অবশেষে তৈরি হতে চলেছে ঝালদার মামুডি গ্রামে যাওয়ার রাস্তা। বুধবার পুরুলিয়ার জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি জানান, রাস্তা তৈরির প্রকল্পে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের অনুমোদন এসেছে মঙ্গলবার। কাজও শীঘ্রই শুরু হবে।
অযোধ্যা পাহাড়ের উত্তর-পশ্চিম ঢালে এই রাস্তা গড়ার দাবি দীর্ঘ দিনের। রাস্তাটা হলে ঝালদা ২ ব্লকের মামুডি তো বটেই, উপকৃত হবেন লাগোয়া লেওয়া, বাঁধডি-সহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা। মামুডি থেকে মুরগুমা পর্যন্ত ওই রাস্তার দশা এবং সে জন্য এলাকাবাসীর দুর্ভোগ নিয়ে সোমবারই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য়। নড়াচড়া শুরু হয় প্রশাসনিক স্তরে। ৩ ডিসেম্বর পুরুলিয়ায় যাওয়ার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ঘটনাচক্রে তার ঠিক আগেই প্রায় বছর দু’য়েক প্রশাসনের ঘরে পড়ে থাকা ওই রাস্তার প্রকল্প ছাড়পত্র পেল।
ঝালদা-২ ব্লকের বিডিও অভিজিৎ সাহা বুধবার মামুডি গ্রামে যান। প্রশাসনের গাড়ি গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছয়নি। অনেকটা পথ মোটরবাইকে যেতে হয় বিডিও-কে। গ্রামে পৌঁছতে বিডিও-কে ঘিরে ধরেন এলাকাবাসী।
লক্ষ্মীশ্বর মুর্মু, ফলারি মুর্মু, সহরই মুর্মু, চাতুর হেমব্রম, রজনী মুর্মুরা বলতে থাকেন, “দেখুন স্যার, কী অবস্থায় আমরা বছরের পরে বছর বাস করছি। রাস্তা নেই, জল নেই।” ঘটনা হল, মামুডি থেকে মুরগুমা যেতে হলে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পাথুরে খন্দ-পথে পেরোতে হয়। রাস্তার একটা অংশ প্রকৃত পক্ষে পাহাড় থেকে জল নামার নালা! বর্ষাকালে খরস্রোতা ঐ নালা পেরোতে ভীষণ অসুবিধায় পড়তে হয় গ্রামবাসীদের। রাস্তার অনেকটা জঙ্গল এলাকায় বলে অন্ধকার নামলে সেখানে হাতির উপদ্রব। তার উপরে বিদ্যুৎ নেই। অথচ মামুডি থে কে অযোধ্যা পাহাড় হিলটপ ঘুরে বিকল্প রাস্তায় বেগুনকোদর পৌঁছনো প্রায় ৩৫-৪০ কিলোমিটারের ধাক্কা। ওই রাস্তা দিয়ে ২ টাকা কিলো দরের চাল আনার জন্য মুরগুমা গেলে রাস্তার দুর্দশার জন্য চাল তুলে গ্রামে ফিরতে কার্যত গোটা দিন লেগে যায় গ্রামবাসীর। |
সংশ্লিষ্ট বেগুনকোদর গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের প্রধান অজয় কর্মকার জানাচ্ছেন, তাঁরা পঞ্চায়েতের তরফে যখন-যেমন পেরেছেন, ওই পাহাড়ি খন্দ-পথে মোরাম ফেলেছেন। তবে পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় রাস্তা-সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে পারেননি। তাঁর ক্ষোভ, এই অবস্থায় গ্রামবাসীর সহায় হতে পারত ‘রেশন এক্সপ্রেস’। প্রশাসনের এই প্রকল্পে ভাবা হয়েছিল, গ্রামের পথে যে পর্যন্ত গাড়ি যায়, তার পরে ৩ কিলোমিটার রাস্তা (প্রস্তাবিত খরচ প্রায় ১ কোটি ১৯ লক্ষ) তৈরি হবে। পাহাড়ি নালার (সাতনালা) উপরে হবে ছোট সেতু (প্রস্তাবিত খরচ ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার)। গ্রামেই পৌঁছে যাবে রেশনের মাল। কিন্তু পর-পর দু’টি অর্থবর্ষে (২০১১-১২, ১২-১৩) ব্লক থেকে ওই রাস্তা এবং পাহাড়ি নালার উপরে কালভার্ট তৈরির প্রকল্প পাঠানো হলেও অনুমোদন মেলেনি পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের। এ দিন পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, “বিডিও-কে বললাম, “দেখুন, কী দুর্দশার মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। উনি আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন।” ঝালদা ২ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি ফণীভূষণ কুমার বলেন, “রাস্তা এবং পাহাড়ি নালার উপরে সেতু হলে ওই এলাকার আর্থ-সামাজিক চেহারাটাই বদলে যাবে।” বিডিও অভিজিৎ সাহা বলেন, “গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে এসেছি। খুবই খারাপ অবস্থা ওখানে।”
|