পথের কাঁটা পানাগড়
চাষিদের বাধায় ধাক্কা খেল বাইপাস নির্মাণ
ট ছাড়ার প্রতীক্ষা দীর্ঘ দিনের। তবু পানাগড়ে বাইপাস গড়ার মাপজোক করতে গিয়ে বাধা পেয়ে ফিরতে হল বর্ধমান জেলা প্রশাসনকে। ক্ষতিপূরণের ‘প্যাকেজ’ না জানা পর্যন্ত তাঁরা কাজ করতে দেবেন না বলে জানিয়ে দিলেন বেশ কিছু চাষি।
কলকাতা থেকে দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চল হয়ে উত্তর ভারতে চলে যাওয়ার মূল ধমনী ২ নম্বর জাতীয় সড়কে এক মাত্র ফাঁস পানাগড়। কেন্দ্রীয় স্বর্ণ চতুষ্টয় প্রকল্পে ডানকুনি থেকে বরাকর পর্যন্ত প্রায় গোটা রাস্তা চার লেনের হয়ে গেলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার দু’লেন থেকে গিয়েছে। আর নিত্য দিন সেই ফাঁসেই যানজটে জেরবার গাড়ি-বাস-ট্রাক।
পানাগড়ে বাইপাস তৈরির জন্য মাপজোকের কাজ তখন সদ্য শুরু হয়েছে। ছবি: বিকাশ মশান
সমস্যা মেটাতে বাইপাস নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় সড়ক নির্মাণ ও সম্প্রসারণের জন্য তাঁরা নিজস্ব আইনে জমি অধিগ্রহণ করেন। তা রাজ্য সরকারের জমি অধিগ্রহণ আইনের আওতায় পড়ে না। এই দফায় ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার বারোয়া আড্ডা থেকে বর্ধমানের পানাগড় পর্যন্ত ১১৪ কিলোমিটার রাস্তা ছয় লেন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ হয়েছে ১৬৬৫ কোটি টাকা। প্রায় ১৯৩ একর জমি অধিগৃহীত হবে। তার মধ্যেই পানাগড় বাইপাসের প্রায় ৮ কিলোমিটার রয়েছে। সংস্থার তরফে বর্ধমানে জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) উৎপল বিশ্বাস।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ আগেই খবরের কাগজে দু’বার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কোন কোন মৌজায় কত জমি অধিগ্রহণ হবে। সেই অনুযায়ী কাঁকসা, পন্ডালি, ধরলা ও সোঁয়াই মৌজায় জমি নেওয়ার কথা। বৃহস্পতিবার দুপুরে পন্ডালি এলাকায় জমির মাপজোক করতে গিয়েছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসকের দফতরের কর্মীরা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, সেই আশঙ্কায় সঙ্গে গিয়েছিল পুলিশও। প্রায় শ’খানেক চাষি বুকে কালো ব্যাজ লাগিয়ে ঘটনাস্থলে এসে কাজে বাধা দেন। তাঁদের বক্তব্য, এ দিন হঠাৎই সরকারি কর্মীরা জমিতে নেমে পড়েন। অথচ জমির বিনিময়ে তাঁরা কী ক্ষতিপূরণ পাবেন, তা নিয়ে কেউ তাঁদের সঙ্গে কথা বলেননি। সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে তবেই তাঁরা কাউকে জমিতে নামতে দেবেন।
চাষিদের অন্যতম কিষাণ কর্মকার ক্ষুব্ধ, “জমি আমাদের। অথচ আমাদের না জানিয়েই মাপজোক শুরু হয়ে গেল! সরকারি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ দেখে আমরা আরও তাজ্জব। এ ভাবে না জানিয়ে এলে ফের বাধা দেব। পুলিশ এনে লাভ হবে না।” সোঁয়াই মৌজায় প্রায় ৪ বিঘা জমির মালিক নীলাদ্রি মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমরাও চাই, বাইপাস হোক। কিন্তু তার আগে জমির দর নিয়ে প্রশাসন আমাদের সঙ্গে আলোচনা করুক। ক্ষতিপূরণ বাবদ অন্য সুবিধা কী সুযোগ-সুবিধা পাব তা জানাক।” বেশ কিছু ক্ষণ বাগ্বিতণ্ডার পরে সরকারি অফিসারেরা ফিরতে বাধ্য হন।
সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রাম, সরকার পরিবর্তনের আগে প্রতিটি ক্ষেত্রে যারা জমি আন্দোলন সমর্থন করেছে, সেই তৃণমূল কিন্তু এর পিছনে ‘সিপিএমের ভূত’ দেখছে। প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য দেবদাস বক্সীর দাবি, “সিপিএমই কয়েক জন চাষিকে উসকে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডল পাল্টা দাবি করেন, “এটা বর্তমান রাজ্য সরকারের জমি-নীতির কুফল। বাইপাসের জন্য যে জমি লাগবে তার সিংহ ভাগই বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পানাগড় শিল্পতালুক গড়ার সময়ে চাষিদের বুঝিয়ে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। আর সামান্য কিছু জমি লাগবে। সেটুকু নিতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ঘাড়ে অহেতুক দোষ চাপিয়ে লাভ হবে না।” বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা অবশ্য বলেন, “প্রত্যেক চাষি ও জমিমালিকের সঙ্গে কথা বলেই দাম ঠিক করা হবে। বাজারের সর্বোচ্চ দাম পাবেন চাষিরা। জোর করে এক ছটাক জমিও নেওয়া হবে না। চাষিরা অহেতুক ভয় পেয়ে কাজে বাধা দিয়েছেন। আশা করি, সব ঠিক হয়ে যাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.