শুরু থেকেই বলে আসছেন, লিখিত আমন্ত্রণপত্র না পেলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে যাবেন না। বৃহস্পতিবার, বৈঠকের ঠিক এক দিন আগেও সেই জেদ ধরে রাখলেন পদত্যাগে ইচ্ছুক মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। সঙ্গে তাঁর এ দিনের সংযোজন, “উনি (মুখ্যমন্ত্রী) ডাকলে অবশ্যই যাব। সাধারণ নাগরিক হিসাবে যাওয়াটা আমার কর্তব্য। তবে অনাহূতের মতো যাচ্ছি না।”
আজ, শুক্রবার সিঙ্গুর ব্লক অফিসে প্রশাসনিক বৈঠকে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করেছে পুলিশ-প্রশাসন। সিঙ্গুরের মতো তৃণমূলের ‘খাসতালুকে’ যা ইঙ্গিতপূর্ণ মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এক দিকে জমির দাম চেয়ে ‘দিদি’র কাছে দরবার করতে চাইছেন ‘অনিচ্ছুক’ চাষিরা। অন্য দিকে, সিঙ্গুর জমি আন্দোলনের দুই নেতা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ও বেচারাম মান্নার মধ্যে চাপানউতোরের জেরে আড়াআড়ি ফাটলের ইঙ্গিত দেখা দিয়েছে সিঙ্গুরে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে।
এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে সাদামাটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখেছে সিঙ্গুর। এ বার হুগলির পাশের জেলাগুলি থেকেও পুলিশ আনা হয়েছে। লাটবাগান থেকে রাজ্য সশস্ত্র বাহিনীও আসবে। সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন থাকছে। টাটাদের প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা আঁটোসাটো করা হয়েছে। বিডিও অফিসে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। |
সম্প্রতি ‘গুরুত্বহীন দফতরে’ বদলির পরে রবীন্দ্রনাথবাবু পদত্যাগপত্র পাঠান মহাকরণে। সেই চিঠির কোনও উত্তর দেননি মুখ্যমন্ত্রী। দলের বিরুদ্ধে তোলাবাজিরও অভিযোগ তোলেন সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু। সে ব্যাপারেও এখনও মন্তব্য করেননি মমতা। দলের প্রথম সারির নেতারাও নিশ্চুপ। তবে সরব বেচারাম। একটি সূত্র জানাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতিতেই নব নির্বাচিত কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না মুখ খুলেছেন তাঁর এক সময়ের ‘রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু’ প্রবীন মাস্টারমশাইয়ের বিরুদ্ধে। বেচারামের তোপ ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়েও পৌঁছেছে। বেচারামও সিঙ্গুরে জমি আন্দোলন পর্বে টাটা-ঘনিষ্ঠ
ব্যবসায়ীর বাড়িতে যাতায়াত করতেন বলে পাল্টা মন্তব্য এসেছে রবীন্দ্রনাথবাবুর তরফে।
গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহে বার বার একটা প্রশ্ন উঠে এসেছে, এই পরিস্থিতিতে কি শুক্রবার সিঙ্গুরে মমতার প্রশাসনিক বৈঠকে হাজির থাকবেন রবীন্দ্রনাথবাবু? তাঁকে সরকার কি আদৌ ডাকবে, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা। সে ক্ষেত্রে প্রবীণ এই তৃণমূল নেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়েও গুঞ্জন রাজ্য রাজনীতিতে। ইতিমধ্যেই ‘সৎ ও কর্তব্যপরায়ণ’ বলে তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব রবীন্দ্রনাথবাবুকে তাঁদের দলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বসেছেন। দলীয় দুর্নীতির প্রতিবাদে মুখ খোলায় মাস্টারমশাইকে টেলিফোন করে ধন্যবাদ জানান প্রাক্তন পঞ্চায়েত মন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা আনিসুর রহমান।
রবীন্দ্রনাথবাবু নিজে অবশ্য বিতর্ক গড়াতে চাননি। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “বেচারামের সঙ্গে আমার সংঘাতের কোনও কারণ ঘটেনি। ভুল বোঝাবুঝির জায়গা নেই। ওঁর বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভও প্রকাশ করিনি। সংবাদমাধ্যমই এ সব তৈরি করেছে।” গত কয়েক দিন ধরে রবীন্দ্রনাথবাবুর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বেচারাম বুধবারই জানিয়েছিলেন, দলের নেতৃত্বের কাছে এ সবের ‘বিহিত’ চাইবেন। এ দিন তিনি বলেন, “মাস্টারমশাইয়ের আরও সংযত হওয়া উচিত ছিল। প্রমাণ ছাড়া এ ভাবে কারও বিরুদ্ধে কিছু বলা উচিত হয়নি ওঁর।” সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা বাবু ঘোষও বলেন, “মাস্টারমশাই হিসাবে ওঁকে সম্মান করি। কিন্তু উনি দলকে সমস্যায় ফেলেছিলেন।” অনেক নেতার দাবি, এ ধরনের অনুষ্ঠানে মৌখিক ভাবেই আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে জন প্রতিনিধিদের। চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক তপন মজুমদার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে টেলিফোনে আমন্ত্রণ পেয়েছি। এটাই রীতি।” রবীন্দ্রনাথবাবুর বক্তব্য, “এটা উচিত নয়। লিখিত আমন্ত্রণই পাঠানো দরকার।” কিন্তু আগে কি সে ভাবেই আমন্ত্রণ পেয়েছেন তিনি? কয়েক মাস আগে ডানকুনিতে যখন প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী, তখন কী ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল রবীন্দ্রনাথবাবুকে? উত্তরে প্রবীণ মাস্টারমশাই বলেন, “ঠিক মনে নেই। তা ছাড়া, আমি সে সময়ে অন্যত্র ছিলাম। বৈঠকে যাইনি।” মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে টেলিফোনে আমন্ত্রণ পেয়েও লিখিত চিঠির প্রত্যাশ্যায় থাকা পাণ্ডুয়ার সিপিএম বিধায়ক আমজাদ আলিও মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে যাবেন না বলে জানিয়েছেন। |