|
|
|
|
এফডিআই-বিতর্ক |
প্রিয়-ঢালেই কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন ইয়েচুরি
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
এক সময় সংসদের অচলাবস্থা কাটাতে তাঁকেই সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যেত। শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি দীর্ঘদিন রাজনৈতিক আঙিনায় অনুপস্থিত। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে সংসদের অচলাবস্থার মধ্যে হঠাৎ করেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলেন প্রাক্তন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি। তাঁকে ঢাল করেই বামেরা এফডিআই নিয়ে ভোটাভুটি করার জন্য মনমোহন সরকারের উপর চাপ তৈরি করছে। সঙ্গে রয়েছে বিজেপি-ও।
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে বিরোধীদের ভোটাভুটির দাবি খারিজ করে বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা যুক্তি দিয়েছেন, এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। তা নিয়ে সংসদে ভোটাভুটি করা যায় না। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর এই যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে প্রকাশ কারাট-সীতারাম ইয়েচুরিরা ২০০১ সালের উদাহরণ টেনে এনেছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বালকো-র বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধে সে সময় সংসদে ভোটাভুটি চেয়েছিলেন বামেরা। তৎকালীন বাজপেয়ীর সরকার সে সময় প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের যুক্তি দিয়েই সেই দাবি মানতে চায়নি। এই অবস্থায় বিরোধী আসনে বসা প্রিয়রঞ্জন-ই রুখে দাঁড়ান। মূলত তাঁর যুক্তির সামনেই বাজপেয়ী সরকার ভোটাভুটির সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। যে প্রসঙ্গ তুলে ইয়েচুরির সঙ্গে গলা মিলিয়ে জেটলিও বলছেন, এনডিএ সরকার যদি মানতে পারে, তা হলে ইউপিএ-র আপত্তি কোথায়?
কী ভাবে এনডিএ সরকারকে রাজি করিয়েছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি? তাঁর যুক্তি ছিল, বালকো-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ৫১ শতাংশ মালিকানা বেচে দেওয়ার অর্থ বেসরকারিকরণ। বিলগ্নিকরণ নয়। কাজেই এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, নীতিগত সিদ্ধান্ত। বালকো-র বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা হলেও আদালত যে সংসদের উপর আস্থা রেখে তাতে নাক গলায়নি, সেই উদাহরণও তখন দেন প্রিয়রঞ্জন। যে প্রসঙ্গ টেনে ইয়েচুরিও বলছেন, “একই ভাবে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধেও সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থের মামলা হয়েছে। কিন্তু সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে এবং সেখানে কী সিদ্ধান্ত হয়, তা না দেখে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করতে চায়নি। যেখানে বিচারব্যবস্থা সংসদের উপর আস্থা রাখছে, সেখানে সরকারেরও ভোটাভুটি-সহ আলোচনার দাবি মেনে নেওয়া উচিত।”
এফডিআই নিয়ে ভোটাভুটির দাবিতে বাম-বিজেপি এখন সংসদের ভিতরে-বাইরে কার্যত এক কাট্টা। আজ জেটলি, ইয়েচুরি, শরদ যাদবরা ফের এক সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিবাদ মঞ্চে হাজির হয়েছেন। সিপিএম ও বিজেপি, দুই দলই রাজ্যসভায় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস দিয়েছেন। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত যখন স্থগিত রাখা হয়, তখন লোকসভা ও রাজ্যসভায় সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলেই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। এই সংশ্লিষ্ট মহলের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলিও পড়ছে বলেও তখন জানায় সরকার। লোকসভায় এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাজ্যসভায় আনন্দ শর্মা। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি মানা হয়নি বলেই ইয়েচুরি-জেটলির অভিযোগ। প্রণব এখন রাষ্ট্রপতি ভবনে। তাই সংসদে দেওয়া প্রতিশ্রুতি না মানার জন্য স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ আনন্দ শর্মার বিরুদ্ধেই। অরুণ জেটলির কটাক্ষ, “বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, এফডিআই-এর সিদ্ধান্ত পাথরে খোদাই হয়ে গিয়েছে। ভারতের সংবিধানও পাথরে খোদাই করা নয়। সেখানেও সংশোধন হয়েছে। কাজেই সরকারের যে কোনও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাই যায়।” |
|
|
|
|
|