নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বাংলার জন্য প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর ঘোষিত রেল-প্রকল্পগুলির অধিকাংশই বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করেন নতুন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। যে কারণে বাস্তবতা যাচাইয়ের জন্য ওই সব প্রকল্প-প্রস্তাব তিনি রেল বোর্ডের কাছে পাঠাবেন বলে সোমবার জানিয়ে দিলেন অধীরবাবু।
এবং তাঁর ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রেল-কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করা রাজ্যের অনেক রেল-প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এ বার কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। যদিও অধীরবাবু এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন। এ দিন কাঁচরাপাড়ায় পূর্ব রেলের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি চাই, বাংলার কোনও প্রকল্প যেন কেন্দ্র-রাজ্য চাপান-উতোরে বন্ধ হয়ে না যায়। তবে অনেক প্রকল্পই বাস্তবসম্মত নয়। কোনগুলো বাস্তবসম্মত, রেল বোর্ড তা খতিয়ে দেখবে। আমি নতুন। আমার পক্ষে এ সব বলা সম্ভব নয়।”
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অতীতে কেন্দ্রে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন পর পর দু’টি রেল বাজেটে রাজ্যের স্বার্থে বেশ কিছু প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের উপর থেকে মমতার দল তৃণমূল সমর্থন তুলে নেওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছে, প্রকল্পগুলো আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না। এ দিন অধীরবাবুও বলেন, “রেলমন্ত্রীর কাছে বাংলার প্রকল্প বলে কিছু নেই। সারা ভারতেই কাজ হচ্ছে।” তবে রেল প্রতিমন্ত্রী এ-ও জানাতে ভোলেননি যে, “রাজ্যকে বাদ দিয়ে কোনও উন্নয়ন সম্ভব নয়। বেশি প্রকল্প ঘোষণা হয়েছে বলেই আমি নিন্দা করছি, তা-ও নয়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই।” |
সোমবার কাঁচরাপাড়ায়।-নিজস্ব চিত্র |
কিন্তু এ দিন অধীরবাবুর মন্তব্য শুনে পূর্ব রেল, দক্ষিণ-পূর্ব রেল এবং মেট্রোরেলের কর্তারা কিছুটা শঙ্কিত। তাঁদের একাংশের বক্তব্য: রেল প্রতিমন্ত্রীর এই কথায় কাঁচরাপাড়ার রেল-প্রকল্প, মেট্রোর সম্প্রসারণ (দমদম-ব্যারাকপুর, এয়ারপোর্ট-বারাসত), বিভিন্ন স্টেশনে মাল্টিপ্লেক্স, নার্সিং ইনস্টিটিউট, মালগাড়ির জন্য নির্দিষ্ট লাইন কিংবা বনগাঁয় রেল স্টেডিয়াম তৈরির মতো রাজ্যে বিবিধ পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ খানিকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। বস্তুত কয়েকটি প্রকল্প রূপায়ণের পথে মূল বাধা যে জমির সমস্যা, অধীরবাবু এ দিন নিজেই তা জানিয়েছেন। যেমন?
রেল প্রতিমন্ত্রীর দাবি: ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু ঘোষিত প্রকল্প জমির জন্য আটকে রয়েছে। আর জমির জট কাটাতে তিনি রাজ্যকেই উদ্যোগী হতে বলবেন। “প্রকল্পগুলো রাজ্যের। তাই রাজ্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমরা ওদের কাছেই দরবার করব।” মন্তব্য অধীরবাবুর।
প্রসঙ্গত, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন জমি-সমস্যার সুরাহা হিসেবে মমতার প্রতিশ্রুতি ছিল, রেল-প্রকল্পে জমি দিলে বিনিময়ে রেলে চাকরি মিলবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সে প্রতিশ্রুতি পূরণ যে কার্যত অসম্ভব, এ দিন অধীরবাবু তা ফের পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, “জমির বদলে এত লোককে চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। এই নীতি মেনে চললে এই মুহূর্তে পূর্ব রেলে দু’লক্ষ লোককে চাকরি দিতে হবে!” এ বিষয়ে প্রয়োজনে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন অধীরবাবু। যা শুনে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের প্রতিক্রিয়া, “উনি (অধীরবাবু) বোধ হয় জানেন না, সনিয়া গাঁধীর অনুরোধে আইন সংশোধন করে উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলীতে আমি রেলের প্রকল্পে জমিদাতাদের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম।” |
আমি চাই, বাংলার কোনও প্রকল্প যেন কেন্দ্র-রাজ্য
চাপান-উতোরে বন্ধ হয়ে না যায়।
তবে অনেক প্রকল্পই বাস্তবসম্মত নয়। |
অধীর চৌধুরী
রেল প্রতিমন্ত্রী |
|
রেল প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের অবশ্য দাবি, রায়বরেলীর ওই প্রকল্পে ১৪০০ জন জমি দিয়েছিলেন। ‘বিশেষ কারণে’ তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৮ জনকে চাকরি দিয়েছে রেল।
এ দিন কাঁচরাপাড়া ওয়ার্কশপের দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার-সহ অনেক আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনেই পরিষেবা সম্পর্কে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করে অধীরবাবু বলেন, “প্রকল্প রূপায়ণের পাশাপাশি রেলের পরিষেবা উন্নত করতে হবে। যা রয়েছে, তা দিয়েই যাত্রীদের আরও ভাল পরিষেবা জোগানোর চেষ্টা চালাতে হবে।” অনুষ্ঠানে ১৩ জন প্রবীণ কর্মীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রত্যেককে একটি করে শাল ও ঘড়ি উপহার দেন রেল প্রতিমন্ত্রী।
|