মন্ত্রিত্ব ছেড়েও মন্ত্রগুপ্তির শপথ মেনে মাস্টারমশাইয়ের মুখ বন্ধ
হাকরণে আসেননি তিনি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মন্ত্রীর ঘরে অপেক্ষায় ছিলেন গাড়ির চালক, যদি ফোন আসে। গাড়ি রাখা আছে ভদ্রেশ্বর থানায়। ‘স্যার’ বললেই তা নিয়ে সোজা চলে যাবেন সিঙ্গুরে। সেই ফোন আর এল না। বরং একটু বাদে খবর এল, মন্ত্রীর জন্য বরাদ্দ গাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।
বুধবারই সিঙ্গুরের মাস্টারমশাইকে কৃষি দফতর থেকে সরিয়ে মলয় ঘটককে সে পদে বসিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিমন্ত্রী সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক বেচারাম মান্না।
তৃণমূল সূত্রের খবর, তাঁকে সরানো হতে পারে আঁচ করে মঙ্গলবারই পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর ফোন এসেছিল, দাবি ঘনিষ্ঠদের। কিন্তু তিনি গলেননি।
যে সিঙ্গুর রাজ্যে পট পরিবর্তনের অন্যতম ভিত্তিভূমি, ক্ষমতায় এসেই সেখানকার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবুকে স্কুলশিক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা। দেড় মাসের মাথায় সরানো হয় কৃষিতে। তাতে তাঁর ‘গুরুত্ব’ খর্ব হয়নি। কিন্তু এ বার যে পরিসংখ্যান ও পরিকল্পনা রূপায়ণ দফতর তাঁর তাঁকে দেওয়া হয়েছে, তার মর্যাদা আদৌ সেই মাপের নয়।
নিজের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ছবি: দীপঙ্কর দে
তবে কি সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন পর্বে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে যাওয়া একাশি বছরের প্রবীণ শিক্ষকের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা? না কি পঞ্চায়েত ভোটকে ‘পাখির চোখ’ করে কষছেন নতুন অঙ্ক? ঢেলে সাজতে চাইছেন কৃষি দফতরকে?
সেই জন্যই কি বেশি ভরসা করা হচ্ছে বেচারামের মতো ‘তরুণ’ ব্রিগেডের উপরে? এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে।
বেচারাম বারবার বলছেন, “দিদির ডাকে কৃষিজমি রক্ষার আন্দোলন করতে এসে অনেক প্রবীণ মানুষকেই সঙ্গে পেয়েছি। মাস্টারমশাই এমন এক জন, যাঁর কাছে পদে পদে শিখেছি।” কিন্তু যাঁকে ঘিরে ম্লান-মুখ অনুগামীর ভিড়, সেই রবীন্দ্রনাথবাবু একেবারে চুপ। পড়ন্ত বিকেলে বাসুদেবপুরে পারিবারিক দুর্গামণ্ডপে পা ঝুলিয়ে বসে তাঁর একটাই কথা, “মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিয়েছি। এ বিষয়ে কোনও কথাই বলব না।”
কিন্তু সিঙ্গুরের মনখারাপ যে মহাকরণেও ছড়িয়েছে। রবীন্দ্রনাথের দুই ব্যক্তিগত সহায়ক জুবিলি দত্ত ও সুপ্রিয়া সরকার রীতিমতো চোখের জল ফেলছেন। সুপ্রিয়াদেবীর কথায়, “বাম আমল থেকে বছর পনেরো বিভিন্ন মন্ত্রীর ঘরে দায়িত্ব সামলেছি। কিন্তু দেড় বছরেই স্যার আত্মীয়ের মতো আপন করে নিয়েছিলেন। এমন মানুষ হয় না!”
জুবিলিদেবীর মনে পড়ছে, মন্ত্রীর ঘরে তাঁর সচিবালয়ের ক’জনকে নিয়ে রবীন্দ্র-জয়ন্তী পালনের কথা। চালক থেকে নিরাপত্তারক্ষীরা বলছেন, কোনও দিন ‘আপনি’ ছাড়া ‘তুমি’ বলেননি তিনি।
শুধু মাস্টারমশাই বলছেন, “মহাকরণের দিকে আর যাওয়ার দরকার হবে না!”
দুর্গামণ্ডপে তখন সন্ধে নামছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.