তখন স্কুল পাশ করে সবে কলেজে ঢুকেছি। এক মফস্সল গ্রামে থাকি। ইতিমধ্যে পড়ে ফেলেছি ভয়ঙ্কর সুন্দর, এবং সবে তখন নীরার প্রেমে পড়তে শুরু করেছি। কিন্তু কলকাতার কোনও নামী লেখককে চিঠি লিখে এই অজগাঁয়ে বসে তার উত্তর পাব, এমন দুঃসাহস নেই। তবু এক দিন লিখে ফেললাম। কিছু দিন পর লেখকের নিজের হাতে লেখা উত্তর পেয়ে আমি তো অভিভূত।
“প্রীতিভাজনেষু,
তোমার সুন্দর চিঠিটি পেয়ে খুব খুশী হয়েছিলাম। যথা সময়ে উত্তর দিতে পারিনি, এ জন্য ক্ষমা করে দিও। তোমার ভাষা খুব সুন্দর ও আন্তরিকতাপূর্ণ। আশা করি, তুমি এক দিন নিজেই খুব বড় লেখক হবে। শুভেচ্ছা জানাই।”
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ১৬.৫.৮১
এক বার কবি বিদেশে থাকায় তাঁর হয়ে স্বাতী বউদি উত্তর দিলেন।
“কি সুন্দর চিঠি লিখেছ তুমি,আর তোমার হাতের লেখাটিও ভারী সুন্দর। আমার চোখের সামনে তোমার গ্রামের ছবিটি বড় স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠল তোমার চিঠি পড়তে পড়তে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিছু দিন ধরে ভারী ব্যস্ত ছিলেন তাঁর লেখা ইত্যাদি নিয়ে, তারপর বিদেশ গেছেন কিছু দিনের জন্য। তাই আমিই আপাতত তোমায় উত্তর দিলাম। রাগ করলে না তো? উনি ফিরলে তুমি আবার চিঠি দিও। আশা করি এ বার লেখকের নিজের হাতের লেখায় উত্তর পাবে। উনি হয়তো গত মাসের গোড়ার দিকে ফিরবেন। শুভেচ্ছা নিও। স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়।”
৩১ বছর ধরে এই চিঠি যত্ন করে রেখেছি। কবির সঙ্গে কোনও দিন দেখা হয়নি। হয়তো দেখা হবে সেই ‘চন্দনের বনে’।
সাধন দাস। ভৈরবটোলা, লবণচোয়া, মুর্শিদাবাদ
|
মৃণালকান্তি মাইতির ‘অবহেলিত থেকে গেলেন’ শীর্ষক পত্রে (১২-১১) উল্লিখিত বিশিষ্ট প্রবীণ জীবনী-লেখক ঋষিবাবুর পদবির বানান ‘দাশ’ নয়, ‘দাস’। ‘শেক্স্পীয়র’ গ্রন্থটির তৃতীয় মুদ্রণকাল ‘রথযাত্রা’ ১৩৯৩। অর্থাৎ ১৯৮৬ সাল, ১৯৮০ সাল নয়। এই প্রসঙ্গে আরও জানাই, ঋষি দাস মহাশয়ের লেখা অপর একটি উল্লেখযোগ্য জীবনীগ্রন্থের নাম ‘বার্নার্ড শ’ (চতুর্থ সংস্করণ ১৯৬০)। রোমাঁ রোলাঁর দুটি গ্রন্থ শ্রীদাস বাংলায় অনুবাদ করেছেন। প্রথমটির নাম ‘মহাত্মা গান্ধী’ (১৯৪৮)। দ্বিতীয়টি ‘রামকৃষ্ণের জীবন’ (১৯৪৯)।
বিমলেন্দু ঘোষ। কলকাতা-৬০
|
‘বিসর্জন’ নাটকে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলিদান প্রথার বিরুদ্ধে কথা বললেও বাস্তবে তা মোটেই প্রতিফলিত হয়নি। জনস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে বলির পরিসংখ্যান। বিশেষ করে পুরুলিয়া জেলায়। মনসাপুজোর সময় সমস্ত জেলা জুড়ে লক্ষাধিক হাঁস কিংবা মোরগ বলি দেওয়া হয়। তার চেয়েও মর্মন্তুদ দুর্গাপুজোয় ছাগল কিংবা কাড়া বলির (পুরুষ মহিষ) ছবি। চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী এ বছরও দুর্গাপুজোয় কাড়া বলি দেওয়া হয়েছে পুরুলিয়া জেলার কাশীপুর ও বাঘাডোবা গ্রামে।
আর কালীপুজোর বলি যেন জেলায় রক্তস্রোতের ধারাপ্রবাহ। সমস্ত জেলা জুড়ে রাতভর চলে বলির বাজনা। কয়েক হাজার ছাগশিশুর মর্মভেদী চিৎকারে চলে রক্তের উৎসব। একসঙ্গে দুটো-তিনটে-চারটে পর্যন্ত বলি দেওয়া হয় ছাগশিশুর। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষ ছাগশিশু নিয়ে লাইন দিয়ে অপেক্ষা করেন বলির জন্য। বিরামহীন বলি চলে পরদিন সন্ধে পর্যন্ত। মৌতোড়ে বলির পরিসংখ্যান গিয়ে দাঁড়ায় দশ হাজার কিংবা তারও বেশি। চার জন ঘাতক বিকট চিৎকারে দু’ঘণ্টার পালা করে বলি দিয়ে যান একের পর এক। |
রক্তমাখা ধড় বয়ে নিয়ে যান মানতকারীরা। গলা-সহ কাটা মাথাগুলো প্রাপ্য ঘাতক, পুরোহিত, পুজো কমিটির। ডাঁই হয়ে জমতে থাকে কাটা মাথা। ঠিকরে পড়া চোখ, বেরিয়ে আসা জিভ, রক্তের স্রোতে পূর্ণ মেলা প্রাঙ্গণ। গোটা প্রাঙ্গণ জুড়ে ছাগশিশুর মর্মন্তুদ ত্রাহিরব, পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ, ভক্তের উল্লাস।
স্থানীয় মানুষের কথা অনুযায়ী এই বছর মৌতোড়ে কাড়া বলি হয়েছে তিরিশটা। এখনও কী করে ঘটে এই ভয়ঙ্কর ঘটনা? ভয়-ভক্তি-শ্রদ্ধায় কেউ জবাব দিতে সাহস করেনি। শাস্ত্রে নাকি রয়েছে ‘বলিংগৃহ্ন দেবী পাশুরক্তং সমাংসকম’। এ কি তারই উল্টো পরিভাষা? অশোক বা গৌতম বুদ্ধের কলিঙ্গদেশে কে-ই বা দেবে এর জবাব!
শ্রমিক সেন। আদ্রা, পুরুলিয়া |