অনাস্থায় নেই, তবু মমতাকে পাশে চায় বিজেপি
তৃণমূলের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে সামিল হয়নি তারা। তা বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চটাতেও চাইছে না বিজেপি।
এ দিন তাই সংসদে বিজেপির একাধিক শীর্ষ নেতা তৃণমূলের সাংসদদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেন। মুকুল রায়ের সঙ্গে কথা বলেন অরুণ জেটলি। সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদের সেন্ট্রাল হলে রাজনাথ সিংহ কথা বলেন তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে। এমনকী, বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীও আগরতলা থেকে দূত মারফত মমতার প্রতি বার্তা পাঠান।
এখানেই শেষ নয়। তৃণমূল নেত্রীকে স্বস্তি দিতে আজ সুষমার নির্দেশে শাহনওয়াজ হুসেন প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেন, “অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে মমতার সঙ্গে সুষমার কোনও কথাই হয়নি।” তা হলে মুরলীমনোহর জোশী কলকাতায় যে জানিয়েছিলেন এই কথোপকথনের কথা? শাহনওয়াজের জবাব, “জোশী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভেবেছিলেন!”
সংসদের প্রথম দিনে, যে দিন লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনতে গিয়ে কার্যত একঘরে দেখাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে, সেখানে তাঁকে তুষ্ট রাখতে বিজেপির তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। বিজেপি নেতারা এ দিন সম্মিলিত ভাবে মমতাকে একটা কথাই বোঝাতে নেমে পড়েছিলেন। সেটা হল, তিনি যেন ভুল না বোঝেন। তাঁরা বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, বিজেপি সামিল হলেও মুলায়ম-মায়াবতীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন ছাড়া এই অনাস্থা মুখ থুবড়ে পড়তই। আর এক বার জিতে গেলে সরকার হই হই করে নিজেদের সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে এগিয়ে যেত তো বটেই, এমনকী দুর্নীতির যাবতীয় অভিযোগ থেকে নিজেদের মুক্ত ঘোষণা করে প্রচারও শুরু করে দিত। তাই অনাস্থা আনার আগে ভোটাভুটি-সহ বিতর্ক করিয়ে দেখা যাক, কার অবস্থান কী। অনাস্থার সময় তো পড়েই আছে।
অরুণ জেটলি বলেন, সংসদের প্রথম দিনেই আজ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, ভোটাভুটি-সহ বিতর্ক এড়াতে সরকার পক্ষ কী ভাবে মুলায়ম-মায়াবতীকে কাজে লাগিয়েছে। এ দিন মুলায়ম রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি হ্রাসের প্রতিবাদে ও মায়াবতীর দল চাকরিতে সংরক্ষণ ও উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ সরকারের অপশাসন নিয়ে হট্টগোল করে গেলেন। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, আজ স্পিকার যখন তৃণমূলকে পেশ করতে দিয়েছেন, তখনই তিনি নিশ্চিত ছিলেন, এর সমর্থনে পর্যাপ্ত সংখ্যা নেই। সংখ্যা থাকলে সংসদের প্রথম দিনেই ঝুঁকি নিত না সরকার পক্ষ।
বিজেপি নেতৃত্ব মমতাকে বোঝাচ্ছেন, যে হেতু তৃণমূলের আনা অনাস্থা প্রস্তাব এখনও স্বীকৃত হয়নি, তাই এই অধিবেশনে এখনও সেটি আনার সুযোগ রয়েছে। এক বার অনাস্থা আনার পরে ছ’মাসের মধ্যে দ্বিতীয় বার আর তা আনা সম্ভব নয়। বিজেপির বক্তব্য, তাই অনাস্থা আনতে গেলে আটঘাট বেঁধেই নামা উচিত। অন্য দিকে, ভোটাভুটি-সহ বিতর্কে সরকার যদি হেরেও যায়, সংবিধান অনুযায়ী তার পতন হবে না। যদিও নৈতিক পরাজয় হবে। আজ পর্যন্ত অবশ্য নৈতিক পরাজয়ের পরে সরকারের ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার নজির নেই। বিজেপি নেতারা বলছেন, সেই অবস্থায় সরকারকে অনেক বেশি প্যাঁচে ফেলা সম্ভব হবে। বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, “আগে ১৮৪ ধারায় ভোটাভুটি-সহ বিতর্ক করে দেখা যাক, মুলায়ম ও ডিএমকের মতো দল, যারা খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করে ভারত-বন্ধে সামিল হয়েছিল, তারা কোন দিকে থাকে। তার পর হাওয়া বুঝে আমরা অনাস্থার পথে হাঁটব।”
বিজেপি নেতারা আরও জানান, মুলায়ম দ্রুত ভোট চান। আজ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন, তখন বিজু জনতা দলের কিছু সাংসদ দাঁড়িয়ে তা সমর্থন করেন। গড়কড়ীর সঙ্গে শরদ পওয়ারের ভাল সম্পর্ক। তিনি এনসিপি প্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন। তাই ভাল করে গুছিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সম্ভাবনা যখন রয়েছে, তখন তড়িঘড়ি এনে কংগ্রেসের সুবিধা করে দেওয়া কি ঠিক?
এখন প্রশ্ন, মমতাকে স্বস্তিতে রাখতে বিজেপি কেন এত তৎপর হয়ে উঠেছে? বিজেপি সূত্রের মতে, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মমতা জেহাদ ঘোষণা করে শুধু সমর্থনই প্রত্যাহার করেননি, মনমোহন সরকারকে উৎখাত করতে অনাস্থা প্রস্তাবও আনছেন। প্রস্তাবের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যা না থাকলেও তিনি একার জোরেই এই পদক্ষেপ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে যাতে ভবিষ্যতে তাঁর পক্ষে এনডিএ-তে আসার পথ সুগম হয়, সে জন্য বিজেপিকে উদ্যোগী হতে হবে। বিজেপি যদি একার ক্ষমতায় দু’শোর কাছে আসন পায়, তা হলে মমতাও এনডিএ-তে সামিল হতে পারেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.