সঙ্গীত সমালোচনা ২...
গাইছি আমি এমনি করেই
ঠিক পাঁচ বছর পর। আবারও একা আসরে লোপামুদ্রা। ২০০৭ সালের পর পরিপূর্ণ রবীন্দ্রসদনে সে দিন অনেকেই বসার আসন পাননি। বহু দিন পরে শ্রোতাদের এমন আগ্রহ শুধু বাংলা গান শোনার জন্য? শিল্পী নিজেও কৌতূহল চেপে রাখতে পারেননি, “বাংলা গান শুনতে এখনও সবাই আসছেন আমি ভাবতে পারছি না।” সংশয় তো একটা ছিলই। গত কয়েক বছর ধরে বাংলা গানের প্রতি কিছুটা হলেও আগ্রহ কমছিল শ্রোতাদের। কিন্তু সব ভুল প্রমাণ করে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে গাইতে পারেন, ‘তোমায় হৃদ মাঝারে রাখব,ছেড়ে দিব না।’
শ্রীকান্ত আচার্য অনুষ্ঠানের শুরুতেই লোপার সম্পর্কে যতটুকু বক্তব্য রাখলেন তা অনবদ্য। একজন শিল্পীর চোখে আর এক শিল্পীর যথার্থ মূল্যায়ন।
তবুও সেই চেনা লোপা, সেই চেনা শ্রোতা। শুরু থেকেই অনুরোধের পালা। কিন্তু অনড় শিল্পী। যে গান শোনাতে এককের আয়োজন, আগে তিনি তা-ই শোনাবেন। শোনালেনও। “আগে আমার সাজানো গানগুলি গাইতে দিন, তার পরে সব অনুরোধই রাখব।” এ বারের এককে বিভিন্ন সময়ে তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, তন্ময় বসু, দূর্বাদল চট্টোপাধ্যায়, সোমনাথ রায়, জয় সরকার। মঞ্চের অন্তরালে জেগে ওঠে এই শহরের পরিচিত সেই দৃশ্য বা দিন শুরুর চেনা ছবি। লোপার নতুন গান, ‘ঠিক যেখানে দিনের শুরু।’ আবেগ নেই, বাস্তব আছে। লৌকিকতা নেই, জীবন আছে। এই লোপা-ই জয় সরকারকে সঙ্গে নিয়ে চলে যেতে পারেন লালনের দেশে। ‘বাড়ির কাছে আরশি নগর’। শ্রোতারা ধন্যবাদ দিলেন শুধু লোপাকে নয়, জয়কেও।
এ দিন প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে শিল্পী গাইতে পারেন ‘এক ছুটে তোমার জন্য আকাশ হতে পারি।’ আবার নস্টালজিক অনুভূতি আনতে তিনি শচীন দেববর্মনের সুরের সঙ্গী হতেও পিছপা নন। ‘ঘাটে লাগাইয়া ডিঙা’ আবারও শোনা হল কত দিন পরে। ঠিক পিছনের সারিতে বসা এক প্রবীণের মনে পড়ে গেল ওপার বাংলার কত স্মৃতি। খোলা মাঠ, নদী আর মাঝিদের আনাগোনার সেই সব দৃশ্য। গান ও সুরের দোলাচলে মনের উচ্ছলতা কখনও বাড়ে, কখনও বা বাস্তবের আয়নায় প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দেয়। সমীর চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ‘দুই বোনের গল্প’ গানটি লোপার গলায় এক অন্য মাত্রা পেয়ে যায়।
লোপা এখনও নিজের গায়কি ও গায়ন ভঙ্গিতে একটু বৈচিত্র এনে থাকেন বিভিন্ন গানের ধারায়। তা সে রবীন্দ্রসঙ্গীত হোক বা আধুনিক। যেমন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আলোকেরই ঝরনা-ধারায়’ বা ‘দেখো দেখো দেখো শুকতারা আঁখি মেলি চায়’ কণ্ঠের তেজ পরিশীলিত যা হওয়া উচিত। আবার তপন সিংহের লেখা ও জয় সরকারের সুরে, তন্ময় বসুর তালবাদ্যকে সঙ্গী করে ‘মন দে উড়ান’ অনবদ্য।
একের পর এক। তবে প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে বেরিয়ে আসার মুহূর্তেও কানে বাজছিল, ‘অবনী বাড়ি আছো।’ এই বুঝি অবনী বেরিয়ে এল ঘর ছেড়ে! শিল্পীর সার্থকতা সেখানেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.