|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা
|
শ্রমিক বাড়ন্ত |
উন্নয়নে ভাটা |
প্রসেনজিৎ পাঠক |
কাজ আছে। কিন্তু কাজের লোক নেই!
বেড়ে গিয়েছে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি। এখন দৈনিক ২০০-২৫০ টাকা মজুরির কাজেরও অভাব নেই। কিন্তু সরকারি প্রকল্পে মজুরির দর সময়োপযোগী নয় মোটেই। ফলে, সরকারি দরে পঞ্চায়েত এলাকায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে আগ্রহ হারাচ্ছেন শ্রমিকেরা। এর জেরে বিপাকে পড়েছে রাজারহাট ব্লকের রাজারহাট-বিষ্ণুপুর-১ নম্বর, মহিষবাথান-২ এবং পাথরঘাটা পঞ্চায়েত। কারণ, সরকারি দরে দৈনিক ১৩৬ টাকা মজুরিতে ‘মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্প’র (এমজিএনআরইজিএ) কাজে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এর জন্য নানা উন্নয়ন এবং সংস্কারমূলক কর্মসূচিও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে ওই তিন পঞ্চায়েতের তরফে।
রাজারহাট ব্লকে রয়েছে মোট ৬টি পঞ্চায়েত। এর মধ্যে ওই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় ‘মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্প’-এ শ্রমিকের অভাবে তীব্র সঙ্কট তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রকল্পে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৩৬ টাকা।
কিন্তু বাজার দর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় দৈনিক মজুরির দর এখন ২০০-২৫০ টাকা। ফলে শ্রমিকেরা সরকারি প্রকল্পে আর বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে পঞ্চায়েতগুলির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সরকারি প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট পরিমাণ মাটি কাটলে এখন পাওয়া যায় ১৩৬ টাকা। কিন্তু এলাকার শ্রমিকরা অন্যত্র রাজমিস্ত্রির সহযোগীর কাজ করলেও পাচ্ছেন ২৫০ টাকা। এ ছাড়া, সব্জির ব্যবসা করে, ভ্যান চালিয়ে, সিন্ডিকেটের অধীনে ট্রেকার থেকে বালি, স্টোনচিপ্স খালি করার কাজ করে কয়েক ঘণ্টাতেই মিলছে ২০০-২৫০ টাকা। রাজারহাট উপনগরী এবং সংলগ্ন এলাকায় রাজমিস্ত্রি ও তার সহযোগীর কাজের অভাব নেই। তাই রোজ সকাল হলেই পঞ্চায়েতের জব কার্ডধারী শ্রমিকরাও চলে যাচ্ছেন ওই সব কাজে। ফলে পঞ্চায়েত এলাকার কাঁচা নর্দমা তৈরি, নর্দমা সংস্কার, পুকুর সংস্কার, পাড়ার ভেতরের রাস্তার সংস্কার, মাটি কাটা প্রভৃতি কাজের জন্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। আগে এক দিনে নির্দিষ্ট পরিমাণের অধিক মাটি কেটে ১৩৬ টাকারও বেশি মজুরি রোজগারের সুযোগ ছিল, কিন্তু কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় সরকারের জারি করা এক নির্দেশিকায় সেই সুযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে পঞ্চায়েতগুলির পক্ষ থেকে।
ফলে কোনও ভাবেই ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে শ্রমিকদের আগ্রহ থাকছে না। তার উপরে রাজারহাট ব্লকের পাথরঘাটা, রাজারহাট-বিষ্ণুপুর-১ নম্বর এবং মহিষবাথান-২ নম্বর পঞ্চায়েত এলাকার সংলগ্ন অঞ্চলে নতুন উপনগরী গড়ে
ওঠার সুবাদে বাসিন্দাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় এমনিতেই শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। রাজারহাট-বিষ্ণুপুর-১ নম্বর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের জলি দাস বলেন, “বাজার দর বেড়েছে। শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ১৩৬ টাকা দৈনিক মজুরিতে কাজ করার মতো শ্রমিকের আকাল তৈরি হয়েছে এলাকায়। এ পর্যন্ত ২৩৯ জন শ্রমিক জব কার্ড করেছেন। কিন্তু কাজ করেছেন মাত্র ৭৩ জন। ফলে অনেক কাজ সময়মতো করা যাচ্ছে না। ১০০ দিন কাজ করার পরে আগ্রহী শ্রমিককেও বসে থাকতে হচ্ছে পরের বছরের জন্য। সরকারি কাজ করা লোকসান বলে বেশির ভাগ শ্রমিক আগ্রহী হচ্ছেন না।” পাথরঘাটা পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের অশোক নস্করের কথায়: “এলাকার অধিকাংশ জমি উপনগরীতে চলে যাওয়ায় গ্রামীণ চরিত্র পাল্টেছে। কাজও কমে গিয়েছে। তা ছাড়া, ১৩৬ টাকা রোজের মজুরিতে শ্রমিকেরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।” মহিষবাথান-২ নম্বর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সিপিএমের তাপস মাঝির কথায়: “২০১১-’১২ আর্থিক বছরে পঞ্চায়েতের ৫০৭ জন জব কার্ডধারী শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১৮৫ জন কাজ করেছেন। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কাজ করেছেন ১৯৫ জন। বেশির ভাগ শ্রমিক বেশি মজুরির আশায় অন্যত্র কাজ করছেন।”
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রণধীর কুমার বলেন, “এমজিএনআরইজিএ প্রকল্প হল গ্রামীণ মানুষের ১০০ দিনের কাজ সুনিশ্চিত করার প্রকল্প। সেখানেই এই প্রকল্প হবে, যেখানে মানুষ আগ্রহী হবেন। যদি মানুষ আগ্রহী না হন, তা হলে বুঝতে হবে সেখানকার মানুষের প্রয়োজন নেই। মানুষ সেখানে বেশি টাকা রোজগার করতে পারছেন। সেই এলাকায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অন্যান্য প্রকল্পের অধীনে এলাকা উন্নয়নের কাজ হবে। তবে, আগের তুলনায় এখন মজুরির দর বেড়েছে।” রাজারহাটের বিডিও অমলেন্দু সমাদ্দার বলেন, “রাজারহাটের নিউ টাউন ও সল্টলেক লাগোয়া অঞ্চলগুলি এখন আর গ্রামীণ নয়, শহুরে এলাকা হয়ে গিয়েছে। ফলে ওই এলাকার শ্রমিকেরা দৈনিক বেশি রোজগার করতে চাইছেন। তাই আমরা বেশি সংখ্যায় মহিলা ও বয়স্ক পুরুষ, যাঁরা বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারবেন না, তাঁদের জব কার্ড দেওয়ার চেষ্টা করছি। এই প্রকল্পটির ক্ষেত্রে সারা দেশের জন্য একই নিয়ম। কয়েকটি পঞ্চায়েতের জন্য তো নিয়ম পাল্টাবে না। শ্রমিক সঙ্কটের বিষয়টি জেলাস্তরে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।”
|
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|