|
|
|
|
|
|
|
নাটক সমালোচনা... |
|
নিশিকন্যা বিনোদিনী |
দু’ দিন অ্যাকাডেমি প্রেক্ষাগৃহে |
উনিশ শতকের দ্বিতীয় অর্ধে যখন নানা বনেদি বাড়ির ভিতরমহলে আবির্ভাব রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল বা নরেন্দ্রনাথ তথা বিবেকানন্দের, তখন নিষিদ্ধ পল্লির আঁধার-ঘরে আবির্ভাব নিশিকন্যা বিনোদিনীর (১৮৬৩-১৯৪১)। গিরিশচন্দ্রের মঞ্চশিষ্য আর রামকৃষ্ণের মন্ত্রশিষ্য বিনোদিনী। জনমানসে যাঁর জীবনগাথা হারিয়ে গেছে অতীত-অন্তরালে। অবহেলিত থেকেছে দেশ-ইতিহাসের পাতায়। অথচ তাঁরই অভিনয়-সঙ্গীতে মঞ্চের আলোয় মূর্ত হয়েছে বাংলার রঙ্গভূমি। আপন উপন্যাস ‘মৃণালিনী’-র মঞ্চরূপে মনোরমাবেশী বিনোদিনীর অভিনয়ে মোহিত বঙ্কিমচন্দ্রের বয়ান ‘‘আমি মনোরমার চরিত্র পুস্তকেই লিখিয়াছিলাম, কখনও যে ইহা প্রত্যক্ষ দেখিব তাহা মনে ছিল না। আজ মনোরমাকে দেখিয়া আমার মনে হইল যে আমার মনোরমাকে সামনে দেখিতেছি।’’ আবার বিনোদিনীর সঙ্গকথা মেলে রসরাজ অমৃতলালের কলমে,
“আমি আর গুরুদেব যুগল ইয়ার
বিনির বাড়িতে যাই খাইতে বিয়ার
গিরিশের পদাবলি রোম্যান্সের মেলা
কবিতা লিখায়ে তাই বিনি করে খেলা।”
জীবনে অভিনয় স্বীকৃতি মিললেও ঘোচেনি গ্লানি। তাই বিনোদিনী-উবাচ ‘‘কে আমাদের হৃদয়ের পরিবর্তে হৃদয় দান করিবে? অর্থ দিয়া কেহ কাহারও ভালবাসা কেনেন নাই। আমরাও অর্থে ভালবাসা বেচি নাই।” আবার তাঁরই অভিনীত চৈতন্যলীলায় ‘নাট্যশালা হল তীথর্’ রামকৃষ্ণ-আশিসে। |
|
মঞ্চজীবনের এমনি নানা অধ্যায় ঘিরে তাঁর ১৫০তম জন্মবর্ষে অ্যাকাডেমি থিয়েটার আয়োজন করেছে ‘বিনোদিনী গাথা।’ আগামী ৬-৭ ডিসেম্বর রোজ সন্ধ্যায় অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে। উৎসবে থাকছে বিনোদিনীর জীবন ঘিরে এক চিত্র প্রদর্শনী। শোনা যাবে দু’টি শ্রুতিনাট্য বিনোদিনীর নানা অধ্যায় ঘিরে। নাট্যপাঠে অংশ নেবেন সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ্ত বিশ্বাস এবং শ্রীলা মজুমদার। দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা ও নির্মাণে পরিবেশিত হবে হেমলতা-মৃণালিনী-মেঘনাদ বধ-বিষবৃক্ষ-চৈতন্যলীলা-বিল্বমঙ্গল-বেল্লিকবাজার এমনই বহু মঞ্চনাট্যের গান। মঞ্চগানের পরিবেশনায় ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেবজিত্ স্বয়ং। ভাষ্যে সতীনাথ মুখোপাধ্যায় এবং ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। বিডন স্ট্রিটে একদা তাঁর পতিতজীবনমূল্যে গড়ে উঠেছিল থিয়েটার। তাঁর নামে নামকরণ হওয়ার কথা থাকলেও সাথিদের আপত্তিতে নাম হয় স্টার থিয়েটার। গুঁড়িয়ে যায় বিনোদিনীর জীবন-স্বপ্ন। সেই জীবন-স্বপ্ন আবার নতুন করে সার্থকতা পাবে বিনোদিনী গাথা উৎসবে, বহু দিন পরে। |
|
|
|
|
|