অভিযুক্ত মেনকা গাঁধীর সংগঠন
দিল্লির বাণিজ্যমেলায় হেনস্থা রাজ্যের শিল্পীদের
কেন্দ্রীয় সরকার আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় রাজ্য সরকারের পাঠানো হস্তশিল্পীদের মারধর, শিল্পসামগ্রী লুঠ এবং থানায় তাঁদের হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানে পশ্চিমবঙ্গের প্যাভিলিয়ানে বিজেপি সাংসদ তথা পশুপ্রেমী মেনকা গাঁধীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কিছু কর্মী পুলিশ নিয়ে গিয়ে শিল্পীদের উপর চড়াও হন বলে অভিযোগ জানান হস্তশিল্পী, রাজ্যের পর্যটন, শিল্প, তথ্য দফতরের কর্তারা।
কর্মকর্তাদের বক্তব্য, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীদের মারা হয়েছে, তাঁদের শিল্পসামগ্রী কেড়ে নেওয়া হয়েছে, পটচিত্র ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে, থানায় একাধিক বার ধরে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। বাধা দিলে অশ্রাব্য গালি দেওয়া হয়েছে ঘটনাস্থলে উপস্থিত রাজ্যের অফিসারদের। এক কর্মকর্তাকে থাপ্পড়ও মেরেছে হামলাকারীরা। এ ব্যাপারে রাজ্যের অফিসারেরাও পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। প্রগতি ময়দান থানার এক পুলিশ কর্মীকে এই ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান ডিসিপি মঙ্গেশ কাশ্যপ।
গোটা ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছে রাজ্য। যদিও দুঃখপ্রকাশ দূরে থাক, বরং ঘটনাকে সমর্থন করেছেন খোদ মেনকা গাঁধী।

পসরা সাজিয়ে করুণা চিত্রকর। ছবি: ইয়াসির ইকবাল
রাজ্যের পর্যটন সচিব বিক্রম সেন এ ব্যাপারে বলেন, “পুরো ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। ওঁরা বলছেন, আমাদের পটুয়ারা যে তুলি ব্যবহার করেন, সেটা নাকি কাঠবেড়ালির লেজের লোম এবং বেজির লোমে তৈরি। সেই অভিযোগ সত্যি কি না, সেটা তাঁরা প্রমাণ করতে পারেননি, অথচ পটুয়াদের হেনস্থা করেছেন। মহিলা পটচিত্রকরদের হাত ধরে টানাটানি করা হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, “লিখিত প্রতিবাদপত্রে জানিয়েছি, এমন চললে পশ্চিমবঙ্গ আর কখনও মেলায় কোনও শিল্পী পাঠাবে না।” শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্রোপাধ্যায়ের কথায়, “ব্যাপারটা শুনেছি। খোঁজ নিচ্ছি। এমন হওয়ার কথা নয়। ২৪ তারিখ দিল্লি যাচ্ছি। তখন এটা নিয়ে কথা বলব।”
মেলায় এসেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার ময়াগ্রামের দুই পটুয়া মা ও মেয়ে করুণা চিত্রকর ও পুতুল চিত্রকর। গত দু’দিনের অভিজ্ঞতায় দু’জনেই সন্ত্রস্ত। পুতুলের কথায়, “বুধবার পাঁচ-ছ’জন এসে লাথি মেরে তুলি-রং ফেলে দিল। পটচিত্রগুলো ছিঁড়ে দিল। একজন একগোছা তুলি পকেটে ভরে গালি দিচ্ছিল। মা-কে থানায় যেতে বলল। ওরা বলছে, তুলিগুলো জন্তুর লোম দিয়ে তৈরি। আমরা কী করে জানব? গ্রামের দোকানে কিনেছি। সারা জীবন এই তুলিতেই এঁকেছি।” আগে পটচিত্র নিয়ে ২৮ বার দিল্লি এসেছেন করুণাদেবী। এমন অভিজ্ঞতা হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের প্যাভিলিয়ানের অধিকর্তার দায়িত্বে থাকা তথ্য দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর প্রসেনজিৎ দাস জানান, শিল্পীদের হেনস্থা করা হচ্ছে দেখে ছুটে এসেছিলেন। হামলাকারীদের পরিচয়পত্র দেখতে চান তাঁরা। প্রসেনজিৎবাবুর কথায়, “ওঁরা কিছুই দেখায়নি। অভিযোগ করল, পটুয়াদের ব্রাশগুলো জন্তুর লোমে তৈরি। বললাম, বনদফতরের বিশেষজ্ঞেরা যতক্ষণ না পরীক্ষা করে রায় দিচ্ছেন, তত ক্ষণ কীসের ভিত্তিতে বলছেন ওগুলো জন্তুর লোমে তৈরি? তাতে কান দিল না। পুলিশকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন ওদেরই লোক!”
করুণাদেবীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বুধবার সন্ধ্যায় ছাড়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ আবার ওই সংগঠনের লোকজন ও জনা তিনেক পুলিশ এসে তাঁকে মেলা থেকে থানায় নিয়ে যান। সেই সময় কর্মকর্তা ও অন্য শিল্পীদের সঙ্গে তাঁদের হাতাহাতিও হয়। আধ ঘণ্টা ধর্নায় বসেন শিল্পীরা।
এই ঘটনায় প্রশাসনিক মহলে তোলপাড় হলেও মেনকা গাঁধী মনে করছেন, তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঠিক কাজই করেছে। তাঁর বক্তব্য, “প্রগতি ময়দানের মেলায় প্রতি বছরই বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘন হয় এবং তার জন্য শিল্পীরা ধরা পড়েন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.