হঠাৎই ঘুরে দাঁড়াল ঝিমিয়ে থাকা শেয়ার বাজার। গত মঙ্গলবার থেকে মাত্র দু’দিনের লেনদেনেই সেনসেক্স বেড়ে গেল ৬৩৪ পয়েন্ট। সূচক ফের ঢুকে পড়ল ১৯ হাজারের ঘরে। এবং তা সম্ভব হল ১৯ মাস বাদে। বৃহস্পতিবার বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্স দাঁড়াল ১৯,১৭০.৯১ অঙ্কে।
এই সমস্ত কিছুই ঘটল দুই আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা সংস্থা মুডিজ এবং গোল্ডমান স্যাক্সের সৌজন্যে। ভারতের শেয়ার বাজার এবং আর্থিক অবস্থা নিয়ে ওই দুই সংস্থা উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে ইতিবাচক মন্তব্য করেছে। গত মঙ্গলবার মূল্যায়ন সংস্থা মুডিজ ভারতের শেয়ার বাজার এবং আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে মন্তব্য করেছিল। এর জেরে ওই দিনই সেনসেক্স এক লাফে বেড়ে যায় ৩০৫ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাক্স এক রিপোর্টে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্য করেছে। তারা বলেছে যে, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি ৬.৫ শতাংশ এবং ৭.২ শতাংশ হারে বাড়বে। পাশাপাশি ২০১৩ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের পর থেকে মূল্যবৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে আসার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে।
মূলত এই দুই উপদেষ্টা সংস্থার সমীক্ষাই ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। চটজলদি চাঙ্গা করে তুলেছে ভারতের শেয়ার বাজারকে। তবে পাশাপাশি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক ক্ষেত্রে যে-সব সংস্কার আনার প্রস্তাব দিয়েছে, সে দিকে তাকিয়েও শেয়ার বাজার চাঙ্গা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাবটি নিয়ে প্রথমে তৃণমূল কংগ্রেসের অনাস্থা প্রস্তাব আনার প্রচেষ্টা ভেস্তে যাওয়া এবং পরে আজ বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা শুরু হওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় শেয়ার বাজার অত্যন্ত খুশি। লগ্নিকারীদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে যে, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হতে পারে।
বিমা এবং বিমান পরিষেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ টানার প্রস্তাবগুলি নিয়েও বিশেষ আশাবাদী লগ্নিকারীরা। বিএনকে ক্যাপিটাল মার্কেটসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজিত খান্ডেলওয়াল বলেন, “আর্থিক ক্ষেত্রে সংস্কারের ব্যাপারে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব এনেছে কেন্দ্র। সবগুলি না-হলেও এর মধ্যে কয়েকটিও যদি বাস্তাবয়িত হয়, তা হলেই শেয়ার বাজারে লম্বা দৌড় শুরু হবে।” তবে পাশাপাশি অজিতবাবুর আশঙ্কা, “ওই সব প্রস্তাবের একটিও যদি বাস্তবায়িত না-হয়, তা হলে বাজার চাঙ্গা থাকা কঠিন হবে বলে মনে হয়।”
এই দিন অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও শেয়ার বাজারগুলি চাঙ্গা ছিল। এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে চিন ছাড়া বাকি প্রায় সব দেশের শেয়ার সূচকের মুখই ছিল উপরের দিকে। আমেরিকায় কর সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কংগ্রেসে পাশ করিয়ে নিতে পারবেন বলে যে ধারণার সৃষ্টি হয়েছে, তার জেরে ওই দেশের শেয়ার বাজারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এই সবের ইতিবাচক প্রভাবও ভারতের বাজারে পড়েছে। |