এফডিআই নিয়ে বাম-বিজেপির দাবিতে সায় নেই তৃণমূলের
কংগ্রেসকে স্বস্তি দিয়ে বার্তা মমতার
ণে ভঙ্গ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির বিরোধিতার কথা তৃণমূলের ইস্তাহারে লেখা থাকলেও আজ সর্বদল বৈঠকে বাম-বিজেপি-র তোলা ১৮৪ ধারায় ভোটাভুটি-সহ আলোচনার দাবির সঙ্গে সহমত হল না তৃণমূল।
আজ বৈঠকের গোড়াতেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম জানিয়ে দেন, খুচরোয় বিদেশি লগ্নি নিয়ে যদি সংসদে ভোটাভুটি হয়, তা হলে আন্তর্জাতিক বাজারে ভুল বার্তা যাবে। দেশের রাজকোষ ঘাটতি যথেষ্ট। এই সময়ে নেতিবাচক বার্তা পাঠানো সম্ভব নয়। তাই সরকার ভোটাভুটির দাবি মানবে না। বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মাও তাঁর কথার প্রতিধ্বনি করেন।
বিজেপি এবং বাম দলগুলি সরকারের এই অবস্থানের বিরোধিতা করলেও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তৃণমূল কিন্তু ভোটাভুটির দাবিতে সরব হয়নি। উল্টে বৈঠকে উপস্থিত তৃণমূল নেতারা জানিয়ে দেন, আলোচনা হোক এটাই তাঁরা চান। কোন ধারায় আলোচনা হবে, সেটা স্থির করবেন স্পিকার। তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় পরে বলেন, “আমাদের কথা শুনে যদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হত, তা হলে এ ভাবে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে আলোচনার দাবি জানাতে হত না। এখনও আমরা বিজেপি-কে অনুরোধ জানাচ্ছি, দ্বিধা না-করে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসুন।” তৃণমূল নেতৃত্বের আরও বক্তব্য, বিজেপি-বাম যখন তাঁদের অনাস্থা প্রস্তাবে সমর্থন জানায়নি, তখন তাঁরাও তাদের দাবি সমর্থন করতে বাধ্য নন।
শহিদ মিনারে শিখদের এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার রাজীব বসুর তোলা ছবি।
তৃণমূলের এহেন অবস্থানে বাম-বিজেপি নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য, প্রশ্নটা মতাদর্শগত, রাজনৈতিক নয়। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “অনাস্থা প্রস্তাবে সিপিএমের সমর্থন চাওয়ার ব্যাপারে তৃণমূল নেতৃত্বের যদি কোনও ছুঁৎমার্গ থেকে না-থাকে, তা হলে ভোটাভুটি-সহ আলোচনার দাবিকে সমর্থন জানাতে সমস্যা হবে কেন?”
তৃণমূল নেতাদের যুক্তি, এটা শুধু এফডিআই-এর বিষয় নয়। সরকারটাই পচে গিয়েছে। তাই তাঁরা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন। কিন্তু সরকার ১৮৪ ধারা মানবে না এটা জেনেবুঝেই সিপিএম এই দাবি তুলছে। কংগ্রেসকে বাঁচানোর এটা একটা ফাঁদ, যাতে বিজেপি পা দিয়েছে। সুদীপ বলেন, “বিজেপি যদি এখনও অনাস্থা আনে, তা হলে আমরা সমর্থন করব।”
তৃণমূলের এই যুক্তির পাল্টা সিপিএম বলছে, এফডিআই তো সরকারের জনবিরোধী আচরণের একটা দিক। একটা একটা করে বিষয় ধরেই সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হচ্ছে। তৃণমূল তাকে লঘু করে দিচ্ছে কেন?
অন্য দিকে, বিজেপি নেতৃত্ব বলছেন, সরকার ১৮৪ ধারায় আলোচনা করতে দেবে না ঠিকই, কিন্তু তৃণমূল যদি পাশে থাকত, তা হলে সরকারের মনোবল ভেঙে দেওয়া সম্ভব হত। কিন্তু মমতা রাজ্য রাজনীতির সমীকরণকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বলেই তাঁদের মত।
এই পরিস্থিতিতে সব চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে কংগ্রেস। সনিয়া গাঁধী, মনমোহন সিংহ বুঝতে পারছিলেন, বিরোধীরা একজোট হলে এফডিআই-প্রশ্নে নেতিবাচক বার্তা যাবে। যেমনটা গিয়েছিল পরমাণু চুক্তির সময়। সেই কারণে অনেক আগে থেকেই মায়াবতী-মুলায়মের সঙ্গে আলোচনা সেরে রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব জানেন যে, বিভিন্ন কারণে মায়াবতী ও মুলায়ম কেন্দ্রর উপর নির্ভরশীল। তাই বিজেপি বা বামেদের সঙ্গে গলা না-মিলিয়ে তাঁরা ধরি মাছ, না-ছুঁই পানি করে এগোচ্ছেন।
শরিক দলগুলিও যাতে সরকারের পাশে থাকে, সে জন্য আগামিকাল ইউপিএ সমন্বয় কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। তবে তার আগেই ডিএমকে নেতা করুণানিধির কাছে পাঠানো হয়েছিল গুলাম নবি আজাদকে। ডিএমকে-র সংসদীয় নেতারা এফডিআই-এর রাজনৈতিক বিরোধিতা করতে চাইলেও স্পেকট্রাম তদন্ত থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁরা কংগ্রেসের মুখাপেক্ষী। আবার এডিএমকে নেত্রী জয়ললিতাও ইউপিএ-তে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে ডিএমকে-র পক্ষে কংগ্রেস-বিরোধিতা করা সম্ভব নয়।
তবে আজ তৃণমূলের অবস্থান একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল কংগ্রেসের কাছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই পিছু হঠা?
রাজনীতির কারবারিদের অনেকের বক্তব্য, যদি এফডিআই নিয়ে সংসদে ভোটাভুটি হয়, তা হলে সরকারকে সমর্থন করা তৃণমূলের পক্ষে সম্ভব হবে না। কিন্তু তার কৃতিত্ব পুরোটাই পাবে বামেরা। যে হেতু তারাই এই প্রস্তাব এনেছে।
কিন্তু এর বাইরেও একটা বড় কারণ রয়েছে বলে রাজনীতির কারবারিদের অন্য অংশের মত। তাঁরা মনে করছেন, মমতা নানা দিক দিয়ে চাপে রয়েছেন। এক দিকে তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে সিবিআই এবং সেবি-র তদন্তের ভয়। যে আশঙ্কার কথা মমতা নিজেই বলেছেন। রয়েছে রেল সম্পর্কিত সিএজি-র রিপোর্ট প্রকাশের আশঙ্কা। তা ছাড়া, তৃণমূল নেতৃত্ব ক্রমশ এটাও বুঝতে পারছেন যে, দলের সাংসদদের অসন্তোষ ক্রমে বাড়ছে। কংগ্রেসের সঙ্গে বিচ্ছেদের ফলে শুধু বিরোধী আসনে বসার বেদনা নয়, লোকসভা ভোটে জেতার ব্যাপারেও তাঁদের কেউ কেউ সন্দিহান। কংগ্রেসের সঙ্গ ছেড়ে বিজেপি-র হাত ধরার ব্যাপারেও তাঁদের তীব্র আপত্তি রয়েছে। শুধু মুসলিম সাংসদরাই নন, দলের বেশির ভাগ সাংসদই মনে করেন বিজেপি-র হাত ধরে ভোটে গেলে রাজ্যের ২৯ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কে বিরাট আঘাত লাগবে।
তৃণমূল সংসদীয় দলের শেষ যে বৈঠকটি হয়েছে, সেখানেও এই হতাশার ছবি স্পষ্ট হয়েছে। অনাস্থা প্রস্তাব কাকে দিয়ে পেশ করানো হবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় না সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তা নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। পরে সুদীপ সেটা পেশ করেন। সৌগত রায়কে বলা হয় বিতর্ক শুরু করতে। কিন্তু তখনই সৌগতবাবুরা বুঝে গিয়েছিলেন, সংখ্যা না-থাকায় অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীতই হবে না।
দলের অভ্যন্তরে এই জটিলতার কারণে তৃণমূলের পক্ষে পিছু হঠা ছাড়া কোনও পথ ছিল না বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। আর কংগ্রেস নেতা জর্নাদন দ্বিবেদী থেকে রাজীব শুক্ল অনেকেই বলছেন রাজনীতিতে কোনও পূর্ণচ্ছেদ নেই। আগামী দিনে সব পথই খোলা রাখতে চাইছেন মমতা। তাঁদের ধারণা, আজকের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কংগ্রেস হাইকমান্ডকে একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়ে রাখলেন তৃণমূল নেত্রী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.