লেভেল ক্রসিংয়ের যানজট থেকে বাঁচতে উড়ালপুলের দাবি দীর্ঘদিনের। তা নিয়ে নানা স্তরে দরবারও হয়েছে অনেক বার। কিন্তু ফল হয়নি। রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীকে হাতের কাছে পেয়ে সেই দাবি ফের জানালেন কাটোয়ার পুরপ্রধান শুভ্রা রায় ও বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার দুপুরে অধীরবাবুকে এ ব্যাপারে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয় পুরসভার তরফে।
কাটোয়া শহরের উপর দিয়ে গিয়েছে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়ক। এই রাস্তা চিরে গিয়েছে ব্যান্ডেল-কাটোয়া রেল লাইন। দিনের অনেকটা সময়েই লেভেল ক্রসিং বন্ধ থাকে। ফলে গোটা এলাকা যানজটের কবলে চলে যায়। পুরপ্রধান শুভ্রা রায় বলেন, “ওই লেভেল ক্রসিংয়ের উপর দিয়ে উড়ালপুরের দাবি দীর্ঘদিনের। এ বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে রেলমন্ত্রীদের চিঠি পাঠিয়েছি। রাজ্য সরকারকেও জানিয়েছি। অধীরবাবু নতুন রেলের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁকে হাতের কাছে পেয়ে সেই দাবিই জানালাম।” উড়ালপুলের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রেলের আধিকারিকেরাও। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও লেভেল ক্রসিংয়ের উপর যদি দিনে গড়ে ছ’হাজারের বেশি যান চলাচল করে, তবে সেখানে উড়ালপুল তৈরি করা প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করা হয়। কয়েক বছর আগে রেল দফতরের করা একটি সমীক্ষা অনুয়ায়ী, এই লেভেল ক্রসিংয়ের উপর দিয়ে দিনে আট হাজারের বেশি যান চলাচল করে। রেলের এক আধিকারিক বলেন, “এখান দিয়ে নিশ্চিত ভাবেই অনেক বেশি মোটরচালিত যান যাতায়াত করে। তার সঙ্গে রিকশা ধরলে সংখ্যাটা আরও বাড়বে।” |
কাটোয়া শহরে ঢোকার একমাত্র রাস্তা বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়ক। এই রাস্তার উপরে লেভেল ক্রসিংটির এক দিকে রয়েছে বাসস্ট্যান্ড। অন্য দিকে শহরের ১২, ১৩, ১৪ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশ। ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের লেভেল ক্রসিং পেরিয়েই শহরে যেতে হয়। সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন দমকল বিভাগের কর্মীরা। রাস্তার উপরই দমকলের কাটোয়া শাখার দফতর। দফতরের এক কর্মীর কথায়, “শহরের মধ্যে কোথাও আগুন লাগলেই আমাদের আশঙ্কা হয়, এই বুঝি রেলগেট পড়ে গেল। অনেক বার এই সমস্যার মুখে পড়েছি।” দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ জন্য ঘটনাস্থলে দেরি পৌঁছে বেশ কয়েক বার এলাকাবাসীর ক্ষোভের মুখেও পড়েছেন তাঁরা। কাটোয়া শহরের বাসিন্দা অমিত মণ্ডল, খাজুরডিহির বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক অনুপম মুখোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘লেভেল ক্রসিং দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকায় অনেক সময়ে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পারাপার করতে হয়। ব্যান্ডেল-কাটোয়া ডবল লাইন হয়ে গেলে উড়ালপুলের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়বে।”
রেল দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই লাইন দিয়ে প্রতি দিন লোকাল ও এক্সপ্রেস মিলিয়ে ৩১ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। পাশাপাশি, ডিজেল ইঞ্জিনও চালানো হয়। স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই রাস্তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। লেভেল ক্রসিংয়ে মানুষ সমস্যায় পড়েন। তাই উড়ালপুল খুবই প্রয়োজন।” কাটোয়া থেকে বাজারসৌ পর্যম্ত ডবল লাইন পাতার কাজ শুরু করার পরে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “রেলের নিয়ম অনুযায়ী উড়ালপুল তৈরির জন্য কেন্দ্র অর্ধেক ও রাজ্য অর্ধেক টাকা দেয়। রাজ্য যদি তার ভাগের টাকা দেয় তবে আমরা উড়ালপুল তৈরি করে দেব।” রাজ্যের পূর্ত দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এ রকম বেশ কিছু উড়ালপুল তৈরির দাবি তাদের কাছে আছে। সেগুলি বিবেচনা করা হচ্ছে। |