সম্পাদকীয় ১...
মহারাষ্ট্র যাহা পারিল
হারাষ্ট্র যাহা পারে, বাংলা পারে না। বালাসাহেব ঠাকরের মৃত্যুর পর মুম্বই শহর অঘোষিত বন্ধ-এর চেহারা লওয়ায় দুই তরুণী ফেসবুক-এ প্রশ্ন তোলায় পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তাঁহাদের গ্রেফতার করে এবং ম্যাজিস্ট্রেট ১৫ হাজার টাকার ব্যক্তিগত জামিনের বিনিময়ে তাঁহাদের মুক্তি দেন। দেশময় তীব্র প্রতিবাদ ঘনাইয়া ওঠে। চাপে পড়িয়া মহারাষ্ট্র সরকার দোষী পুলিশ অফিসারদের সাসপেন্ড করে, ম্যাজিস্ট্রেটকে বদলি। কলিকাতায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্র একই ভাবে ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর সম্পর্কে ব্যঙ্গচিত্র প্রচার করায় তাঁহাকে পুলিশ সেই তথ্যপ্রযুক্তি আইনেই গ্রেফতার করে। এই ঘটনা লইয়াও দেশময় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কিন্তু অম্বিকেশবাবু জামিনে মুক্তি পাইলেও সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের কোনও শাস্তি হয় নাই। মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ সত্ত্বেও কয়েক মাস যাবৎ নিগৃহীত ও অসম্মানিত শিক্ষককে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয় নাই। মহারাষ্ট্রের পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ সরকার নাগরিকের মানবাধিকার লঙ্ঘনে লিপ্ত পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটকে সপ্তাহকালের মধ্যেই শাস্তি দিয়াছে। পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার পুলিশের শাস্তির এবং তাহাদের হাতে নির্যাতিতের ক্ষতিপূরণের সুপারিশকে ছেঁড়া কাগজে পরিণত করিয়াছে। মহারাষ্ট্র প্রশাসন গত কাল যাহা করিয়াছে, পশ্চিমবঙ্গ আগামী মাসেও তাহা করিতে পারিবে বলিয়া ভরসা নাই।
ভরসা নাই, কেননা প্রশাসনের মানসিকতা বা আচরণ সেই ভরসা জাগায় না। অতিরিক্ত স্পর্শকাতর কর্তাব্যক্তিরা তো শিক্ষকের ব্যঙ্গচিত্র প্রচারকে ‘হত্যার ষড়যন্ত্র’ পর্যন্ত আখ্যা দিতেও দ্বিধা করেন নাই। প্রশাসনের এই আচরণের ফলেই অম্বিকেশবাবুর নিগ্রহকারী বাহুবলী এবং অত্যুৎসাহী পুলিশ অফিসারদের মনোবল তুঙ্গে উঠিয়াছে। সেই অটুট মনোবল নিশ্চয় পরবর্তী কালে অনুরূপ আরও অনেক সংশয়ক্লিষ্ট নাগরিকের প্রতিবাদ, বিরুদ্ধতা ও আপত্তির কণ্ঠরোধে সহায়ক হইবে। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি, ‘প্রেস কাউন্সিল’-এর সভাপতি মার্কণ্ডেয় কাট্জু তাই মহারাষ্ট্রের দুই তরুণীর মানবাধিকার রক্ষায় ব্রতী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের সরকারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার সমালোচনা করিতেও ছাড়েন নাই। পুলিশ যে প্রায়শ রাজনৈতিক নিয়োগকর্তাদের খুশি করিতে নাগরিকদের হেনস্থা-লাঞ্ছনা করে, ইহা অবগত আছেন বলিয়াই বিচারপতি কাট্জু নাত্সি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য তৈরি ন্যুরেমবার্গ ট্রাইবুনালের প্রসঙ্গ টানিয়া বলিয়াছেন, রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক উপরওয়ালা আইনবিরুদ্ধ নির্দেশ দিলে তাহা পালন করা নয়, অগ্রাহ্য করাই কর্তব্য, অন্যথায় সেই পুলিশকর্মীরও কঠোর সাজা হওয়া দরকার। দুর্ভাগ্যবশত, এ দেশে বিপরীত ঐতিহ্যটিই প্রতিষ্ঠিত। শাসনক্ষমতায় পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে পুলিশ নূতন শাসকের অনুগ্রহ পাইতে আইন ও শুভবুদ্ধির সীমানা লঙ্ঘন করিয়া শাসকের অভিপ্রায় চরিতার্থ করিতে প্রতিবাদীর কণ্ঠরোধে ইতস্তত করে না।
অম্বিকেশ মহাপাত্ররা তাই সরকারের ‘সন্দেহভাজন’দের তালিকাতেই থাকিয়া যান। আর্থিক ক্ষতিপূরণ মেলা দূরস্থান, নিগ্রহকারীকে কৃতকর্মের দায়ে দণ্ডিত হইতে দেখার তুষ্টিও তাঁহাদের মেলে না। মহারাষ্ট্রে শিবসেনার মতো একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও মরাঠা প্রাদেশিকতাপন্থী সংগঠন রহিয়াছে, যাহার স্বেচ্ছাসেবকরা মুসলিম, বিহারি, বাঙালি, দক্ষিণী প্রভৃতি জনগোষ্ঠীকে প্রবল সামাজিক চাপে রাখিয়া জঙ্গি আত্মপ্রতিষ্ঠার নিশান ওড়ায়। বঙ্গীয় সমাজে তুল্য কোনও সংগঠন নাই বটে, কিন্তু দলতন্ত্রের সৈনিকরা অতীতেও গ্রামে-শহরে অনুরূপ অসহিষ্ণু জঙ্গিপনার পতাকা উড়াইয়াছে, বর্তমানেও উড়াইতেছে। পতাকা বদলাইয়াছে, হার্মাদ ভৈরব হইয়াছে, বাস্তব বদলায় নাই। পুলিশ প্রশাসন, সরকারি কর্মী, ছাত্রসমাজ সর্বত্রই দলীয় আনুগত্য কায়েম করিতে হুমকি ও বাহুবলের আশ্রয় লওয়া হইতেছে। একক ব্যক্তি-নাগরিকের বাক্স্বাধীনতা এই ক্ষমতা-আশ্রিত যূথবদ্ধতার সামনে নিতান্তই অসহায়, বিশেষত সেই যূথ যখন চক্রান্তের তত্ত্বে বিশ্বাসী নেতৃত্বের দ্বারা অনবরত তাড়িত হইতেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.