|
|
|
|
|
|
কুবের উবাচ |
রবি বন্দ্যোপাধ্যায় (৪২) স্ত্রী অনামিকা (৩৬) মা (৬৫)
• কর্তা বেসরকারি সংস্থার কর্মী • কাজের সূত্রে থাকেন দুর্গাপুরে, ভাড়া বাড়িতে
• বাড়ি আসেন সপ্তাহে এক বার
•
পরিবার থাকে কলকাতায় • স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা • দু’জনেরই লক্ষ্য সচ্ছল অবসর |
রবি
নিট মাস-মাইনে ২২,০০০ |
টাকা রাখেন (বছরে) |
• পিএফ
১৫,৮৭৬ |
• জীবন বিমা
১২,১০০ |
• বিমার মূল্য ২.২৫ লক্ষ |
• রেকারিং ডিপোজিট ৪,৮০০এমআইএস-এর সুদ থেকে পাওয়া |
• পরিবারের স্বাস্থ্য বিমা
১২,৫০০ |
• স্বাস্থ্য বিমা
৬,৭০০প্রত্যেকের বিমা মূল্য ১.৩০ লক্ষ |
সম্পদ |
• এনএসসি
৪৬,০০০ |
• এমআইএস
৬৫,০০০ |
• ব্যাঙ্কে গচ্ছিত
৫,০০০ |
মাসে খরচ |
• মাকে দেন
৩,০০০ |
• বাড়ি ভাড়া ৩,৬০০ |
• নিজস্ব খরচ
৩,০০০ |
• যাতায়াত
৮,০০ |
• পার্সোনাল লোনের কিস্তি
১,২০০ |
• অন্যান্য আত্মীয়কে দেন
৩,০০০ |
অনামিকা
নিট মাস-মাইনে
৭,৫০০ |
সম্পদ |
• টাকা রাখেন (বছরে)
রেকারিং ডিপোজিট
৭,৮০০ |
• এমআইএস-এর সুদ থেকে পাওয়া |
• এমআইএস
৭৫,০০০ |
মাসে খরচ |
• বাবা-মাকে দেন
৩,০০০ |
• নিজস্ব খরচ
৫০০ |
• যাতায়াত
৫০০ |
• অন্যান্য আত্মীয়কে দেন
৬০০ |
|
|
|
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
সীমিত সামর্থ্যের সুষম বণ্টন। রবি এবং অনামিকার আয়, ব্যয় এবং সঞ্চয়কে এক কথায় এ ভাবেই ব্যাখ্যা করব আমি। কারণ, তাঁরা নিজেদের রোজগার বুঝে-শুনে খরচ করেন। বাবা-মা তো বটেই, অন্য আত্মীয়দের হাতেও টাকা তুলে দেন। সেই হিসেবে দু’জনের আয়-ব্যয়ের অনুপাত যথেষ্ট ভাল। নিজেদের সঞ্চয়ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন টাকা জমানোর। এখন দেখার যে, সেই লগ্নি দিয়ে রবি বা অনামিকা নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারবেন কি না। সচ্ছল অবসর নিশ্চিত করতে সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে আর কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে তাঁদের?
তিন-এ লক্ষ্য
আমার মতে, টাকা জমানোর ক্ষেত্রে বন্দ্যোপাধ্যায় দম্পতির মূলত তিনটি লক্ষ্য থাকা উচিত
(১) বিমার সুরক্ষা
(২) সচ্ছল অবসর
(৩) পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য বিমা
হিসেব করে দেখলাম, প্রতি মাসে সমস্ত খরচ এবং বিমার প্রিমিয়াম মেটানোর পর রবির হাতে থাকে ৫,৮০০ টাকা। আর অনামিকার কাছে ২,৯০০। কী ভাবে ওই টাকা রাখলে, তাঁদের সব থেকে সুবিধা হবে, এখানে তা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব আমরা। |
লক্ষ্য: কর্তার অবর্তমানেও পরিবারের সুরক্ষা
উপায়: জীবন বিমার কভারেজ বৃদ্ধি
রবির ২.২৫ লক্ষ টাকার এনডাওমেন্ট পলিসি রয়েছে। ভাল কথা। কিন্তু ২০ বছরের মেয়াদ শেষে ওই বিমা থেকে ৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি পাবেন তিনি। এই অর্থ হয়তো তাঁর অবসর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। কিন্তু কোনও অঘটন ঘটলে, বিমার অঙ্ক হিসেবে তা খুবই কম। শুধু তা-ই নয়, যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে বছর দশেক পর পাঁচ লক্ষ টাকা হয়তো সে ভাবে চোখেই দেখতে পাওয়া যাবে না। তাই আমার মতে, রবির উচিত অন্তত ২৫ লক্ষ টাকার একটি টার্ম পলিসি (জটিল রোগের চিকিৎসার সুবিধা-সহ) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করে ফেলা। মাসে যার প্রিমিয়াম দাঁড়াবে প্রায় ১,৫০০ টাকা। রবির এখনও কোনও সন্তান নেই। তাই সে দিক থেকে ভেবে দেখলে সন্তানের কথা চিন্তা করে আলাদা ভাবে বিমা করার প্রয়োজন অন্তত এই মুহূর্তে নেই। |
লক্ষ্য: চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত টাকা তুলে রাখা
উপায়: স্বাস্থ্য বিমায় আরও লগ্নি
বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে প্রত্যেকের স্বাস্থ্য বিমা রয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আগামী দিনে ১.৩০ লক্ষ টাকাও কিন্তু চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে জটিল রোগের চিকিৎসায়। তাই ফ্যামিলি-ফ্লোটার পলিসিতে (যেখানে বিমার টাকা পরিবারের যে-কেউ যে- কোনও অনুপাতে ব্যবহার করতে পারবেন) প্রত্যকের অন্তত তিন লক্ষ টাকার বিমা করানো উচিত। এই বিমা-প্রকল্প অবশ্যই ক্যাশলেস হওয়া উচিত। যাতে চিকিৎসার সময়ে টাকা জোগাড়ের জন্য অযথা দৌড়োদৌড়ি করতে না-হয়। তবে বিমা করার আগে সমস্ত নিয়মকানুন ও সুযোগ-সুবিধা অবশ্যই খুঁটিয়ে পড়ে দেখবেন। |
লক্ষ্য: সচ্ছল অবসর
উপায় ১: এনএসসি-র ৪৬,০০০ টাকা মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত ধরে রাখুন। যদি ব্যক্তিগত ঋণ তখনও চলে, তা হলে মেয়াদ শেষে হাতে পাওয়া টাকা দিয়ে আগে তা শোধ করে দিন।
উপায় ২: সম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে ডাকঘর মাসিক কিস্তি খুবই ভাল। তাই এই ব্যবস্থা চালিয়ে যান। পারলে সেখানে লগ্নি বাড়ান। এমনকী যে-সুদ রেকারিং ডিপোজিটে জমা পড়ছে, চাইলে তা-ও মূল কিস্তির সঙ্গে যোগ করে দিতে পারেন।
উপায় ৩: অফিসের পিএফে বাধ্যতামূলক ভাবে টাকা জমছে ভাল কথা। কিন্তু তা ছাড়াও আলাদা করে একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট অবশ্যই খুলুন। এতে করছাড়ের সুবিধা আছে। তা ছাড়া, ১৫ বছর ধরে এই তহবিলে দু’জনে যদি মাসে এক হাজার টাকা করেও জমান, তা হলে
অবসরের সময়ে মোটা টাকা হাতে আসবে।
উপায় ৪: দু’জনের সঞ্চয়ের প্রায় পুরোটাই কোনও না-কোনও সুরক্ষিত প্রকল্পে রয়েছে। কিন্তু ভাল রিটার্ন পেতে হলে, একটু ঝুঁকি নিতেই হবে আপনাকে। সুতরাং একটু সাহসী হয়ে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানে (এসআইপি) লগ্নি করুন। তা হলে আগামী দিনে কষ্টে জমানো টাকায় অন্তত আরও একটু বেশি রিটার্নের মুখ দেখতে পাবেন।
মূলত দু’ভাবে এটা করতে পারেন
(১) প্রতি মাসে যে টাকা রবির হাতে থাকছে, তার মধ্যে অন্তত ২,০০০ টাকা এসআইপি-তে লগ্নি করুন। শুধু দেখবেন, এই লগ্নি যেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেওয়া থাকে। আমার ধারণা, তাতে ভাল অঙ্কের টাকার মুখ দেখতে পারবেন রবি। বাকি টাকা বরং অসময়ের জন্য ব্যাঙ্কে তোলা থাকুক।
(২) অনামিকার হাতে থাকা টাকার মধ্যে ১,০০০ টাকা জমানোর সুযোগ রয়েছে গোল্ড ফান্ডে। তাতেও কিন্তু ভাল রিটার্ন মেলার যথেষ্ট সম্ভাবনা। বাকি টাকা ব্যাঙ্কে রেকারিং ডিপোজিটে রাখতে পারেন।
|
অনুরোধ মেনে পরিবারের সকলের নাম পরিবর্তিত |
|
|
|
|
|