স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সিআরপি ক্যাম্প,
কাছেই ঘেঁষেন না বাসিন্দারা

চার দিকে সার সার বাঙ্কার। ঢোকার মুখে কাঁটাতারের বেড়া আর দু’দিকে ‘লাইট মেশিনগান’ হাতে সিআরপি জওয়ান। আপাদমস্তক তল্লাশির পরেই মেলে প্রবেশাধিকার। স্থানীয় বৃদ্ধার কথায়, “ওই বন্দুক প্যারাইয়ে ডাক্তার দিখাতে যাওয়া যায় না।” স্থানীয় বাসিন্দা তৃণমূলের বিমল পাণ্ডেও সহমত, “লোকজন এখানে বিশেষ আসে না।”
গত ছয় বছর ধরে লালগড়ের ধরমপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য কর্মীর চাইতে বন্দুকধারীর সংখ্যা বেশি। গোড়ায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল রাজ্য পুলিশের দখলে। পরে তার দখল নিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। জঙ্গলমহলের নানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেল, হাল ফেরানো হচ্ছে ভবনগুলির, কিন্তু ডাক্তার, নার্সের দেখা পাচ্ছেন না অনেকখানি পথ উজিয়ে আসা গ্রামবাসীরা। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র বলেন, “একটা সময় টানা গোলমাল চলেছে। এখনও চিকিৎসকরা অনেক জায়গায় যেতে চান না।”
আট বছর হল তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে ওদলচুয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
এই যেমন, বেলপাহাড়ির ওদলচুয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। দু’জন মাত্র স্বাস্থ্যকর্মীর ভরসাতেই চলছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। কোনও চিকিৎসক বা নার্স নেই। অথচ উচ্চতর হাসপাতাল ভবনের ঝকঝকে বাড়ি হয়েছে। সেখানে রয়েছে আলাদা জরুরি বিভাগ। স্থানীয় বাসিন্দা রাখহরি দাস বলেন, “আট বছর বয়স হল নতুন বাড়িটার। কিন্তু চালু হয়নি কিছুই।” নজরে এল তালাবন্ধ ভবনে নীল-সাদা বোর্ড ‘ইমার্জেন্সি ২৪ ঘণ্টা খোলা।’
জামবনির চিচিড়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র হোক বা রামগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সর্বত্রই ডাক্তার-নার্সের আকাল। হাসপাতালে রয়েছে শয্যার সমস্যাও। “সতেরোটা বেড। আর গড়ে রোগী ভর্তি থাকে ২৫ জন। মেঝেতেই রাখতে হয়” বলছিলেন চিল্কিগড় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একজন নার্স। মোহনপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেমন দেখা গেল, নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছে। কিন্তু কর্মীর অভাবে চালু হচ্ছে না অসুস্থ নবজাতকদের ব্যবস্থা (SNCU)।
আবার ডাক্তার থাকলেও, তিনি যে হাসপাতালেই থাকবেন, এমন কিন্তু নয়। বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে কাজের দিনে বেলা ১১টায় গিয়ে দেখা গেল, আউটডোরে রোগীর লাইন। কিন্তু ডাক্তারবাবু কোয়ার্টারে ফি নিয়ে রোগী দেখছেন। রোদ মাথায় নিয়ে আউটডোরের সামনে দাঁড়িয়ে ডিংলি মাহাতো। বয়স ৭০। বললেন, “এখানে এমনই চলে।” খবরের কাগজের লোক এসেছে জেনে তড়িঘড়ি আউটডোরে ঢুকলেন চিকিৎসক।
জঙ্গলমহলের নেই-এর তালিকা বড় দীর্ঘ। স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও তারই ছায়া। বেলপাহাড়ির ‘অনাহারের গ্রাম’ আমলাশোল। প্রত্যন্ত এই এলাকায় একটা সময় দু’বেলা খেতে পেতেন না বাসিন্দারা। এখন অনিয়মিত হলেও ২ টাকা কেজি দরে চাল জোটে। ইন্দিরা আবাসের বাড়িও তৈরি হয়েছে গ্রামে। কিন্তু চিকিৎসা পরিষেবা? বাড়ির উঠোনে বসেছিলেন শুক্রা শবর। অশক্ত শরীরের বৃদ্ধের বয়স আন্দাজ করা কঠিন। গলায় চুনের প্রলেপ। তাঁর স্ত্রী খাঁদিদেবী বললেন, “গলায় ব্যথা তো, তাই।” ডাক্তারের কাছে যাননি? ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন বৃদ্ধা। গ্রামের কাছেই তো উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে? এ বার স্বর ফুটল খাঁদিদেবীর, “ওই ঘরটোই আছে। ডাক্তারও লাই, ওষুধও লাই।”
স্বাস্থ্য পরিষেবার এই তীব্র চাহিদা বুঝেই এক সময়ে মাওবাদীরা নানা এলাকায় জনগণের কমিটির ব্যানারে স্বাস্থ্য শিবির করেছে। তাতে সাড়াও মিলেছিল। কিছু জায়গায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরির তোড়জোড়ও শুরু করেছিল কমিটি। এখন সেগুলো পরিত্যক্ত। পাশাপাশি চিকিৎসার নিশ্চয়তা নেই সরকারি হাসপাতালেও। সব মিলিয়ে জঙ্গলমহলের স্বাস্থ্য কিন্তু ফেরেনি।

রুগ্ণ জঙ্গলমহল
জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর
• ব্লক ১১ • জনসংখ্যা ১৬ লক্ষ ৬২ হাজার
পরিষেবা আছে থাকার কথা লাগবে
জেলা হাসপাতাল (ঝাড়গ্রাম)
গ্রামীণ হাসপাতাল ১১
ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১৭
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৩২ ৮৩ ৫১
উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ৩০৭ ৩৩২ ২৫
শয্যাসংখ্যা ৫৮৫ ১৬৬২ ১০৭৭
চিকিৎসক ৭৮ ৮৮ ১০
নার্স ১৫৫ ২০৩ ৪৮
ফার্মাসিস্ট ৪০ ৪৯


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.