নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কোথাও বোধন, কোথাও বিসর্জন। কখনও ফুলের তোড়া, কখনও বা চোখের জল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় রদবদলের পরে প্রথম দিনটা এই টানাপোড়েনেই কাটাল মহাকরণ।
খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ছবি নিয়ে টানাটানিও বাদ পড়েনি। যেমন, মন্ত্রীদের মধ্যে শুধু সদ্য-প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের ঘরে এত দিন দেওয়ালে ঠাঁই হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর ছবির। সেখানে মন্ত্রীর চেয়ারের পিছনে টাঙানো থাকত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিধানচন্দ্র রায়ের ছবি। বৃহস্পতিবার নতুন কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মমতার ছবির প্রতিষ্ঠা ঘটল সেখানে। রবীন্দ্রনাথ-বিধানচন্দ্রকে রেখেই। বিধানচন্দ্রকে খানিকটা বাঁ দিকে সরিয়ে রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর মাঝখানে এখন মমতা। |
নতুন ঘরে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি আটকাচ্ছেন কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক। ছবি: দেবাশিস রায় |
নতুন পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীকে অবশ্য মমতার ছবিতে হাত দিতে হচ্ছে না। তবে কিনা পর্যটনমন্ত্রী বলে কথা! দেশ-বিদেশের অতিথিদের কথা ভেবে ঘরের রং থেকে পূর্বসূরির আমলের পিরিচ-পেয়ালা— সব কিছু পরিবর্তনের পক্ষপাতী তিনি। চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, “এই পুরনো চা চলবে না। ভাল পেয়ালায় টি-ব্যাগের ব্যবস্থা করছি। সঙ্গে থাকবে কুকিজ।” দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দিনেই বিভাগীয় আধিকারিক থেকে টুর অপারেটরদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে বসেন তিনি। কর্পোরেটসুলভ আদবকায়দায় পর্যটকদের সঙ্গে জনসংযোগ বা পর্যটনের তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর প্রচার কী ভাবে বাড়ানো যায়, দিনভর এই জল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
বোধনের এই সমারোহের উল্টো ছবি বিদায়ী রবীন্দ্রনাথবাবুর ঘরের আধিকারিকদের জটলায়। চোখের জল মুছতে দেখা গেল তাঁদের অনেককেই।
তবে নতুনের আবাহনের উৎসবে কোথাও ভাটা পড়েনি। নতুন মন্ত্রীদের জন্য ফুলের শুভেচ্ছা উপচে পড়ছে। সকালের দিকেই তড়িঘড়ি সরিয়ে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন ঘরের প্রাক্তনীদের ছবি কিংবা অন্য স্মৃতিচিহ্ন। প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রিত্বে উন্নীত মদন মিত্রের ঘরের দরজায় এখনও প্রতিমন্ত্রী লেখা। দেখে তাঁর আপ্ত-সহায়ক পিনাকী চক্রবর্তী গম্ভীর মুখে বললেন, “কালই এটা ঠিক করতে হবে।” নামের নতুন ফলক এখনও বসেনি। কিন্তু কম্পিউটারে মোটা বড় বড় হরফে নাম লেখা কাগজ কোনও কোনও নতুন মন্ত্রী সেঁটে দিয়েছেন ঘরে।
মন্ত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের পিএ, নিরাপত্তাকর্মী, গাড়িচালকদের ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের ধুম। বাম আমলে সচরাচর পাঁচ বছরের আগে রদবদলের রেওয়াজ ছিল না। কিন্তু ক্ষমতার আসার দেড় বছরে ইতিমধ্যেই বার তিনেক রদবদল করেছেন মমতা। মন্ত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে বিদায়ী পিএ-দের কয়েক জনও এ দিন জিনিসপত্র গুছিয়ে পুরনো জায়গা খালি করে দিয়েছেন।
বদলের ঝড়ঝাপটা সব থেকে বেশি পোহাতে হয়েছে পূর্ত আধিকারিকদের। মহাকরণের ঘরের আকালে তাঁদের ভরসা কংগ্রেসের পদত্যাগী মন্ত্রীদের খালি করা ঘরগুলি। তেতলায় পুব দিকের কোণে মানস ভুঁইয়ার ঘরে বসবেন প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। মন্ত্রিসভার আর এক আনকোরা সদস্য হুমায়ুন কবীর বসছেন কাছেই আর এক প্রাক্তন সাবিনা ইয়াসমিনের ঘরে। ঘর-সঙ্কটে অসামরিক প্রতিরক্ষা সচিবের ঘরটি খালি করতে হয়েছে। সেখানে বসবেন সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা। দোতলায় রোটান্ডার পাশের ঘরে বসবেন বেচারাম মান্না। প্রাক্তন পর্যটনমন্ত্রী তথা পরিকল্পনা দফতরের মন্ত্রী রচপাল সিংহ আদৌ মহাকরণে বসবেন কি না, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা। নব মহাকরণে (নিউ সেক্রেটারিয়েট) আবাসনমন্ত্রীর ঘরটির দখল নিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি প্রতিমন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। |