সম্পাদকীয় ১...
শিল্প কী ও কয় প্রকার
ত দিনে বুঝা গেল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শিল্প বলিতে ঠিক কী বোঝে। গত দুই বছর ধরিয়া শিল্পপতিরা বড় ধন্দে ছিলেন। রাজ্যে শিল্পের জন্য লগ্নি করিবেন কি না, করিলে ঠিক কোন ধরনের শিল্পে বিনিয়োগ করিবেন, ভাবিয়া পাইতেছিলেন না। মুখ্যমন্ত্রী হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধন করিতে গিয়া স্পষ্ট জানাইয়া দিয়াছেন শিল্প মানেই বড়-বড় কলকারখানা নয়, হস্তশিল্প অর্থাৎ মাদুর তৈরি, জ্যাম-জেলি-আচার কিংবা ঘরে বসিয়া ঠোঙা তৈরিও শিল্প। তাহার চেয়েও বড় কথা, শিল্প বলিতে কেবল লোহা, সিমেন্ট, কাঠের জিনিস তৈরিকে বুঝায় না, রকমারি কলা যেমন গান-কবিতা-যাত্রা-নাটক-সিনেমা ইত্যাদিকেও বুঝায়। অর্থাৎ ইংরাজিতে যাহাকে ‘ইন্ডাস্ট্রি’ বলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘আর্ট’কেও তাহার সহিত একাকার করিয়া ফেলিলেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তাবিত শিল্পের এই সংজ্ঞা রীতিমত রোমহর্ষক এবং ইহা নিশ্চিত ভাবেই রাজ্যে বিনিয়োগেচ্ছু শিল্পপতিদের শিহরিত করিয়া থাকিবে। এমন শিল্পবান্ধব মুখ্যমন্ত্রী তো ইতিপূর্বে দেশের কোনও রাজ্য দেখে নাই।
দুর্জনে অবশ্য অন্য কথা বলিতেছে। কেহ বলিতেছে, মুখ্যমন্ত্রী এ ভাবে শিল্পের সংজ্ঞাকে ঘুলাইয়া দেওয়ায় শিল্পপতিরা যৎপরোনাস্তি বিভ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছেন। কেননা যাঁহারা সিমেন্ট, লোহা, ইস্পাত, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদিতে লগ্নি করিবার কথা ভাবিতেছিলেন, তাঁহাদের অতঃপর চিৎপুরের যাত্রাপাড়ায় কিংবা টলিউডের স্টুডিয়োপাড়ায় টাকার থলি লইয়া ছোটাছুটি করিতে হইতে পারে। কেহ ভাবিতে বসিয়াছেন, ‘ক্ষুদ্র শিল্প দফতরের মধ্য দিয়া’ শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী, সঙ্গীতজ্ঞ, নাট্যকার-অভিনেতা, যাত্রাদলের বিবেক-নর্তকী-হারমোনিয়ম বাজিয়েরা, ছোট ও বড় পর্দার সিরিয়াল-সিনেমার কুশীলবরা কেমন করিয়া ‘যাইবে’, কোথায়ই বা ‘যাইবে’? মুখ্যমন্ত্রীর নিজের হাতে রাখা এই দফতর কি তবে ওই শিল্পীদের বিদেশে রফতানি করিয়াই দফতরকে ‘পৃথিবীর এক নম্বর সেরা কাজে ব্যবহার’ করিতে চায়? ভাবিলে প্রথমটা মাথা ঝিমঝিম করে। পরে সব জলের মতো পরিষ্কার ও স্বচ্ছ হইয়া যায়। বোঝা যায়, কেন মুখ্যমন্ত্রী শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে নারাজ। শিল্প বলিতে তিনি যাহা বুঝেন, তাহার জন্য তো কৃষকের কাছ হইতে জমি কাড়িবার কোনও প্রয়োজনই নাই। গান-বাজনা করার কিংবা যাত্রা-থিয়েটারের মহড়া দিবার অথবা সিনেমার শু্যটিংয়ের মতো প্রয়োজনীয় শিল্প-পরিকাঠামো তো রাজ্যে পর্যাপ্ত। সেই পরিকাঠামোয় যে পরিমাণ শিল্পের আবাদ হইতে পারে, নিয়মিত হইয়া চলিয়াছে, সুদৃশ্য মোড়কে পুরিয়া তাহা রফতানি করিতে পারিলেই তো কেল্লা ফতে।
পশ্চিমবঙ্গ শিল্পের মরুভূমিতে পরিণত হইতেছে, এমন একটি ভিত্তিহীন মনগড়া আশঙ্কা হইতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্বসূরি রাজ্যে শিল্পায়নের সুপবন প্রবাহিত করিতে ব্রতী হইয়াছিলেন। তিনি অবশ্য শিল্প বলিতে বুঝিতেন টাটাদের মোটরগাড়ি বানানোর কারখানা, জিন্দালদের ইস্পাত নির্মাণের কারখানা কিংবা নন্দীগ্রামে কেমিকাল হাব তৈরির কারখানা, যেখানে বড় অঙ্কের পুঁজি লগ্নি ও পরিকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি বহু মানুষের কর্মসংস্থানও হইতে পারে। তাঁহার সে খোয়াব বঙ্গবাসী প্রত্যাখ্যান করে। পরিবর্তে যাঁহাকে দুই হাত উজাড় করিয়া ভোট দেয়, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহজ করিয়া তাঁহার শিল্পভাবনা এত দিনে রাজ্যবাসীকে বুঝাইয়া দিয়াছেন। এখন আর কোনও অস্পষ্টতা নাই। শিল্প বলিতে এখন বহুবর্ণ, বহুস্বর কলাকৃষ্টিকে বুঝাইবে, দেশের ‘সংস্কৃতির রাজধানী’ কলিকাতায় যাহার সরবরাহে কখনও ঘাটতি দেখা দেয় নাই। কেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বদা টলিউডের ‘জনপ্রিয়’ নায়ক-নায়িকাদের লইয়া ঘোরাফেরা করেন, কেন তাঁহার সভামঞ্চ উহারা আলোকিত রাখেন, কেন শিল্পপতি-সমারোহে রাজ্যের সরকারি প্রতিনিধি গরহাজির থাকিলেও মুখ্যমন্ত্রীর গোটা মন্ত্রিসভা চলচ্চিত্র উৎসবের সার্কাস-তাঁবুতে উপস্থিত হন, তাহার রহস্যও সহসা উন্মোচিত হইয়া গেল। এবং বুঝা গেল, কেন স্কুল-কলেজে লেখাপড়া হউক আর না-ই হউক, নৃত্যগীতাদি ‘শিল্প’চর্চা আবশ্যিক হওয়া জরুরি। তবে মুখ্যমন্ত্রী তাঁহার পূর্বসূরিদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন। তাঁহারা ইংরাজি-বিদায় করিয়াছিলেন বলিয়াই না আজ ‘ইন্ডাস্ট্রি’ ও ‘আর্ট’ এমন একদেহে লীন হইতে পারিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.