীন সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারকে আহিরণ জলাশয়কে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র ও পাখিরালয় গড়ার প্রস্তাব দেন। সেই মতো কাজও শুরু হয়। কিন্তু মাঝপথেই সে কাজ থমকে যায়।”
তবে পাখি শিকার নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের তোমন হেলদোল নেই। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া বিলের ধারে সদ্য শিকার করা বালি হাঁস কিংবা হুইশলিং টিল নিয়ে নির্বিকার দাঁড়িয়ে তাকা যুবাদের দেখা যায় অহরহ। তারা দর হাঁকেন, “জোড়া একশো।” স্থানীয় হোটেলে তা মেলে ১৫০ থেকে ১৭৫ টাকা জোড়ায়। রাস্তায় গাড়ি থামিয়েও ট্রাক চালকেরা দন দাম করে তা কিনেও নিচ্ছেন।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের রূপারানি হালদার বলেন, “শীত পড়তেই এই উৎপাত শুরু হয়েছে। খোঁজ পেয়েছি। বন দফতরকে খবর দিয়ে তো কোনও লাভ হয়না। লোকজন নিয়ে গিয়ে আমাদেরই ওই শিকার রুখতে হবে।” সুতি-১ ব্লকের বিডিও সুবীর দাসও ওই পরিযায়ী-হনন রুখতে চান। স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচাক শুরুর প্রতিশ্রতি দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু সরকারি সেই সদিচ্ছার শুরু কবে?
কেউ জানেন না। |