পরিকাঠামোর ঘাটতিকেই দোষারোপ |
|
গাফিলতিতেই সংক্রমণের
বলি আট পুলিশ-কুকুর
শিবাজী দে সরকার • কলকাতা |
|
রেলে নাশকতা থেকে বাঁচতে প্রশিক্ষিত কুকুরই ভরসা। অথচ সংক্রমণে কাবু আটটি কুকুরছানাকে বাঁচানো যায়নি রেল পুলিশে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে। রেল পুলিশেরই তদন্ত কমিটির সাম্প্রতিক রিপোর্টে এ কথা জানানো হয়েছে।
পরিকাঠামোর ঘাটতিটাও মূলত দু’রকমের। কুকুরগুলিকে যেখানে রাখা হয়েছিল, সেখানকার স্থানগত পরিকাঠামোর অভাব ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। সেখানে লোকবল থাকলেও প্রশিক্ষণ ছিল না অধিকাংশ প্রশিক্ষকেরই। সংক্রমণে কাবু কুকুরছানাগুলির দেখভাল ঠিকঠাক হয়নি সেই প্রশিক্ষণের অভাবেই। পরিকাঠামোর ত্রুটির সঙ্গে সঙ্গে দেখভালে গাফিলতির বলি হয়েছে আটটি কুকুর।
গন্ধ শুঁকে বিপজ্জনক বস্তু খুঁজে বার করে তারা যাতে ট্রেনে বা স্টেশনে নাশকতা ঠেকাতে পারে, সেই জন্যই কলকাতার এক ‘ব্রিডার’-এর কাছ থেকে ওই আটটি কুকুরছানা কেনা হয়েছিল। সাতটি ল্যাব্রাডর এবং একটি জার্মান শেফার্ড। প্রতিটিরই বয়স দু’মাস। কথা ছিল, প্রশিক্ষণের পরে রাজ্যের রেলের চারটি শাখাশিয়ালদহ, হাওড়া, খড়্গপুর ও শিলিগুড়ির প্রতিটিতে দু’টি করে পুলিশ-কুকুর পাঠানো হবে। নাশকতা ঠেকানোর কাজে লাগবে তারা।
কিন্তু নাশকতা ঠেকানোর কাজে নামা তো দূরের কথা, দমদম রোডের ‘কেনেল’ (কুকুর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র)-এ আটটি কুকুরছানারই মৃত্যু হয়। মার্চে মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে ওই ঘটনা ঘটে। প্রায় একই সঙ্গে আটটি পুলিশ-কুকুরের বেঘোরে মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গড়ে রেল পুলিশ। তখন খড়্গপুরের রেল পুলিশ সুপার ছিলেন শঙ্কর চক্রবর্তী। তিনিই ছিলেন তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে। রেল পুলিশের তিন কর্তা ছাড়াও এক জন পশু-চিকিৎসক ছিলেন কমিটিতে। সম্প্রতি সেই কমিটিই রিপোর্ট পেশ করেছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে।
কী বলা হয়েছে তদন্ত রিপোর্টে?
রিপোর্ট বলছে, দমদম রোডে রেল পুলিশের যে-কেনেলে প্রশিক্ষণের জন্য আটটি কুকুরছানাকে রাখা হয়েছিল, সেখানে উপযুক্ত পরিকাঠামো ছিল না। পরিবেশও চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর। কমিটির মতে, সব মিলিয়ে ভাইরাল সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে নিউমোনিয়া ও পেটের অসুখেই মৃত্যু হয় আটটি বাচ্চা ‘স্নিফার ডগ’-এর। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, কুকুর প্রশিক্ষণের জন্য ওই কেনেলে ১৭ জন প্রশিক্ষক থাকলেও তাঁদের মধ্যে মাত্র চার জনের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছিল। বাকি ১৩ জনের কোনও প্রশিক্ষণই ছিল না। মার্চে প্রথমে দু’টি কুকুরছানা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু সংক্রমণ থেকে অন্য কুকুরগুলিকে বাঁচাতেও কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেননি প্রশিক্ষণহীন প্রশিক্ষকেরা। দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞেরা কুকুরছানাগুলিকে প্রতিষেধক দেওয়ারও সময় পাননি। তার আগেই তাদের মৃত্যু হয়।
এখন রাজ্যে রেল পুলিশের চারটি শাখায় দু’টি করে পুলিশ-কুকুর রয়েছে। প্রতিটি জায়গায় চারটি কুকুর থাকে, সেই জন্যই ওই আটটি ছানা কেনা হয়েছিল। খরচ হয় ৭২ হাজার টাকা। আটটি কুকুরছানার মৃত্যুর ঘটনা আসলে রাজ্যে রেল পুলিশের পরিকাঠামোর দুর্দশাকেই বেআব্রু করে দিল বলে কর্তাদের অভিমত।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সম্প্রতি দেশের সর্বত্র পাঠানো একটি সতর্কবার্তায় বলেছে, নাশকতা ঠেকানোয়, বিশেষ করে বিস্ফোরক শনাক্ত করতে পুলিশ-কুকুরের কোনও জুড়ি নেই। কারণ এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানারের মতো যন্ত্র ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) চিহ্নিত করতে পারছে না। এই অবস্থায় আটটি কুকুরের মৃত্যু রাজ্যে নাশকতা ঠেকানোর ব্যবস্থাকেই দুর্বল করে দিল বলে স্বরাষ্ট্র দফতরের অভিমত।
কী বলছে রেল পুলিশ?
রেল পুলিশের ডিজি দিলীপ মিত্র বলেন, “তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি। পরিকাঠামো উন্নত করার চেষ্টা চলছে। নতুন কুকুর কেনার আগে আমরা পরিকাঠামোর উন্নয়ন এবং গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। সেই জন্য একটি নতুন দলও গঠন করা হচ্ছে।” ওই দলে এক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন বলে রেল পুলিশ সূত্রের খবর। পরিকাঠামো ঢেলে সাজার আগেই অবশ্য যাত্রী-সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে রেল পুলিশের তরফে আটটি নতুন ‘স্নিফার ডগ’ কেনার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে মহাকরণে। পুলিশকর্তাদের আশা, এই ব্যাপারে শীঘ্রই ছাড়পত্র মিলবে। |