পুকুর পাড়ে দোকান নির্মাণ করা নিয়ে বিতর্কের জেরে সিপিএমের এক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দোকান তৈরির কাজ বন্ধের নির্দেশ দিল ভূমি দফতর। রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনীষা ঘোষের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে পুকুরের পাড়ে দোকান তৈরির অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চ ও তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। তদন্ত করে প্রশাসন ওই নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (রঘুনাথপুর) দুলাল দাস বলেন, “রঘুনাথপুর ২ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তদন্তে গিয়েছিলেন। পুকুর পাড়ে ওই নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে তিনি রিপোর্ট দিয়েছেন। তাই ওই নির্মাণ বন্ধ রাখার জন্য বিএলএলআরও-র মাধ্যমে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।”
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের চেলিয়ামা গ্রামে গোবিন্দসায়র নামে পৈর্তৃক পুকুরের পাড়ে চারটি দোকান নির্মাণ শুরু করেছিলেন মনীষাদেবী। ভিত কাটার পরে দেওয়াল তোলার কাজ চলছিল। ওই নির্মাণ নিয়েই বিতর্ক। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতৃত্বে কিছু দিন আগে গ্রামের ৭০ জন বাসিন্দা গণস্বাক্ষর করে সংশ্লিষ্ট বিডিও থেকে জেলাশাসক এবং জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে অভিযোগ জানান। সম্প্রতি একই অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের নেতারাও। |
বাসিন্দাদের অভিযোগ, চেলিয়ামা মৌজার ১৯১৫ নম্বর প্লটে (হালদাগ নম্বর) মনীষাদেবী দোকান তৈরির কাজ শুরু করেছেন। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই জমি ভূমি দফতরের কাছে বাঁধের পাড় বা আইল হিসাবে নথিভূক্ত রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই জমির মিউটেশন ও কানভার্সন করে জমির চরিত্র বদল করা দরকার। তারপর জেলা প্রশাসনের অনুমতিক্রমে ওই জমিতে নির্মাণ করা সম্ভব।
কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা গোবর্ধন বাগদি, বিশ্বরূপ ঘোষ, বাবন বাগদিদের দাবি, “মনীষাদেবী সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করেই কাজ শুরু করেছিলেন। এ জন্য পুকুরের একাংশে মাটিও ফেলা হয়। যা সম্পূর্ণ নীতি বহির্ভূত।” বস্তুত ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাই প্রথম থেকে এ ব্যাপারে সরব হয়েছিল। দলের স্থানীয় নেত্রী গীতা মোদকের অভিযোগ, “পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হওয়ার সুবাদে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিধি ভেঙে অবৈধ নির্মাণ শুরু করেছেন মনীষাদেবী। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতিও নেনেনি তিনি। নিজের দলের ক্ষমতাসীন স্থানীয় পঞ্চায়েতের অনুমতি নিয়েই তিনি ওই কাজ শুরু করে করেন।”
মনীষাদেবীর দাবি, “জলাভূমি ভরাট করে মোটই নির্মাণ করছি না। পুকুর পাড় থেকে কিছুটা দূরে ডাঙা জায়গায় ব্যক্তিগত জমিতে দোকান তৈরি করছি। তার আগে স্থানীয় চেলিয়ামা পঞ্চায়েত থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েছি। ব্লক ভূমি দফতরেও মিউটেশনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। পুকুরের কোনও ক্ষতি করা হচ্ছে না। রাজনৈতিক কারণে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে।” চেলিয়ামা পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের সুনীল বাউরি বলেন, “মনীষাদেবী রায়তি জমি উল্লেখ করে নির্মাণ কাজের অনুমতি চেয়েছিলেন। অনেকেই পুকুরের পাড়ে নির্মাণ করেছেন। তাই মনীষাদেবীকে অনুমতি দেওয়া হয়।” |