|
|
|
|
ইংরেজিতে বক্তৃতা দিয়ে কার্টুনের জবাব অধীরের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কটাক্ষ করে কার্টুন এঁকেছিল কাঁচরাপাড়ার রেল বাঁচাও কমিটি। এই সংগঠনটি সম্পর্কে কোনও তথ্য এমনিতে না মিললেও ওই সব কার্টুনের চার পাশে লাগানো ছিল তৃণমূলের দলীয় পতাকা।
সেই কাঁচরাপাড়াতেই সোমবার রেলের অনুষ্ঠান করতে এসে ইংরেজিতে বক্তৃতা দিলেন রেল প্রতিমন্ত্রী! বোধহয় তাঁকে নিয়ে বিদ্রুপেরই পাল্টা জবাব দিলেন সুকৌশলে। তবে এ দিনের বক্তব্যে কোথাও সরাসরি তৃণমূল বা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং তাঁর ছেলে শুভ্রাংশুর নাম উল্লেখ করেননি অধীর। তির্যক ভাবে শুধু বলেছেন, “এত পুরনো দিনের ওয়ার্কশপ। তাকে ঘিরেই এই সুন্দর শহর। কিন্তু ঝোপঝাড়ে আগাছা বেড়ে গিয়েছে। ফলে মশা হচ্ছে। আমি অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছি, মশা তাড়াতে হবে।” |
|
মুখ্যমন্ত্রীর হোর্ডিংয়ের পাশে মুকুল রায়ের ছেলে
শুভ্রাংশুর হোর্ডিং।
সোমবার কাঁচরাপাড়ায় রণজিৎ নন্দীর ছবি। |
‘আগাছা’ বা ‘মশা’ বলতে অধীরবাবু কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি। পরে হাসতে হাসতে বলেন, “আমি কোনও ব্যক্তি বিশেষ বা দলকে কিছু বলিনি। আগাছার কথাই বলতে চেয়েছি।” কাঁচরাপাড়ায় বড় করে ফুলের বাগান করার কথা ভাবা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী।
অধীরবাবু প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেও তাঁর ছোড়া বিদ্রুপের তির যে ঠিক জায়গায় বিঁধেছে, তা তৃণমূলের শীর্ষ নেতা তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের মন্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। অধীরবাবুর বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সারা পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস সাফ হয়ে যাবে। ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই নির্বাচন। এমনিতেই কংগ্রেসের অবস্থা তলানিতে এসে ঠেকেছে। যে দলটির কোনও অস্তিত্ব নেই তাদের বক্তব্যের জবাব কী দেব? ওদের সিপিএমের প্রসাদ খেয়েই থাকতে হবে।”
ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের এই তরজার মধ্যে বিষয়টি সীমাবন্ধ থাকলে অবশ্য নিশ্চিন্ত হতে পারতেন কাঁচরাপাড়ার বাসিন্দারা। কিন্তু অভিযোগ, রবিবার রাতভর তাঁরা বোমার শব্দে কার্যত ঘুমোতে পারেননি। কাঁচরাপাড়া স্টেশন ও থানার মোড় এলাকার এক বাসিন্দা জানান, রাতে প্রচুর বোমা পড়েছে। সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এ রকম অবস্থা দেখিনি।
পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এই আশঙ্কায় সোমবার সকাল থেকেই অনুষ্ঠান-মঞ্চের আশপাশে প্রচুর আরপিএফ জওয়ান মোতায়েন করেন রেল কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠান মঞ্চের আশপাশে তৃণমূল কংগ্রেস যে সব পোস্টার ও ব্যানার লাগিয়েছিল সেগুলি খোলার চেষ্টা করে আরপিএফ। কিছু সরানো গেলেও অনেকগুলিই রয়ে যায়। রয়ে যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাটআউটও। তার মধ্যেই সভা করতে হয় রেল প্রতিমন্ত্রীকে।
কাঁচরাপাড়ায় অশান্তির বাতাবরণ থাকলেও ঠিক উল্টো ছবি দেখল নিউ গড়িয়া স্টেশন। সেখানে রাজনৈতিক সৌজন্য দেখিয়ে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমন এবং প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সুজন চক্রবর্তীকে। নয়াদিল্লিতে থাকায় এ দিনের অনুষ্ঠানে আসতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন সুমন। তবে মঞ্চে ছিলেন সুজন। রেল প্রতিমন্ত্রী তাঁকে হাত ধরে মঞ্চে তুলে সৌজন্য দেখাতে ভোলেননি। পরে রেল কর্তৃপক্ষ জানান, কাঁচরাপাড়ায় এলাকার তৃণমূল সাংসদ তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী এবং কলকাতার ক্যানেল ওয়েস্ট রোডে রেলের আরেকটি অনুষ্ঠানে সেই এলাকার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল।
প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার পরে দীনেশ ত্রিবেদী এবং শেষে মুকুল রায় এই তিন জন রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে বিরোধীদের রেলের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হত না বলে বার বার অভিযোগ উঠেছিল। এ দিন সেই সংস্কৃতিরও পরিবর্তন করলেন অধীরবাবু। |
|
|
|
|
|