বীরেন্দ্র সহবাগকে একশো টেস্টের ল্যান্ডমার্কে পৌঁছতে দেখাটা দারুণ তৃপ্তির। বীরুর ক্ষেত্রে এই তৃপ্তিটা একটু বেশিই, কারণ ও যে ভাবে টেস্টে ওপেনার হিসেবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে তার তুলনা হয় না! বড় কথা, ক্রিকেটার হিসেবে আমি ওকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করি।
সারা জীবন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে আসার পরে একেবারে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে আচমকা ওপেন করা! এটাই বলে দেয় বীরুর প্রতিভা আর মনের জোর ঠিক কী পর্যায়ের। বীরু যে যুগে টেস্ট দলে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে ঢুকেছিল, তখন রাহুল, সচিন, আমি আর লক্ষ্মণ নিয়মিত খেলছি। ফলে মিডল অর্ডারে ওকে সুযোগ দেওয়া খুব কঠিন হচ্ছিল। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় অভিষেক টেস্টে ছ’নম্বরে নেমে ও সেঞ্চুরি করেছিল। আমি সেই প্লেয়ারকে বাড়তি সম্মান করি, যে বিদেশে বড় রান করে। অচেনা পরিবেশে ভাল খেলতে আলাদা দক্ষতা লাগে। চাই আত্মবিশ্বাস। তাই প্রথম দিনই বুঝেছিলাম ছেলেটা স্পেশ্যাল। শ্রীলঙ্কায় সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওপেন করে ওর সেঞ্চুরিটা মনে আছে। বীরু ম্যাচটা শুধু জেতাইনি, রান রেট এমন যায়গায় তুলে দিয়েছিল যে, আমরা ফাইনালে চলে গিয়েছিলাম! আমার কাছে ও আদর্শ ম্যাচ উইনার। আর সেই জন্যই স্পেশ্যাল!
বীরু বিশ্ব জুড়ে ওপেনারদের মানসিকতাটাই পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। ওপেনারকে পাখিপড়া করে শেখানো হয় যে, অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে কখনও ব্যাট ঠেকানোর চেষ্টা করবে না। অথচ বীরু সেই বলগুলোকেই মারার দারুণ সুযোগ হিসেবে দেখে। প্লেয়ার আর ক্রিকেট পণ্ডিতদের ও বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে যে, এ ভাবেও রান করা যায়। টেস্ট ওর দু’টো ট্রিপল সেঞ্চুরি। টেস্ট আর ওয়ান ডে, দুই ফরম্যাটেই ডাবল সেঞ্চুরি আছে। এবং ঠিক একই স্টাইলে খেলে। বীরুর সব থেকে বড় শক্তি, কিছুই ওকে টলাতে পারে না। তা সে ও সেঞ্চুরিই করুক বা শূন্য রানে ফিরে আসুক। বিশ্বাস করুন, বীরুর মতো শিস দিতে দিতে আর অন্য কোনও ব্যাটসম্যানকে কখনও ব্যাট করতে যেতে দেখিনি! বীরুকে দেখেছি বহু বার!
বীরুকে সর্বকালের অন্যতম সেরাদের তালিকাতেই রাখব। কারণ, ও শুধু বড় রানই করে না, নিজের ব্যাটিংয়ে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আর মনে রাখবেন, ওর ভেতর কিন্তু এখনও অনেক ক্রিকেট বাকি রয়েছে। বীরুর সেরা কয়েকটা ইনিংসের কথা বলতে গেলে প্রথমেই রাওয়ালপিণ্ডির ৩০৯-এর কথা বলতে হয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা পেস আক্রমণকে কাঁদিয়ে ছেড়েছিল। সিসিআইয়ে মুরলীধরনকে পিটিয়ে ছাতু করে ডাবল সেঞ্চুরি, শ্রীলঙ্কায় মুরলী আর মেন্ডিসের বিরুদ্ধে ডাবল, অ্যাডিলেডের ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস- বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। শাবাশ বীরু! তুমি দর্শকদের টেস্ট ক্রিকেটের মাঠে ফিরিয়ে এনেছ।
বীরুর শততম টেস্ট হওয়ার পাশাপাশি সিরিজের পরিপ্রেক্ষিতেও মুম্বই টেস্টটা গুরুত্বপূর্ণ। ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ে থাকতে হলে এই টেস্টে জেতার মতো পারফরম্যান্স করে দেখাতে হবে। তবে সবার আগে অ্যালিস্টার কুককে শুক্রবার টসটা জিততে হবে। আর সেটা ওর নিয়ন্ত্রণে নেই। |