ফুলবাজারে আড়তদার প্রথা তুলে দেওয়া নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিরোধ। তারই জেরে পাঁশকুড়ার সরকারি ফুলবাজার থেকে কয়েকশো মিটার দূরে চালু হল আর একটি বেসরকারি ফুলবাজার।
সরকারি ফুলবাজারের পরিচালন সমিতির সভাপতি জাকিউর রহমান খান পাঁশকুড়ার তৃণমূলের পুরপ্রধান। পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত সোমবার থেকে এই ফুলবাজারে আড়তদার প্রথা তুলে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ফুল কিনছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পরিচালন সমিতি ওই সিদ্ধান্ত একতরফা ভাবে নিয়েছে অভিযোগে ফুল ব্যবসায়ী, আড়তদার ও চাষিদের একাংশকে নিয়ে নতুন ফুলবাজার খুলেছেন পুরসভারই তৃণমূল কাউন্সিলার আনিসুর রহমান খান। পাঁশকুড়া ব্রাডলিবার্ট হাইস্কুলের খেলার মাঠের একাংশে বুধবার রাত থেকে নতুন ফুলবাজার বসছে। |
পাঁশকুড়ার মেচগ্রামের কাছে কনকপুর মৌজায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে সরকারি খাসজমিতে এই ফুলবাজারটি ২০০৪ সালে চালু হয়। বামফ্রন্ট আমলে এই ফুলবাজারের পরিচালন সমিতি নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থানীয় বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হলেও সেই সময় আড়তদার প্রথাতেই ফুল বেচাকেনা হত। চলতি বছর নতুন করে ফুলবাজারের পরিচালন সমিতি গঠন হয়। সমিতির অধিকাংশ সদস্যই তৃণমূলের। জাকিউর রহমান খান বলেন, ‘‘আগে কিছু আড়তদার ও ব্যবসায়ী আঁতাত করে চাষিদের কম দামে ফুল বিক্রি করতে বাধ্য করতেন। চাষিদের সরাসরি ফুল বিক্রির সুযোগ করে দিয়ে আমরা সেই আঁতাতটাই ভেঙে দিতে চাই। হঠে যাওয়া আড়তদার, ফড়ে, তোলাবাজ ও গুন্ডাদের নিয়ে বেসরকারি ফুলবাজারটি চালু করা হয়েছে। এর জন্য পুরসভা থেকে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। আনিসুরের বিরুদ্ধে দলের উচ্চ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে।”
নতুন ফুলবাজার চালু করার পিছনে নিজের সমর্থনের কথা স্বীকার করলেও আনিসুরের বক্তব্য, ‘‘সরকারি ফুলবাজারে এই মুহূর্তে সব চাষির ফুল বিক্রির মত পরিকাঠামো নেই। তাই চাষিদের স্বার্থেই এই ফুলবাজার চালু করা হয়েছে। আমরা সরাসরি ফুল বিক্রির বিপক্ষে নই। তবে, আমরা চাই খোলাবাজারের পাশাপাশি আড়তদার প্রথায় ফুল বিক্রিরও সুযোগ থাকুক। চাষিরা তাঁদের পছন্দ বেছে নিক।” আনিসুরের কথায়, ‘‘সরকারি ফুলবাজারের বৈঠকে এই প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু পরিচালন সমিতি একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষের সম্মতি নিয়ে মাঠে নতুন ফুলবাজার চালু করেছি। প্রশাসনের কাছে শীঘ্রই অনুমতি চাওয়া হবে।”
এ দিকে, ফুলবাজার নিয়ে তৃণমূলের পুরপ্রধান ও কাউন্সিলারের বিরোধ সামনে আসায় অস্বস্তিতে পড়েছে দল। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেন বলেন, “আমরা আলোচনার মাধ্যমে মতবিরোধ মেটানোর চেষ্টা করছি।” |
গোষ্ঠীকোন্দল চরমে উঠেছে নন্দীগ্রামেও। তৃণমূলের স্থানীয় দুই নেতা শেখ সুফিয়ান ও আবু তাহের গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ অনেক দিনের। সম্প্রতি দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারি, হাতাহাতিও হয়েছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে সুফিয়ানের অনুগামী বলে পরিচিত নন্দীগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষ দলের ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পালের কাছে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করে চিঠি পাঠানোয় জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। প্রকাশ্যে অবশ্য দুর্নীতির প্রতিবাদেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন কর্মাধ্যক্ষরা। পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল দলনেতা তথা পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ স্বদেশ দাস বলেন, “গোকুলনগর ও সামসাবাদ পঞ্চায়েতের প্রধানদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এর প্রতিবাদেই আমরা পদত্যাগ করতে চেয়ে ব্লক সভাপতিকে চিঠি দিয়েছি।” স্বদেশবাবুর দাবি, “পঞ্চায়েত সমিতির ৯ কর্মাধ্যক্ষের মধ্যে ৮ জনই পদত্যাগ করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। অধিকাংশ কর্মাধ্যক্ষ অনুপস্থিত থাকায় পঞ্চায়েত সমিতির অর্থ, পূর্ত ও কৃষি দফতরের স্থায়ী সমিতির বৈঠক বাতিল হয়েছে এ দিন।” মেঘনাদবাবু অবশ্য “পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনও চিঠি পাননি” বলে দাবি করেছেন। আবু তাহেরের কথায়, “এটা পদত্যাগের নাটক ছাড়া কিছু নয়।” তৃণমূল নেতা মামুদ হোসেন বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষদের পদত্যাগের চিঠি দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।”
|