রাসমেলার সঙ্গে জিলিপিও যেন পৌঁছে গেল দুশো বছরে। ওই মিষ্টি রসালো খাবারের লড়াই শুরু হয়েছে কোচবিহার মেলা চত্বরে। এক ঝলকে তাই মনে হতে পারে এটা রসেরও মেলা। রাস মেলার সূত্রপাত হয় ১৮১২ সালে মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের আমলে। ভেটাগুড়িতে প্রথম মেলার আয়োজন হয়। শুরুতে জিলিপির এতটা জনপ্রিয়তা ছিল কিনা সে বিষয়ে গবেষকরা স্পষ্ট কিছু জানাতে পারছেন না। কিন্তু তাঁরাও স্বীকার করছেন রাসমেলার সঙ্গে জিলিপির এই সম্পর্ক অনেক পুরনো। হয়তো মেলার শুরু থেকে ওই মিষ্টি খাবার আসর জমিয়েছে। কোচবিহারের ইতিহাস গবেষক নৃপেন পালের বয়স ৭০ ছুঁয়েছে। তিনি বলেন, “ঠিক কবে থেকে রাসমেলায় জিলিপির চল হয়েছে সেই বিষয়ে স্পষ্ট কোনও তথ্য মেলেনি। তবে বাবার কাছে শুনেছি ১৯৩২ সালে উনি প্রথমবার মেলায় গিয়ে জিলিপি দেখেছেন। আমি ছোটবেলা থেকে মেলায় জিলিপির রমরমা দেখছি।” কোচবিহার রাজ পরিবারের দুয়ারবক্সি অমিয় দেববক্সি বলেন, “আমার ৮২ বছর বয়স চলছে। ছোটবোলা থেকে মেলায় জিলিপি দেখছি। তবে ভেটাগুড়ি, বাবুরহাটের মত এলাকা ভিত্তিক নামকরণ অনেক পরে হয়েছে।” রাসমেলায় দোকান খুলে বসা জিলিপি ব্যবসায়ীরাও জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরে মেলায় আসছেন তাঁরা। |
এবার মেলার ২০০ বছর পূর্তিতে দুশো লেখা জিলিপি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভেটাগুড়ির ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ নন্দী বলেন, “দাদুর সময় থেকে মেলায় আসছি। আশি বছরের বেশি তো হবেই। এ বারও দোকান খুলেছি। প্রতি বছরের মতো চমক থাকছে।” কী সেই চমক! অন্য এক বিক্রেতা জানান, শুরুতে অল্প করে হলেও এ বার ২০০ লেখা বড় আকারের জিলিপি তৈরি করবেন তাঁরা। ৫০ গ্রাম ওজনের দাম হবে ৫ টাকা। জিলিপি এলাকাগত বিভিন্ন নামে পরিচিত রাসমেলায়। যেমন, ভেটাগুড়ির জিলিপি, বাবুরহাটের জিলিপি, পুন্ডিবাড়ির জিলিপি, নীলকুঠীর জিলিপি ছাড়াও দেওয়ানহাটের জিলিপি। সাধারণ পূণ্যার্থী তো বটেই, নানা রাজনৈতিক দলের নেতা, আমলা, পুলিশ কর্তা প্রত্যেকে যেন জিলিপির প্রেমে বিভোর। নাটাবাড়ির বিধায়ক কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ মেলা উদ্বোধনের পরে জিলিপিতে মজলেন। তিনি বলেন, “মেলায় গেলে জিলিপি খাব না এটা হয় নাকি! প্রথম দিনেই গোটা দশেক খেয়েছি।” কী বলছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ? তাঁর কথায়, “৩০ নভেম্বর মেলায় যাব। ওই দিন পরিচিত বন্ধুদের নিয়ে গরম জিলিপির আড্ডায় বসব।” অনেকেই আছেন ভাল জিলিপির জন্য রাস মেলার দিকে তাকিয়ে থাকেন। যেমন, কোচবিহারের চিকিৎসক কমলেশ সরকার। তিনি বলেন, “এবার মেলার প্রথম দিনেই বাড়িতে জিলিপি এনে খেয়েছি।” বুধবার দিনহাটা কলেজের শিক্ষক প্রদীপ সাহা মেলায় হাজির হন। তিনি বলেন, “প্রথম দিন ভিড়ের জন্য জিলিপি কেনার সুযোগ পাইনি। তাই এ দিন আগেভাগে চলে এসেছি।” পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “রাসমেলার জিলিপির স্বাদ অন্য রকম। তাই এ জিলিপির অন্য গুরুত্ব রয়েছে।” জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “এ বার জিলিপি চেখে দেখার ইচ্ছে আছে। |