এক রত্তি ছেলেটাকে চাদর মুড়ি দিয়ে বুকে চেপে ছিলেন তরুণীটি। হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে নার্স সকলকে বার বার বলছিলেন, “আপনাদের জন্যই ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছি। আমরা কৃতজ্ঞ।”
বাড়ি ফেরার পথে তখনও তাঁর চোখে যেন ঘোর লেগেছিল। মাস দুয়েক আগে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে তাঁর যমজ সন্তান জন্মায়। মেয়েটার ওজন ১ কিলোগ্রাম, ছেলেটা ৮৬০ গ্রাম। দু’দিনের মাথায় মেয়েটা মারা গেল। এরপর ছেলেটার কী হবে সেই আতঙ্কে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি পুরুলিয়া শহরের নামোপাড়া এলাকার বাসিন্দা শ্রাবণী সূত্রধর। শুধু কি কম ওজন! সেই সঙ্গে জন্ডিস। এ ছেলে কি বাঁচবে? প্রশ্নটা খচখচ করত মায়ের মনে। |
সঙ্কটজনক অবস্থায় থাকা ওই শিশুকে চার দিন পরে পুরুলিয়া হাসপাতালের নবজাত শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সুস্থ হয়ে সেই শিশু বুধবার মায়ের কোলে চেপে বাড়ি ফিরল। ওই পরিচর্যা কেন্দ্রের চিকিৎসক প্রদীপ কুমার ভগত বলেন, “জন্মের সময় শিশুটির ওজন খুব কম ছিল। এ জন্য সর্দি-কাশি সহ নানা সংক্রমণের ভয় থাকে। শিশুটি আবার জন্ডিসেও আক্রান্ত হয়েছিল। প্রথমে কয়েক দিন আমরা ওকে টানা ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখি। তারপর ধীরে ধীরে শিশুটি সুস্থ হয়ে ওঠে।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ছুটি দেওয়ার সময়ে শিশুটির ওজন হয় ১ কিলো ৩৩৪ গ্রাম। জন্মানোর সময় ওর উচ্চতা ছিল ৩৫ সেন্টিমিটার, এখন ৩৮ সেন্টিমিটার। প্রদীপবাবু জানান, এই ওজনও স্বাভাবিকের থেকে কম। তবু বাড়িতে ঠিক মতো যত্ন করলে ধীরে ধীরে ও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ওই বিভাগের অন্য এক চিকিৎসক শিবশঙ্কর মাহাতো বলেন, সংক্রমন ঠেকাতে কী ভাবে যত্ন নিতে হবে, শিশুটির মাকে তা বুঝিয়ে দিয়েছি। নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিশুটিকে এখানে পরীক্ষার জন্য নিয়ে আসতে বলেছি।”
নানা জটিলতা নিয়ে জন্ম হওয়া সদ্যোজাতদের চিকিৎসার জন্যই পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে এই বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্র পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে এক সময় চালু হয়েছিল। সেই থেকে এমন অনেক সঙ্কটজনক শিশুকে সুস্থ করে তাদের বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন এখানকার চিকিৎসকেরা। তবে এই ঘটনাটি সেই ভিড়েও অন্যতম। কারণ, চিকিৎসকদের কথায়, এখানে এতদিন পর্যন্ত ৯০০ গ্রাম ওজনের শিশুকে সুস্থ করা গিয়েছে। এর আগে এত কম ওজনের শিশুকে বাঁচানোর নজির নেই। হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় শ্রাবণীদেবী বলছিলেন, চিকিতৎকদের ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। ওঁদের চেষ্টাতেই আমার ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারছি।”
|