উত্তর কলকাতা
পা পিছলে...
বিপত্তির স্টেশন
খনও অঝোর ধারায়, কখনও টিপটিপ করে সমানে পড়ে চলেছে নোংরা জল। তা-ও পড়ছে একেবারে পথচলতি মানুষের গায়ে। জল পড়ে পড়ে পিছল হয়ে গিয়েছে প্ল্যাটফর্মের সিঁড়ি। ফলে অনেকেই পা হড়কে পড়ে যাচ্ছেন। দমদম স্টেশনের চার ও পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া সিঁড়ি, দমদম রোডের আন্ডারপাস এবং এম সি গার্ডেন লেনের উপর দিয়ে চলে যাওয়া চক্ররেলের ওভারব্রিজের নীচে এটাই রোজকার ছবি। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও এ ব্যাপারে কোনও সুরাহা হয়নি, এমনটাই অভিযোগ।
ব্যস্ত দমদম স্টেশনে প্রতি দিন কয়েক হাজার মানুষ ওই চার ও পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া এলাকা দিয়ে যাতায়াত করেন। সেখানেই অনবরত পড়ে চলেছে নোংরা জল। অভিযোগ, প্ল্যাটফর্মের সিঁড়িতে পড়ে থাকা জলে পা হড়কে পড়ে পা ভাঙার ঘটনাও ঘটেছে। শুধু দমদম স্টেশনের ওই প্ল্যাটফর্ম দু’টি ব্যবহার করা যাত্রীরাই নন, দমদম রোড ধরে আন্ডারপাস ব্যবহারকারীরা, এম সি ঘোষ লেন ধরে বাড়ি ফেরা লোকজন বা ওই লেন সংলগ্ন দোকানদার ও রিকশা স্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দারাও দীর্ঘ দিন ধরে এই সমস্যায় ভুগছেন।
যেমন এম সি ঘোষ লেন সংলগ্ন এক দোকানের ব্যবসায়ী বললেন, “হঠাৎ হঠাৎ ওভারব্রিজের গা বেয়ে অঝোর ধারায় নোংরা জল পড়তে থাকে। এটা বেশি হয় দুপুরবেলা। তখন প্রায় ভিজে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। এ নিয়ে অনেক বার স্টেশন ম্যানেজারকে জানিয়েছি, চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি।” স্থানীয় বাসিন্দা অনুপম মজুমদারের কথায়: “এমনও অনেক সময় ঘটে, অফিস থেকে হয়তো রাতে বাড়ি ফিরছি। রিকশা ধরব বলে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ দেখি, ওভারব্রিজের উপরের দেওয়াল থেকে টুপটুপ করে গায়ে জল পড়ছে। ওই জলে বেশ দুর্গন্ধও ছড়ায়।”
তবে সব থেকে খারাপ অবস্থা চার ও পাঁচ নম্বর স্টেশনে। স্থানীয় দোকানদারেরা জানাচ্ছেন, প্ল্যাটফর্মের সিঁড়িটা রীতিমতো বিপজ্জনক। সদাব্যস্ত দমদম স্টেশনে রোজই ট্রেন ধরার জন্য হুড়োহুড়ি থাকে। তখন বহু যাত্রীই সিঁড়ির জলে পা হড়কে পড়ে যান। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সিঁড়িটা ভেজা থাকে। হকারদেরও সারা দিন এই নোংরা জলে পা দিয়ে কাজ করতে হয়। চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
স্থানীয় কাউন্সিলর তথা দমদম স্টেশনের হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি প্রবীর পাল জানিয়েছেন, দমদম স্টেশনের এই সমস্যা দীর্ঘ দিনের। চার ও পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কয়েকটি শৌচাগার ও পানীয় জল খাওয়ার জায়গা রয়েছে। দমদম স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শৌচাগারের পাইপলাইন লিক করার ফলেই এই বিপত্তি। প্রবীরবাবু বলেন, “আমরা এই লিক সারিয়ে নেওয়ার জন্য বার বার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। মাঝেমধ্যে দমদম স্টেশন ম্যানেজারের উদ্যোগে এই লিক সারিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু ফের কয়েক দিনের মধ্যে পাইপলাইন লিক হয়ে যায়। স্থায়ী সমাধান হয়নি।” যদিও দমদমের স্টেশন ম্যানেজার অনুপম চক্রবর্তী দাবি করেন, “সম্প্রতি ওই পাইপলাইনের লিক সারানো হয়েছে। এম সি গার্ডেন লেনের চক্ররেলের ওভারব্রিজ দিয়ে যে জল পড়ত, তা একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দমদম আন্ডারপাসের দেওয়াল দিয়ে এখন জল লিক করছে না। ওই নিকাশি নালার লিকেজও সারিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
বাস্তবে অবশ্য স্থায়ী সমাধান চোখে পড়ল না। দেখা গেল, আন্ডারপাসের দেওয়াল চুইয়ে এখনও প্ল্যাটফর্মের সিঁড়িতে পড়ছে নোংরা জল। তার উপর দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে। তাই স্থানীয় মানুষ ও যাত্রীরা স্টেশন ম্যানেজারের আশ্বাসবাণী শুনে খুব একটা ভরসা পাচ্ছেন না।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.