সম্প্রতি জিডি বিড়লা সভাঘরে অনুষ্ঠিত হল ‘কোথায় পাব তারে’ শিরোনামে বাংলার দুই অমর কবি রবীন্দ্রনাথ ও লালন ফকিরের গানের এক মেলবন্ধন প্রয়াস। রবীন্দ্রনাথ ও লালন ফকির সমসাময়িক দুই কবি। এবং তাঁদের গানে রয়েছে ভাবের অসামান্য সাযুজ্য। লালন ফকিরের গানের দর্শন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীত চেতনার সঙ্গে একাত্ম। তাই এই দুই কবিকে একসঙ্গে উপস্থাপনার উদ্যোগকে অবশ্যই এক নিবিড় চিন্তাশীল প্রয়াস বলা যায়।
রবীন্দ্রনাথ ও লালন ফকিরের যে সব গান নির্বাচিত হয়েছে তার মূল কথা ছিল মানুষের আত্মিক চেতনার উন্মোচন। মানুষকে ভালবেসে মানুষের মুক্তির সন্ধান করেছেন এই দুই কবি। একই সঙ্গে মগ্ন হয়েছেন আত্মানুসন্ধানে। রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, অঞ্জন কাঞ্জিলাল, সত্যম রায়চৌধুরীর ভাষ্যপাঠে সেই সত্যটির পরিচয় ফুটে উঠল। ভূমিকা অংশটি আরও সংহত হলে ভাল লাগত। রবীন্দ্রগান এবং লালন ফকিরের গান গেয়ে শোনালেন মনোময় ভট্টাচার্য, কৃষ্ণদাস বাউল এবং বিপাশা মিত্র। সূচনার সমবেত গানে ছিলেন ‘শ্রীনন্দনা’র শিল্পীরা।
উদ্বোধনী গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘বহে নিরন্তর’ এবং ‘গায়ে আমার পুলক লাগে’। মনোময়ের উদাত্ত সুরসমৃদ্ধ কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান এক স্বতন্ত্র মাত্রা পায়। ‘তাই তোমার আনন্দ’, ‘আপনাকে এই জানা’, ‘আমার প্রাণের মানুষ’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ অনেক দিন মনে রাখার মতো উপস্থাপনা। এরই পাশাপাশি কৃষ্ণদাস বাউল লালন ফকিরের গান শুনিয়েছেন প্রাণ মন ঢেলে। তাঁর ‘দেখ না রে মন’, ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘সব লোকে কয়’ লালনের গানের অপূর্ব নির্যাসটি দর্শক-শ্রোতার কাছে পৌঁছে দেয়। সঙ্গীত আবহে ছিল পাশ্চাত্য ধরনের ছোঁয়া, কিন্তু কৃষ্ণদাস অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বাউল গানের বৈশিষ্ট্যটি তাতে মিলিয়ে দিতে পেরেছেন। এ ছাড়া, বিপাশা মিত্রের কণ্ঠে সুগীত ‘আমি কোথায় পাব তারে’ ও ‘ধন্য ধন্য বলি’। সমবেত গানের মধ্যে ভাল লেগেছে ‘অন্ধকারের উৎস হতে’। নৃত্য-নির্মিতিতে ছিলেন কোহিনূর সেন বরাট ও সম্প্রদায়।
|
সঙ্গীতাচার্য নীহাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিল্পী জীবনের পঞ্চাশ বছর উদযাপিত হল রবীন্দ্র সদনে। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল সত্যকিঙ্কর সঙ্গীত সংসদ। শিল্পীকে অভিনন্দন জানাতে অনেকে সে দিন হাজির হয়েছিলেন। যেমন অরুণ ভাদুড়ি, অলক চট্টোপাধ্যায়, দীননাথ মিশ্র, হরশঙ্কর ভট্টাচার্য, সুমিত্রা সেন প্রমুখ। এঁদের প্রত্যেকের স্মৃতিচারণে মানুষ নীহাররঞ্জন, শিল্পী নীহাররঞ্জন, শিক্ষক নীহাররঞ্জন সজীব হয়ে ওঠেন। সভার পরে গানের আসর। নীহাররঞ্জন প্রথমে গাইলেন বাগেশ্রী। পরে সরস্বতী। খেয়ালের পর পরিবেশিত হল খাম্বাজ ঠুমরি ও শেষে ভৈরবী। খেয়াল থেকে ঠুমরি প্রতিটি নিবেদন ছিল তাঁর স্বভাবসিদ্ধ অননুকরণীয় ভঙ্গিতে নিবেদিত। শিল্পীকে সুসঙ্গত করেন তবলায় সুজিত সাহা। হারমোনিয়মে ছিলেন সোহনলাল শর্মা। |